পাতা:পরাধীন প্রেম - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অনিল চলে যাচ্ছে, চন্দ্রনাথ ডেকে বলে, একটা কথা শোন । মনে হয়। ক্লািন্ধ চন্দ্রনাথ যেন হঠাৎ জড়িয়ে গেছে। অনিল ঘরে দাঁড়ায় । কাছে আসে না । চন্দ্রনাথ রীতিমত স্নেহের সরেই বলে, প্রমোদকে না পাঠিয়ে তমি একবার নিজে এলে না কেন বাবা ? আমার কত কাজ, কত দায়িত্ব, তোমার বিষয়টা ঠিক খেয়াল ছিল না । তুমি নিজের চেষ্টায় উন্নতি করেছ, তোমার কথাই আলাদা । তুমি একবারটি এলেই তো আমার এটা মনে পড়ত । এটা দিতে পারতাম না, অনা কি? জটিয়ে দিতাম। আর কি চাকরি নেই দেশে ? যাক গৈ, দঃখ করো না, মাঝে মাঝে বাড়ীতে এসো ! তোমার মত ছেলের চাকরির ভাবনা ? আমি কথা দিচ্ছি, ছ’মাসের মধ্যে এর চেয়ে ভাল চাকরি আমি করে দেব । কিছুদিন আগে হলে উম্য তাৎক্তব বনে যেত, কিন্ত চন্দ্রনাথকে সে চিনেছে । চাকরিটা পেয়ে আরও ভাল করে চিনেছে { মানষটার মান সত্যই দরাজ ! সত্যই তার দরূদ আছে আত্মবিশ্ববাসী অধ্যবসায়ী মানষের জন্য, নারীপরুিষ ও বয়স নিবিশেষে। কারো জন্য কম আর কারো জন্য বেশী হতে পারে মমতােটা, ব্যক্তি বিশেষ ও ক্ষেত্র বিশেষে একটু ভেজাল থাকতেও পারে, কিন্ত জিনিসটা যে খাটী তাতে সন্দেহ নেই । শাধ তার জন্যই চন্দ্রনাথ চাকরির ব্যবস্থা করেনি । আরও অনেক রকম ব্যবস্থা সে করে দিয়েছে । চন্দ্রনাথের মাখে। যেটুকু শহনেছে তাতেই প্রমোদের ব্যাপারটাও সে বঝতে পারে। ছেলেবেলার বন্ধ বলেই নয়, বার বাব সে যে প্রমোদের প্রার্থনা পহরণ করেন্থে তার কারণ বন্ধর কাছে অপমানিত হয়েও বার ঘার সে প্রার্থনা জানাতে গিয়েছে বলে । প্রমোদের এই ভিখারী-সলভ অধ্যবসায় চন্দ্রনাথকে কবি করেছে। উদারমন মাত্রেরই হয়তো এই দাবলতা থাকে । এটা হয়তো উদারতা দেখাবার ক্ষমতা থাকারই একটা অঙ্গ । অধ্যবসায়ের জাতগণের বিচার নেই চন্দ্রনাথের কাছে । কে শধ বাঁচার জন্য, ওঠবার জন্য প্রাণপণ করছে আর কার লড়াই কেবল খানিকটা আরাম বিলাসের জন্য, তাদের পার্থক্য সে বোঝে না। এমন নয় । কিন্ত প্ৰাণপাত করাটাই শেষ পর্যন্ত তার কাছে দাঁড়িয়ে যায় আসল হিসাবে । অনিল চুপ করে দাঁড়িয়েই আছে চন্দ্রনাথের মাখের দিকে চেয়ে । চলেও যায় না, কিছ বলেও না। এটা বঝতেও অবশ্য কারো এতটুকু কষ্ট হয় না যে নিজেকে সে সংযত করার চেষ্টা করেছে প্ৰাণপনে । উমা রীতিমত শঙ্কা বোধ করে । রাগ হবার কথাই আনিলের । প্রমোদ ছেলেবেলার বন্ধ হতে পারে চন্দ্রনাথের । মখের ওপর ভিখারী বলে তাকে যত খশি অপমান সে করতে পারে, সেটা তাদের নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়ার ব্যাপার। একেবারে অমানষে না হলে ছেলে কি নিজের বাপের নামে অন্যের মাখে যা তা শানে রাগ না করে পারে ? তব, সে চুপ করে চলে যাচ্ছিল। উমাকে কোন রকমো-বিব্রত করবে না কথা দিয়েছে।