পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (তৃতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভূমিকা এই পালাটিতে হিন্দু-মুসলমানের গৃহস্থালীর করুণ চিত্র আমাদের চক্ষুর সম্মুখে প্ৰতিফলিত হইতেছে। বাঙ্গালার কৃষক হিন্দুও নহে, মুসলমানও নহে ; যদি তাহাদিগকে কোনও সাধারণ আখ্যায় পরিচিত করিতে হয়, তবে আমরা বলিব তাহারা বাঙ্গালী । এই সকল পালা গানে আমরা পুনঃ পুনঃ দেখিতে পাই যে, হিন্দু কিংবা মুসলমান ধৰ্ম্ম সাম্প্রদায়িক গণ্ডীর মধ্যে আবদ্ধ থাকিয়া নায়ক ও নায়িকার চরিত্রে কিছুমাত্র সঙ্কীর্ণতা আনয়ন করে নাই । আয়না বিবির চরিত্রে আমরা মহুয়া, কমলা এবং দূর যুগের সীতা-সাবিত্রীর মহিমাই দেখিতে পাইতেছি । দ্বিতীয় খণ্ডে প্ৰকাশিত ধোপার পাটের কাঞ্চনমালার সঙ্গে আয়না বিবির চরিত্রের বিশেষ ঐক্য দৃষ্ট হয় । এই পালা গানে বাঙ্গলার পল্লী-চিত্ৰ আমাদের চক্ষে এরূপভাবে ফুটিয়া উঠিয়াছে যে, আমরা আধুনিক বঙ্গসাহিত্যের কোনও স্থানে তাহার সদৃশ চিত্ৰ পাই নাই । বারমাসীর বর্ণনা, পৌষের “আঁধা” (কুন্ধটিকা) এবং শরতের পক্ক শালিধান্য হইতে আরম্ভ করিয়া আষাঢ়িয়া নদীর বন্যা এবং ভাদ্র মাসের “চাঁদনি” ( জ্যোৎস্না) পৰ্য্যন্ত এই দেশের ঋতুভেদে যে বিচিত্ৰ প্ৰাকৃতিক সৌন্দৰ্য্য দেখিতে পাওয়া যায়, চাষার ভাষায় তাহা যেরূপ প্ৰকাশিত হইয়াছে কোনও আলোক-চিত্রে বোধ হয় তেমনটি হইতে পারিত না। এই বৰ্ণনাগুলির মধ্যে কবির মনোনয়নু এবং নির্বাচনী শক্তি নিপুণভাবে প্ৰদৰ্শিত হইয়াছে; প্রত্যেক ঋতুর ভিতরে যে অংশ বিশেষরূপে কবিত্বপূর্ণ এবং যাহাতে নায়ক-নায়িকাব মনের ভাব করুণ-রস-সংপৃক্ত হইয়া ফুটিয়াছে, কবি তাঁহারই বর্ণনা দিয়াছেন। যিনি শুধু ছবি তোলেন, তিনি সে সুযোগ কোথায় পাইবেন ? এই গল্পের প্রথম ভাগ পড়িয়া আমরা বিশেষ আশান্বিত হইতে পারি নাই, কিন্তু যেখান হইতে উজ্জ্বল সদাগর আয়না বিবিকে প্ৰথম দৰ্শন করিয়াছে এবং যখন তাহার মন বলিয়া উঠিল--