পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (তৃতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

फूमिका ' $ቅጏ যদিও কবি অশিষ্ট প্ৰেমপ্রসঙ্গের অবতারণা করিয়াছেন, তথাপি তিনি কোথাও রুচি ডিঙ্গাইয়া গৰ্হিত কোনও প্রসঙ্গ উপস্থিত করেন নাই। তঁহার ভাষায় সর্বদাই একটা সংযম পরিদৃষ্ট হইতেছে। বাংলাদেশের পল্লীর খুটিনাটি নানা কথায় পালাটি কৌতুকপ্ৰদ হইয়াছে। বাংলার বড় বড় নদী, ঝড়, তুফান, বাণিজ্য-তরীর উল্লেখ অনেক পালাগানেই আছে, এটিতেও ঐ সব বিষয়ের প্রাচুৰ্য্য দৃষ্ট হয় । মইফুলা দাসীর চরিত্রাঙ্কনে কবি বেশ কৃতিত্ব দেখাইয়াছেন । শেষদিকে এই দাসীর উন্মত্ত অবস্থার বর্ণনাটি বড়ই করুণ ও হৃদয়গ্ৰাহী হইয়াছে। আশুতোষবাবু মনে করেন, চট্টগ্রামের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের যে সব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপপুঞ্জের উল্লেখ ১১৬৫ খ্ৰীষ্টাব্দের দামোদর দেবের তাম্রশাসনে পাওয়া যায়, এই গীতিকাবণিত বসন্তপুর তাহদেরই অন্যতম। পালা-রচকেরা তাহদের নিজেদের বাসস্থানের প্ৰতি পক্ষপাতী হইয়া কাহিনীগুলির ঘটনাস্থল নিজেদের পল্লী হইতে অনতিদূরবর্তী কল্পনা করিয়া থাকেন। তাই বলিয়া আমরা এই ভৌগোলিক তত্ত্বকে কোনও ঐতিহাসিক ইঙ্গিত বলিয়া মনে করিতে পারি না । কমলসদাগরের কবি তাহার বর্ণনার মাঝে মাঝে যেন সরলতা ঢালিয়া দিয়াছেন। সোনাইয়ের প্রতি গোবৰ্দ্ধনের প্ৰেম কিরূপ ভাবে ধীরে ধীরে অঙ্কুরিত হইয়াছিল, তৎ প্রসঙ্গে মনস্তত্ত্বের বিশ্লেষণে কবি বেশ দক্ষতা দেখাইয়াছেন । মোটকথা, * গোবৰ্দ্ধন প্রথম হইতেই ঘোর পাষণ্ড ছিল না। কিন্তু দুষ্ট স্ত্রীলোকের কুহিকে কিরূপে সোণা পৰ্যন্ত পিতল হইয়া যায়, গোবৰ্দ্ধন তাহার একটি দৃষ্টান্ত । সে তাহার প্রভুর একান্ত অন্তরঙ্গ ও বিশ্বাসী কৰ্ম্মচারী ছিল। সোনাইয়ের নানারূপ বিলাস-লোলুপ চেষ্টায় সে ক্রমশঃ এরূপ কাণ্ডাকাণ্ড জ্ঞানশূন্য হইল যে অবশেষে সে তাহার প্রভুর শিশুদিগকেও হত্যা করিতে নানারূপ উপায় উন্তাবন করিয়াছিল। একদিকে সদাগর-পত্নীর প্রবল ইন্দ্ৰিয়লালসা বন্যার মত উদ্দাম স্রোতে ছুটয়াছিল, অপরদিকে গোবৰ্দ্ধানের ভীত ও শঙ্কিত পদে সতর্কতার সহিত একটু একটু করিয়া অগ্রসর হওয়া, এবং পরিশেষে তাহার চূড়ান্ত অধঃপতন এরূপ নিপুণভাবে অঙ্কিত হইয়াছে যে আমরা নিরক্ষর কৃষক কবির নিকট এতটা দক্ষতার প্রত্যাশা করি নাই ।