পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (তৃতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভূমিকা প্রায় তিন বৎসর অতীত হইল কিশোরগঞ্জ মহকুমার অধীন মাচুয়া গ্রামনিবাসী কৈলাশচন্দ্ৰ দে নামক এক ব্যক্তির নিকট চন্দ্ৰকুমার দে এই পালাটির প্রথম সন্ধান পান। কৈলাশচন্দ্ৰ দে এই পালাটির অতি অল্প কয়েকটি ছত্র জানিতেন, কিন্তু ঐ কয়েক ছত্রের মধ্যেই চন্দ্ৰকুমার বাবু বিশেষ কবিত্বের পরিচয় পান। অনেক দিন তিনি আর কিছু সংগ্ৰহ করিতে পারেন নাই, তারপব দুইটি গায়েনের সঙ্গে তঁহার সাক্ষাৎ হয় ; তাহাদের একজন কাঠগড় নিবাসী শচিনী সোম এবং দ্বিতীয়টি মমিনপুর নিবাসী আদেলা দাস। কিন্তু এই তিন গায়কের নিকট তিনি এই পালার যাহা কিছু পাইয়াছিলেন তাহা যথেষ্ট নহে। এমন কি পালার বিষয়টি কি তাহাও ঐ সংগ্ৰহ হইতে তিনি অনুধাবন করিতে পারেন নাই । কিন্তু উহার মাঝে মাঝে এমন সব পঙক্তি তিনি সংগ্ৰহ করিয়াছিলেন, যাহার পল্লীরসপুষ্ট সরস কবিত্ব ক্রমাগত তাহার কৌতুহলের উদ্রেক করিয়াছিল। ইহার পরে ১৩৩২ বাং সনে বৈশাখ মাসে নেত্রকোণার মালিনী আশ্রমে মনোমোহন সাধুর সঙ্গে তঁহার দেখা হয় । মনোমোহন সাধুর আদি নিবাস ছিল খালিয়াজুড়ি । ইনি চন্দ্ৰকুমার বাবুকে জানান যে, মৈমনসিংহের বিখ্যাত তীর্থ গুপ্তবৃন্দাবনে কমলদাস নামক একজন গায়ক আছেন, তাহার নিকট সন্ধান করিলে শ্যাম রায়ের সমস্ত পালাটি সংগ্ৰহ করার সম্ভাবনা আছে। চন্দ্ৰকুমার বাবু তখনই গুপ্ত-বৃন্দাবনে যাইয়া কমলদাস গায়কের সঙ্গে পরিচয় স্থাপন করেন। এই গায়কের অসাধারণ স্মৃতি পল্লীগাথার রত্নাগারবিশেষ। তিনি অনর্গল এত কবিতা মুখস্থ বলিয়া যাইতে লাগিলেন যে, চন্দ্ৰকুমার বাবুর বিস্ময় ক্রমশঃ বাড়িয়া যাইতে লাগিল। এই পল্লীগায়কের একমাত্র সঙ্গী একটি একতারা ; সেই একতারার সুর তাহার নিজের কণ্ঠস্বরের সঙ্গে এমনি সঙ্গত করিয়া বাজিতে লাগিল যে, চন্দ্ৰকুমার বাবুর মনে হইল যেন ভ্রমর