পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (তৃতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

V908 পূর্ববঙ্গ গীতিকা খুল্লতাত তেঁাহাকে প্ৰাণসম ভালবাসেন, তিনি কিছুতেই তাহার উপর রাগ করিবেন না। সুতরাং চীনা কাগজের উপর লেখা নিমন্ত্রণ-চিঠি লইয়া রাম ভাণ্ডারীকে চৌধুরী-বাড়ীতে যাইতে হইল। রাম ভাণ্ডারী প্রথমতঃ ভয়ে কবুল হয় নাই। কিন্তু রাজচন্দ্রের তাড়া খাইয়া অবশেষে যাইতে বাধ্য হইল। রাম ভাণ্ডারী রাজেন্দ্রনারায়ণের দরবারে উপস্থিত হইয়া দূর হইতে উহ। তাহার দিকে নিক্ষেপ করিয়া উৰ্দ্ধশ্বাসে পলাইয়া গেল। খুল্ল তাত এই ব্যাপারে বিস্মিত হইয়া চিঠিখানি খুলিলেন, এবং তঁহার ভ্রাতুষ্পপুত্রের কাণ্ড দেখিয়া দুই হাতে মাথা চাপড়াইতে চাপড়াইতে কঁাদিতে লাগিলেন, “হায় রাজচন্দ্ৰ আমার সর্বনাশ করিয়াছে ! সে অস্পৃশ্য নরের বাড়ীতে নিজে খাইয়াছে এবং আমাকে খাইতে নিমন্ত্রণ করিয়াছে । আমার যা কিছু ইজজৎ ও সম্মান ছিল সমস্ত গেল, আমার সর্বনাশ হইল।” নিকটে সেনাপতি চাঁদ ভাণ্ডারী ছিল। সে বলিল, “কোন চিন্তা নাই, আমি নরদের গোটা কয়েক মাথা আনিয়া এখনই আপনার পায়ে উপহার দিতেছি।” রাজেন্দ্রনারায়ণ চাদ ভাণ্ডারীকে বিলক্ষণ চিনিতেন । অত বড় যোদ্ধা ও শক্তিমান পুরুষ তখন বঙ্গদেশে ছিল না। তিনি সাশ্রনেত্ৰে বলিলেন, “বাপু আর যাহা করি, আমার রাজচন্দ্রের গায়ে যেন কঁাটার অ্যাচড় না লাগে।” যোদ্ধ বেশে অতি দ্রুত ক্ৰোধকম্পিত গতিতে চাঁদ ভাণ্ডারী ছুটয়াছে; তাঙ্গার গতির বেগ সহ করিতে না পারিয়া একটা প্ৰকাণ্ড শ্বেত অশ্ব পথে পড়িয়া মরিয়া গেল। তখন চাদ পদব্রজে চলিল। সে তাহার যোদ্ধ, বেশ ত্যাগ করিয়া বৈষ্ণব সাজিয়া নরদের বাড়ীতে উপস্থিত হইল, যাইয়া দেখিল নরদের বাড়ীতে যেন মহোৎসব। প্ৰকাণ্ড তোরণ উঠিয়াছে; নহবতে নরদের স্তুতিগান গীত হইতেছে ; হাজার হাজার কুলী লইয়া কুলীর সর্দার রামা মগ প্ৰকাণ্ড দীঘিকা খনন করিতেছে। গোলাপ নর, আত্মা নর প্রভৃতির রাজবেশ। প্ৰভু-পরিবারের অজস্র অর্থ এই অস্পৃশ্য জাতির গৃহে জলবৎ ব্যয়িত হইয়া যাইতেছে দেখিয়া রাগে তাহার সর্বশরীর জ্বলিতে লাগিল। সে খুল্লতাতের নিকট হইতে চিঠি লইয়া গিয়াছিল ; চিঠিখানি রাজচন্দ্ৰকে প্রদান করিল। চিঠিতে লেখা ছিল “তুমি এত বড় দীঘি কাটাইয়াছ বড়ই সুখের কথা, এমন আনন্দোৎসবে আমি কেন,