পাতা:প্রবাসী (অষ্টবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আপন-পর । இ. শচীশ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় 敬 নদী ভাঙা—নদীর ভাঙন—সকলের মুখে এক কথা, নদী ভাঙিতেছে । চারিদিকে হাহাকার পড়িয়া গেছে। সম্মুখে বর্ষার বিশাল নদী—স্কুধাৰ্ত্ত রাক্ষসের মত জিহব। মেলিয়া ছুটিয়াছে, গৰ্জ্জিয় গৰ্জ্জিয়া ফুলিয়া ফুলিয়া তীরে জলের ভীষণ প্লাবন । বৃহৎ মাটির চাপ সশধে ধসিয়া পড়িতেছে, তারপর ঘূর্ণর পাক আর বুদ্বুদ। ভিটা গাছ মাঠ—গিয়াছে, যাইতেছে। তীরে দাড়াইয়া প্রকাশ নদীর এই নিষ্ঠুর খেলা দেখিতেছিল। ঘোলা জলের পরপারে নদীর চড়ায় পাট গাছের সবুজ শোভা—এপারে প্রলয়ের রুদ্র মূৰ্ত্তি। নিকটে একটি গৃহস্থ বাড়ী-বাগান উঠান ভাঙ্গিয়া টিনের ঘরখানি ধর ধর হইয়াছে। কয়েকজন লোক চালে উঠিয়া টিনগুলি খুলিয়া আনিবার যথাসাধ্য চেষ্টা করিতেছিল। চারিদিকে ছেলে বুড়া আর মেয়ের দল ভিড় করিয়া আছে। প্রতিমুহূর্তে বিপদের আশঙ্কা করিয়া তাহারা চালের উপরকার লোকদের নামিয়া আসিবার জন্ত বারবার ডাকিতেছিল। --কে রে, আফি ? —ছ্যালাম কৰ্ত্তা, এক ব্যক্তি প্রকাশের পাশে আসিয়া দাড়াইল । নগ্ন দেহ-ধূলা কাণা মাথান। বোধ করি কাছাকাছি কোন ক্ষেতে কাজ করিতে করিতে উঠিয় আসিয়াছে। —তোদের হাল কি রে? ভাঙা বাড়ী আঙ্গুল দিয়া দেখাইয়া লোকটি বলিল,— দ্যাখছেনইত কৰ্ত্ত। যেমন ভাঙন লেগেচে, মেয়াদ বেশী দিন নেই। পাত্তারী গুটোতে হ’ল । —কি ঠিক করূলি ? কোথার যাবি ? জাফি জবাব দিল--চাষা-ভূষা মানুষ কওঁ। কি আর ঠিক করব ? নসিবে যা লেখা আছে তাই হবে। একটু হাসিবার চেষ্টা করিয়া প্রকাশ কহিল,—নসিবের উপর বরাত দিয়ে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকলে কি চলে, আফি ? গম্ভীরভাবে আফি বলিল,—আল্লা কুকুরটিরও খোরাক যোগান, পাখাটিরও আস্তানার ব্যবস্থা করেন। তিনি কি আমাদেরই কিছু করবেন না, এ-ও কি হয় কৰ্ত্ত ? ঈশ্বরের উপর লোকটির কি অগাধ বিশ্বাস ! প্রকাশ বিম্মিত হইল। ইহার মত সেও যদি সকল ভাবনা-চিন্ত৷ বিশ্বাসের উপর চাপাইয়। নিশ্চিন্তু হইয়া বসিতে পারিত ! সে ভাবিয়া দেখিল, তাহার বিশ্বাস নাই—অথচ অবিশ্বাসই কি সে স্বীকার করিয়া লইয়াছে ? একবার মনে হইল, সংসার যায়—যাকৃ ন! ! তাহাতে কাহার কি ? দুনিয়ার মালিক যিনি তাহার দরদ কি কাহারো অপেক্ষা কম ? কিন্তু যখন যুক্তি-তর্ক ঝুড়ি ঝুড়ি শিক্ষা ও অভিজ্ঞতার বোঝা আনিয়া হাজির করিল, তখন সে আর এই নিরক্ষর মুসলমানের সহজ বিশ্বাস গ্রহণ করিতে পারিল না । বেলা তখন শেষ হইয়া আসিতেছিল। পাতল৷ মেঘের জাল ছিড়িয়া সন্ধ্যার কতটুকু সোনালী আভা বিস্তুত জলরাশির উপর একথও রক্তাম্বর বিছাইয়া দিয়াছিল এবং সেই আলোই তীরে পতনোন্মুখ কয়েকটা গাছের উপর পড়িয়া নির্দয় অস্বাভাবিক অথচ মনোরম একটু হাসি যেন জন্মের শোধ হাসিয়া লইতেছিল। গৃহস্থের চালের টিনগুলি নামান হইয়া গিয়াছে। টিন লইয়া জিনিষপত্র সরাইয় তাহারা বাড়ী ছাড়িয়া চলিল। সেই ভাঙা বাড়ীর উপর দিয়া মাঝিরা সারি সারি কাধের উপর গুণের দড়ি ফেলিয়া ঝুঁকির ঝুঁকিয়া হেলিয়া হেলিয়া চলিয়া গেল। পিছনে লম্বা ধাচের একখানি নৌকা কল কল করিয়া জল কাটিতে কাটিতে অগ্রসর হইতেছিল। সন্ধ্যা ঘন হইয়া ক্রমে রাত্রির কৃষ্ণসাগরে ডুবিয়া গেল। নীচে আড়কাঠির বাতি, আকাশে তারাগুলি একে একে