পাতা:প্রবাসী (অষ্টবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা] মুলে দে, কিন্তু সুবীরও কি তাহাকে ইহার চেয়ে অধিকতর অসহনীয় রিক্ততার মধ্যে ফেলে নাই ? এতদিন তাহার ধনসম্পদ ছিল না, কিন্তু আনন্দের অভাব ছিল না । আজ পার্থিব ধনে সে ধনী, কিন্তু আনন্দেয় সম্পদ কোথায় হারাষ্ট্রা গেল ? অনেক ভাবিয়া সুবীর জিজ্ঞাসা করিল, ”ফাষ্ট ক্লাশে বার্থ ঠিক করব কি ? তাহলে পরের মেলেই যাওয় যেতে পারে ।” কৃষ্ণ বলিল, “না, না, অ’ত সাহেব মেমের সঙ্গে আমার সুবিধা হ'বে না। আমি সেকেণ্ড ক্লাশেই বেশ যেতে পারব। না হয় দুদিন দেরী হ’বে।” মুবীর বলিল, “আচ্ছ, তাঙ্গ’লে সেই চেষ্টাই করি।” এবার উঠিয়া পড়া ছাড়া অভ্যার উপায় নাই, তাহা সে বুঝিতেই পারিল। কিন্তু গৃহিণীর কল্যাণে তাহার আরো আধ ঘণ্টা খানেক থাকিবরি সুযোগ মিলিয় গেল । তড়িৎ বাহির হইতে ডাকিয়া বলিল, “কৃষ্ণাদি, শুনে যান ।” ক্লঞ্চ বাহির হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, “কি তড়িৎ ?” তড়িৎ বলিল, “ম বললেন, যে-ভদ্রলোক এসেছেন, তাকে চ খেয়ে যেতে।” স্থবীর কথাটা বেশ শুনিতেই পাইল। কৃষ্ণা ফিরিয়া আদিয়া বলিল, “এত সকালে আপনার চা খাওয়া হয়নি নিশ্চয়ই ?” সুবীর অন্ত স্থানে অমান বদনে মিথ্যা কথা বলিত । এখানে কিন্তু সে নিতান্ত সুশীল ও সুবোধ বালকের মত স্বীকার করিয়া লইল, যে, তাহার চা খাওয়া হয় নাই বটে। 39 কৃষ্ণ বলিল, “এইখানেই খেয়ে যান। সুবীর বলিল, “আচ্ছ।” গৃহিণীর চা খাওয়ানোটা অন্ত মানুষের চা খাওয়ানো অপেক্ষ কিছু ভিন্ন রকমের ব্যাপার ছিল। দেখিতে দেখিতে লুচী, তরকারি, মিষ্টার, হরেক রকমের আসিয়া উপস্থিত হইল। অমিয়া প্রতিভার কৃষ্ণার কাছে চী দিবার হাল ফ্যাশানটা শিখিয়া লইয়াছিল, কাজেই পেয়ালায় চা বানাইয়া আর চাকরে লইয়া আসিল না। 6 سم 8 ه ج etهنئ দামী টী-লেটুএর অভাব ছিল না। জয়পুরী পিতলের ট্রেতে করিয়া, চা, দুধ, চিনি, চায়ের পেয়াল সব আসিল । সুধীর ব্যাপার দেখিয়া বলিল, “এর নাম চা খাওয়া নাকি ?” । কৃষ্ণার মুপে এতক্ষণ পরে একটু ক্ষীণ হালির রেখা দেখা দিল। সে বলিল, “এ বাড়ীতে এরি নাম চা খাওয়া। বাড়ীর গিরি যিনি, তিনি কম খাওয়া জিনিষটার উপর হাড়ে চট। ভূলিয়ে ফুস্গিয়ে কাউকে বেশী থাইয়ে দিতে পারলে, তিনি সবচেয়ে খুসি হন।” সুবীর বলিল, “বাঙালীর মেয়ের স্বভাব দেখছি সব জায়গায়ই এক রকম। আপনার একটি মাসীমাকে দেখবেন কলকাতায়, অবিকল এই রকম। মাও অনেকটা এই রকমই, তবে অসুস্থ ব'লে, এ নিয়ে বেশী জেদাজিদি করতে পারেন না।” কৃষ্ণ নিজের মা মাসীর কাহিনী মন দিয়াই শুনিতেছিল। যাহাদের মানুষ জন্মক্ষপ হইতেই চেনে, সে তাঁহাদের চিনিতেছে পূর্ণ যৌবনে। অদৃষ্ট্রের পরিহাস । চাকর জিজ্ঞাসা করিল, “ম জিগ্‌গেস করছেন, ফল কিছু পাঠিয়ে দেবেন ?” - সুবীর অণৎকাইয়া উঠিয়া বলিল, “এর উপর আবার ফল ? তা হলেই হ’য়েছে।” কৃষ্ণ' বলিল, “আচ্ছা, ফল না হয় থাক, কিন্তু আপনি যে কিছুই খাচ্ছেন না ?” সুবীর অগত্যা খাইতে আরম্ভ করিল। তাহার ইচ্ছা করিতেছিল কৃষ্ণাকেও থাইতে বলিতে, কিন্তু সে কি মনে করিবে ভাবিয়া তাহা আর বলিল না। চা ঢালিবার সময় তাহার সুন্দর হাতের ভঙ্গীর দিকে সে মুগ্ধ দৃষ্টিতে চাহিয়া রহিল ; ইহাকে যে জীবনের লক্ষ্মী গৃহের দীপ্তি রূপে পাইবে, কে না জানি সেই ভাগ্যবান পুরুষ। কিন্তু সুবীর যেমন করিয়া ভালবাসিতে পারিতেছে, তাহা আর কেহ কি পরিবে ? - খাওয়া শেষ হইলে সুবীর উঠিয়া বলিল, “আচ্ছা, আমি একবার ষ্টীমারের বার্থের খোজ ক’রে আসি। পেলেই আপনাকে জানাব।" - কৃষ্ণ তাহার সঙ্গে সঙ্গে আসিয়া তাহাকে বিদায় দিয়া