পাতা:প্রবাসী (অষ্টবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা] উনি আমাদের দেওয়ানজী। তার পাশে যে ছোকুর, ওটি আপনার মাসীমার ছেলে মুশীল। বাকি লোক-জন বাইরে আছে বোধ হয়।” কৃষ্ণার মুখটা বিষঃ হইয়া উঠিল। আজ এসব ঘট করিবার কিইবা আবশ্বক ছিল ? এই উৎসব-কোলাহল কি মুবীরের প্রাণে শেলের মত বিধিবে না ? কিন্তু ইহাতে আপত্তি সে কি প্রকারে প্রকাশ করিবে ? হয়ত এ সব তাহার মায়ের আদেশেই হইতেছে। জাহাজের সিড়ি পড়িধামাত্র, ডেকের যাত্রীরা মরিয়া চইয়া দৌড়িল। স্থবীর বলল, “মিনিট পাচ ওয়েট করুন, তা না হ’লে কোন হিন্দুস্থানীর পোটলার তলে চাপা পড়বেন, তার ঠিকানা নেই।” ভৗড়ের জমাট ভাব একটু কমিবার পর সুবীর কৃষ্ণাকে নামাইয়া দিল ; বলিল,*আপনাকে নিজেই একটু কষ্ট ক’রে ঐ কাঠগড়াটি পার হ’য়ে যেতে হবে । আমি লগেজগুলোর ব্যবস্থা না ক’রে যেতে পারছি না ।” - কৃষ্ণ! ডিবার্কেগুনের কাগজ লইয়া নিৰ্ব্বিঘ্নে কাঠগড়া পার হইল। দেওয়ানজী নিজের লোকুলস্কর লইয়। আসিয়া পড়িলেন ; কৃষ্ণার সামনে আদিয়া বলিলেন, “ম লক্ষ্মী, আপনি আমায় চিনবেন না, আমি আপনাদের এষ্টেটে কাজ ক’রেই চুল পাকিয়েছি। পোকাবাবুর কাছে আমার কথা শুনে থাকৃবেন।” কৃষ্ণ র্তাহাকে প্রণাম করিতে অবনত হইতেই বৃদ্ধ ভুদ্রলোক একেবারে ইঁ। ই করিয়া উঠিলেন । তাহার পর সুশীল আসিয়া লজ্জিত ভাবে তাহাঁকে একটা প্ৰণাম করিল, লোকজন সব তাহার চারিপাশে সার দিয়া দাড়াইল । চারিদিকে নমস্কার আর সেলামের চোটে কৃষ্ণ একেবারে ব্যতিবস্ত হইয়া উঠিল । জাহাজঘাটের লোকজন একেবারে হা করিয়া তাকাইয়া রহিল । এ আবার কোথা হইতে কে আসিল ? এত আসাসোটাধারী বরকন্মাজের আবির্ভাব উটুরাম ঘাটে সচরাচর হয় না । সুশীল বলিল, “দেওয়ানজি, বেরিয়ে গিয়ে দিদিকে গাড়ীতে বসালে হ’ত না ? কতক্ষণ এই ভীড়ের মধ্যে দাড়িয়ে থাকবেন ?” পরভৃতিক bుని কৃষ্ণ হ:ফ ছাড়িয়া বাচিল। এই ভীড়ের ভিতর চাপরাশ-আঁট অনুচরে পরিবেষ্টিত হইয়া সঙের মত দাড়াইয়া থাকিতে সত্যই তাহার কষ্ট হইতেছিল। সুবীরের তখনও দেখা নাই, কাজেই সে-সকলের সঙ্গে বাহিরে অসিয়া দাড়াইল। প্রকাও একখানা মোটরকার, আগাগোড়া ফুলের মালায় সজ্জিত হইয়া তাহার জন্ত অপেক্ষা করিতেছিল ! তাহার দরজা খুলিয়া দেওয়ানজী বলিলেন, “এইটাতে উঠুন আপনি ।” কৃষ্ণ গাড়ীতে বসিয়া জনস্রোতের দিকে তাকাহয়৷ রহিল । সুবীরকে এখনও দেখা যায় না। এই এতগুলো লোকের মধ্যে সেই একমাত্র তাহার পরিচিত। এ যেন তাহার এক জীবনের মধ্যেই পুনর্জন্মলাভ হইল। অদৃষ্টে আরো কি আছে কে জানে ? মনের ভিতরটা তাহার ক্রমেই যেন আঁধার হইয়া উঠিতেছিল । হঠাৎ সুশীল বলিয়া উঠিল, “বাক, এতক্ষণ পরে দাদার দেখা পাওয়া গেল।” এবং মিনিট দুই তিন পরেই একদল কুলির সঙ্গে সুবীর আসিয়া উপস্থিত হইল। কৃষ্ণাকে বলিল, “একলা বসে বসে ছাপিয়ে উঠেছেন, না ? আচ্ছ, আর দেরি হবে না । জ্যাঠামশায়, আপনি একে নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন, আমরা জিনিষপত্র নিয়ে পিছনে আছি ।” কৃষ্ণ হঠাৎ গাড়ী হইতে ঝু কিয়া পড়িয়া বলিল, “আপনি এই গাড়ীতে আমুন, জিনিষ ওঁরা আনবেন না झ्म्न !” সুধীর গাড়ীর পাশেই দাড়াইয়াছিল। কৃঞ্চার কণ্ঠ, স্বরে সে বিস্মিত হইয় তাহার দিকে চাহিয়া দেখিল । কি সে তাহার মুখে দেখিল, সে-ই জানে। কিন্তু তাহার চোখের দৃষ্টি বেদনায় গভীর হইয়া উঠিল। নিজেকে তৎক্ষণাৎ সামূলাইয়া লইয়া বলিল, “আচ্ছ, জ্যাঠামশায়, আপনারা তা হ’লে জিনিষগুলো নিয়ে আসুন ।” দরজা খুলিয়া সে ভিতরে ঢুকিয়া কৃষ্ণার সামনে বসিয়া পড়িল। গাড়ী ও তৎক্ষণাৎ ছাড়িয়া দিল। কৃষ্ণার মুখের দিকে চাহিয়া মুবীর জিজ্ঞাসা করিল,