পাতা:প্রবাসী (একত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষ আরতি ঐনিৰ্ম্মলচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রদীপ হয়েছে জলি ! বুঝেছি এষার এসেছে আমার শেষ আরতির পাল । দূরে দূরে যত শিমূল-পলাশ-পান-শালের বনে অঞ্জলি ভরি রাশি-রাশি ফুল ঝরাল কে আনমনে । ফাগুন-শেষের বিরহবিধুর মধুপূর্ণিমা রাতি, বকুলের শাখে পাপিয়া কাদিছে খুজিয়া আপন সাথী। জ্যোৎস্নানিশীথে এক বলে গাধি ঝরাকুইমের মালা জানি দেবী, আজি মধুর লগনে হ’ল বিদায়ের পালা । জীর্ণকেশর ষে ফুলের সাথী হয়েছে পথের ধূলি গোপনে যতনে অঞ্চল ভরি’ নিলেম তাদের তুলি’ ৷ মালা হয়ে যবে দুলিবে তাহারা বক্ষে তোমার, জানি, মানসৌরণ্ডে কহিবে নীরবে মোর মর্শ্বের বাণী । আজও মনে পড়ে সেদিনের ভোর, তরুনীধিকার ছায়ে, ললাটের পরে কুন্তল তব চঞ্চল মৃদুবায়ে । সচকিত দুটি ভীরু নয়নের চেয়ে দেথা ফিরে ফিরে, জাগিয়া রয়েছে আজও অমলিন মোর স্মরণের তীরে। ধরণীর দ্বারে অতিথি তখন কি ঋতু, নাহিক মনে, প্রথম জাগিল ফান্ধন মম হৃদয়ের ফুলবনে । তারপরে গেছে কত না সন্ধ্যা গোপন কথার মত, রঙীন প্রভাত, নিশীথ নিবিড়, গোধূলি লগন কত । শরৎ গিয়েছে শেফালির বনে আপনার লিপি রেখে বরষা রেখেছে কেতকীর বুকে গোপন বাণীটি ঢেকে। আরও কত ঋতু ধরণীর বুকে জানূমনে গেল খেলি দেখেছি দুজনে বসি কাছাকাছি, তৃষিত নয়ন মেলি । শত কল্পনা কুস্বম-সমান বক্ষে উঠেছে ফুটি, আজি রজনীতে সকলি তাহার নীরবে পড়িল টুটি । অাখিপল্লব সিক্ত করার অবসর কোথা তব ? মোর দু-নয়নে অশ্রজলের অঞ্জন অভিনব ! তোমার ও দুটি উজল নয়নে অশ্রুর নাহি দেখা, · সঙ্গী আমার চক্ষের জল, আমি যে রহিমু এক ! কাহারও হিয়ার পাত্র ভরিছে নিত্যনূতন রসে, কারে সম্বল কেবলি বেদন, তাই লয়ে থাকি বসে । চরণের তালে ফুল ফোটে যার, কি কুস্কম দিব তারে, তবু ওগো রাণী, বাধিস্থ তোমায় ঝরা পুষ্পের হারে । যে-হৃদয় আজি পথে যায় ঝরে, তার পূজা ঝরা ফুলে নিশি পোহাইলে ন হয় তাহারে ছিড়িও মনের ভুলে । আনন তোমার পূর্ণচন্দ্র স্বপনে দিয়েছে ঢাকি, মাটির দীপের স্নান আলো, বল, দিব কি সেথায় জাকি ? তোমারি নয়ন দীপ্তি দানিবে তাহারে, জানি তা মনে, অস্তরে মোর আলো-উৎসব জাগাইবে শুভখনে । ক্ষণকাল ওরে দৃষ্টি তোমার রেখে মোর দু-নয়নে, পূৰ্ণিমা-নিশ সার্থক হবে ধান্ধন-ফুলবনে । চন্দন নাহি, রিক্ত পূজারী অাকিয়া কি দিবে ভালে, শেযটুম্বন ললাটে অকিছু আজি বিধায়ের কালে । শতচুম্বনে মুছে যাবে ? যাঙ্ক, মুছিও না হয় নিজে ; তুমি বুঝিবে না স্মৃতি কি মধুর, মূল্য তাহার কি ধে ! তারপরে কবে, বহুদিন পরে, আর কোনো ফুলবনে শেষ-আরতির ক্ষীণ ছবিটুকু পড়িবে কি কভু মনে ? ঝরাপলাশের আলপনা-জাক বনভূমিপানে চেয়ে, বক্ষে সেদিন বেদনার স্বরে কিছু কি উঠিবে গেয়ে ? সেদিনের সেই কাননশাখার কোনো নামহীন পার্থী স্বপনের মাঝে আজিকার স্বরে সহসা উঠিবে ডাকি ? জানি, ওগো রাণী,তুমি ভুলে যাবে শেষ আরতির পাল, ভাঙা দেউলের দুয়ারে হেথায় প্রদীপ নিত্য জালা !