পাতা:প্রবাসী (একত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఆస్రిఫ్చి স্থতার বন্ধনীর ভিতর হইতে স্নেহকম্পিত হস্তে বইখানি বাহির করিয়া লইলাম। মলাট উন্টাইতে প্রথমেই ইংরেজীতে লেখা—“মিস্ সবিতা দেবী, সেকেও ক্লাস, করোনেশন গারলস স্কুল।’ প্রথমটা একটু হাসি পাইল।--জল্পকে আশ্রয় করিয়াই খ্ৰীজাতির কি দন্ত। সামান্ত সেকেণ্ড ক্লাসে পড়ে সেটুকু নভেলে পৰ্য্যন্ত লিখিয়া রাখিয়াছে, দেখ তো !-- কিন্তু আসল কথা—কে এই সবিতা দেবী ? কিরূপেই বা ইহার কমলকরচ্যুত হইয়া তাহার বড় সাধের এই পুস্তক রত্নখানি লীড়ন্ত্ৰষ্ট শাবকের মত এখানে আসিয়া পড়িয়াছে ? তাহার ব্যথিত নয়ন দুটি কল্পনা করিয়া আমার মনটাও সহানুভূতির বেদনায় ভরিয়া উঠিল। যদি আবার বেচারী তাহার হারানিধি ফিরিয়া পায় ত তাহার বিষাদমলিন মুখখানি কেমন-ন প্রদীপ্ত হইয়৷ উঠিবে ! কি মধুর না সেই কৃতজ্ঞতাপূর্ণ দৃষ্টি ! আবার সে দৃষ্টিতে আরও না কত অমিয় বর্ষিত হইবে যখন শুনিবে পুস্তকখানি উদ্ধার করিয়া আনিয়াছে স্বয়ং লেখকই, আবার যখন--- “কি বাৰু, দেখা শেষ হ’ল ? দেখি কোন বইখান ? আমার উত্তরের অপেক্ষা না করিয়া দোকানীট হস্ত হইতে বইখানা একরকম কাড়িয়াই লইল । নাড়িয়াচাড়িয়া ভিতরের কয়েকখানা পাতা উল্টাইয়া আবার আমায় ফেরত দিয়া গম্ভীরভাবে বলিল—“দেড় টাকা ।” একেবারে থ হইয়া গেলাম, বলিলাম—“সে কি গো, এর নতুনের দাম যে এক টাকা মাত্ৰ ! এই ত স্পষ্ট লেখা রয়েছে”—বলিয়া দামের নীচে বুড়া আঙুলের নখটা টিপিয় তাহার চোখের সামনে ধরিলাম। লোকটা তাহার দক্ষিণ চক্ষুর তলদেশটা বাম হাতের তর্জনীর দ্বারা টানিয়া বলিল, “আমারও সোখ মাসে, মশায়, এই স্থাখেন। বলি কেতাবটা একবারটি উণ্টিয়ে স্থাখেন— আগাগোড়া লোট লেখা। স্রেফ সকূ-সকেটি হ’লেই কেতাবের দাম হয় না।” উণ্টাইধা দেখিলাম সত্যই পাচ-ছয় পাতা অস্তৃর খুব খুদে খুদে অক্ষরে পাতার পাশের জমির ওপর কি সব লেখা। দু-একটা পড়িয়া দেখিলাম—বড় কৌতুহল হইল— প্রবাসী ফাঙ্কন, ১৩৩৮ [७s* ७iर्ण, २ग्न थ७ ভারী মজা ত --দোকানীকে বলিলাম, “ষ্ঠা, নোট ত ভারী, দু-এক অক্ষর কি আগড়ম-বাগড়ম লিখেছে বটে, খালি নষ্ট করেচে বইটাকে । নাও, বল কত নেবে।” লোকটা আন্তে আস্তে বইখানি আমার হস্ত হইতে লইয়া যথাস্থানে খুব যত্বের সহিত বাড়িয়া ঝুড়িয়া রাখিয়া দিল, বলিল, “জানি বাবু আপনি লেবার মানুষ লন্‌ ; তা সারা আমার বেসাও ভাল দেখায় না। একটি বঙ্গল্পোক পসন করে গেসেন—স্রেফ কাপড়-চোপড়ের বঙ্গল্পোক লয়, কথার বদল্লোক। আনা দুই পয়সা কমতি হয়েসিলো সেইডা আনতি গেলেন। তবে লেহাং আপনি বলেন, কি করি খাতিরে পড়ে গেলাম–কিন্তু ওর কমি হবে না।” অন্ত সময় কথাটা বিশ্বাস করিতাম কি না জানি না ; কিন্তু সে-সময় নিজের সেই গ্রন্থের সামনে দাড়াইয়া, সেই অপরিচিত সবিতা দেবীর নামের মোহে মোটেই সন্দেহ করিবার জো ছিল না যে আমার সেই পুস্তকখানিকে লইয়া বাজারে কাড়াকড়ি জেদাজেদি পড়িয়া গিয়াছে। ইংলিশম্যান’এর জয়পত্র ; খুড়শ্বশুরের সেই ঢালা প্রশংসা সমস্তই আসিয়া আমার আত্মপ্রসাদের সহায়ক হইল। লোকটাও এমন নির্লিপ্তভাবে আপনার আসনখানিতে গিয়া বসিল যে, তাহার কথার প্রত্যেকটি অক্ষরে সত্যের দৃঢ়তা ফুটিয়া উঠিল। কেবলই মনে হইতে লাগিল—ওই বুঝি সেই দুই আনা কমের ভদ্রলোকটি আসিয়া পড়িল। আরও যাহারা আশেপাশে পুস্তক পরীক্ষা করিতেছিল তাহারাও যেন আড়ে মাড়ে আমার পুস্তকখানিরই প্রতি লোলুপ দৃষ্টি হানিতেছে—এইরূপ সন্দেহ হইতে লাগিল। অনেক বলিয়া-কহিয়া দুই আনা কম করিয়া বইখানি কিনিয়া লইলাম। লোকটা পয়সা গুণিতে গুণিতে অমুযোগের অল্পনাসিক স্বরে বলিতে লাগিল—“বদরোকের কাসে কথার খেলাফ হুতি হ’লো। কি আর করবে, বলতি হবে—কোনো জোসসোরে হাতসাফাই করেসে । আপনি ত বন্ধজোক—খাতিরে-পড়ে গেলাম---” এইরূপে, শুধু খাতিরের জোরে বইখানি লইয় একখানি মোটরবাসে গিয়া উঠিলাম। পড়িবার প্রচণ্ড ইচ্ছা থাকিলেও উপায় ছিল না। রেস ডে, গাড়ীতে অত্যন্ত