পাতা:প্রবাসী (একত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা ] আসবাবগুলি সাহেব তখনই নীলাম করিতে বিদায় করিা দিতেছিলেন, জ্ঞানদা ছোট্টর মুখে খবর পাইয়া, কিছু সন্ত দরেই সেগুলি কিনিয়া ফেলেন। সাহেব তাহাদের প্রতিবেশী ছিলেন, তিনিও অবিলম্বে ভারতবর্ষ ত্যাগ করেন। জ্ঞানদা বলিতেন, মেয়ের বিবাহে আসবাব ত দিতেই হইবে, তখন এগুলি পালিশ করাইয়া আচ্ছাদন বদলাইয়া দিলেই চলিবে। সে চমৎকার হইবে, জিনিষগুলি এত স্বন্দর, যে, কেহ খুৎ ধরিতে পারিবে না । যামিনী বইগুলি মিহিরের ভয়ে সৰ্ব্বদা আলমারিতে বন্ধ করিয়া রাথিত। একবার ভ্রাতার হাতে পড়িলে সেগুলির যা দুৰ্গতি হুইত, দেখিয়া যামিনীর চোখে জল আসিয়া পড়িত। দিদির ছিচৰ্কাছনে স্বভাব মিহিরের একটা ঠাট্টার জিনিষ ছিল। সে নিজে মার খাইয়া হাড় ভাঙিয়া গেলেও কাদিত না, কিন্তু দিদিকে উচু গলায় একটা কথা বল দেখি ? তখনি নাক লাল হইয়া উঠিবে, ফ্যাচ ফ্যাচ করিয়া কাল্লা স্বরু হইয়া যাইবে । মেয়েরা না কি আবার ছেলেদের সমান হইতে পারে ? আজ মিহিরের কপালক্রমে একখানা বই দিদি টেবিলের উপর ফেলিয়া গিয়াছিল । তাহার সব বইয়েই মলাই লাগান, পাছে স্বদ্বগু বাধানোর চাকচিক্য কমিয়া যায়। মিহির প্রথমেই একটান দিয়া কাগজের মলাটটা খুলিয়া ফেলিল। বইখানি শালেট ব্রটি লিখিত,“জেন স্থ্যা"র সচিত্র সংস্করণ। গল্প পড়িবার চেষ্টা করিয়া মিহির দেখিল অল্প অল্প বোঝা যায় বটে, তবে মেয়েস্কুলের বর্ণনা পড়িতে তাহার বেশীক্ষণ ভাল লাগিল না। উণ্টাইয়া, পাটাইয়া ছবি দেখিতে লাগিল। কিন্তু ইহাও তাহার পছন্দমত হইল না, তখন পকেট হইতে একটা পেন্সিল বাহির করিয়া সে চিত্রিত জেন স্বারের মুখে একজোড়া সুন্দর গোফ রচনা করিতে লাগিল । - - এত তন্ময় হইয়া সে কাজ করিতেছিল যে, পিছনে লঘু পদশৰ শুনিতে পায় নাই। হঠাৎ তাহার ঘাড় ধরিয়া ঝাকানী দিয়া কে যেন বলিয়া উঠিল, “বাদর ছেলে, মাতৃঋণ Ե-ՀG։ একি হচ্ছে ? তুমি কোন আম্পৰ্দ্ধায় আমার বইয়ে দাগ কাটছ ?” পিছন ফিরিয়া দিদিকে দেখিয়া মিহির বলিল, “ছবিটা বড় প্যান্‌পেনে, তাই একটু জোরাল ক'রে দিচ্ছিলাম।” রাগে বিরক্তিতে তখন যামিনীর মুখ লাল হইয় উঠিয়াছে, সে উচু গলায় বলিল, “একেবারে ধাঙড়, তোমায় দেখলে ভদ্রলোকের বাড়ির ছেলে কেউ বলবে না। স্বন্দর, পরিষ্কার কিছু কি তুই চোখে দেখতে পারিস না ? এমন টেষ্ট তোর হ’ল কোথা থেকে ?” মেয়ের গলার স্বর শুনিয়া জ্ঞানদাও ষ্টাফাইতে ইপিাইতে আসিয়া জুটলেন । ব্যাপার দেখিয়া বলিলেন, “হঁ্যা রে, তোর জালায় আমি কি করব বল দেখি ? এত বড় ধেড়ে ছেলে, তোর বুদ্ধি হবে কখন ? যা খুনী তাই কবি ? তোকে কি এখনও কচি ছেলের মত কোণে দাড় করাতে হবে না কি ?” মিহির বই রাখিয়া দিয়া বলিল, “আমি ত আর একটা মানুষ না, আমি জেলের কয়েদী। নিজেরা খুব গাড়ী চড়ে বেড়াও, আর গাদা গাদা গহন কাপড় প’রে সেজে বসে থাক, আর আমি কেবল ঘরের কোণে বলে পড়া মুখস্থ করি। বাংলা দেশে মেয়ে হয়ে জন্মালে লোকে হায় হায় করে, আমি ছেলে হয়ে জন্মেই যত অপরাধ করেছি।” জ্ঞানদা তাড়া দিয়া বলিলেন, “চুপ কর, বার হাত কাকুড়ের তের হাত বিচি। এতটুকু ছেলের এত জ্যাঠামী কেন ?” ষামিনী বলিল, “আর নিজে যেন বেড়াতে যাসনি। আমি দেখলাম না যাবার সময় তোর টিউটার দাড়িয়ে আছে, তোকে নিয়ে যাবার জন্তে " . মিহির উঠিয়া পড়িয়া বলিল, “জাহা, বেড়িয়ে ত এলাম কত হিলি দিল্লি মক্কা ! ট্রামে চড়ে বেড়ানোর মজা কত। একদিন আমাকে গাড়ীটা দিয়ে তোমরা যাও না ট্রামে ?” , “যা নিজের ঘরে, খালি মুখে মুখে চোপা ! এ ছেলে কোনো দিন মানুষ হবে না,”,বলিয়া জ্ঞানদা ছেলেকে ঠেলিয়া ঘর হইতে বাহির করিয়া দিলেন ।