পাতা:প্রবাসী (একত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bペ8 প্রবাসী—চৈত্র, ১৩৩৮ [es* छां★, २ग्न थ७ জিনিষটাকে তিনি শিক্ষিত সমাজের পক্ষে শোভন মনে করিতেন না। মিহির হৈ চৈ করার অপরাধে মায়ের কাছে প্রায়ই বকুনি খাইত। মিহিরের স্বভাব কিন্তু হাজার বকুনি খাইয়াও সংশোধিত হয় নাই । বাড়িতে লোকের মধ্যে ত চারি জন, অবশ্ন কি চাকর কয়েকটি ছিল, কিন্তু তাহাদের সম্বন্ধেও ষাঁহাতে পুত্রকন্ত যথেষ্ট দূরত্ব রক্ষা করিয়া চলে, সেদিকে জ্ঞানদার প্রখর দৃষ্টি ছিল। মিহির মাঝে মাঝে নিষেধ না মানিয়া, বেয়ার ছোট্টর সঙ্গে গল্প জমাইত, ইহাতে মা তাহার “ছোটলোকের মত স্বভাব” সম্বন্ধে নানা অভিমত প্রকাশ করিতেন। এতখানি উচ্চনীচ ভেদের আবার নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ পক্ষপাতী ছিলেন না, কিন্তু স্ত্রীর সঙ্গে আটিয়া উঠিতে পারিতেন না। জ্ঞানদা তাহাকে বুঝাইতেন, চাকরবাকর সম্বন্ধে কড়াকড়ি না করিলে, ছেলেমেয়ের চাল-চলন একেবারে বেয়াড়া হইয়া উঠিবে, ভদ্রসমাজের উপযুক্ত আর থাকিবে না। নিজের খাস আয় কিসমতিয়া সম্বন্ধে তাহার একটুখানি উদারতা ছিল, কারণ সে বহু দিন এক য়্যাংলো ইণ্ডিয়ান পরিবারে কাজ করিয়া খানিকট আভিজাত্য অর্জন করিয়াছিল। নানা কারণে মিহিরের মনে হইত মা এবং বাবাও দিদির প্রতি অযথা পক্ষপাত প্রদর্শন করেন। একে ত সে কাপড় জামা গহনা ইচ্ছামত পায়, এমন কি সে নিজে না চাহিলেও, মা তাহার জন্য কিনিয়া রাখেন। বই কেনার তাহার কোনো বাধা নাই, কিন্তু মিহিরের একখানিও বই নিজের খুলীমত কিনিবার উপায় নাই। বাবা বাছিয়া যাহা কিছু রঙ্গিমাল তাহার ঘাড়ে চাপাইবেন, তাহাই তাহাকে চাইতে হুইবে । হৰি-টিক ফুটবল লুডো বা ক্যারোমের আবার বছরে এক দিন মাত্র করা চলে। মিহিরের জন্মদিনে তাহার এইটুকু লাভ হইত। বাড়ির গাড়ীখানা ভ ম আর দিদি এমন দখল করিয়াছেন, যে, বাবাও অৰ্দ্ধেক দিন জামল পান না, মিহিরের কথা ত ছাড়িয়াই দেওয়া যায়। মা এবং দিদির কাজ করিয়া দিবার জন্য একজন আলাদা আয় আছে, মিহিরের কেহ নাই। ছোট্ট খুশী-মত একটু আধটু করে, বাকি তাহার নিজেরই স্বরিয়া লইতে হয়। আপত্তি করিলে বাবা বকেন। ফুলবাবু তৈরি হওয়ার যে কি পরিণাম তাহা শুনিতে শুনিতে মিহিরের দুই কান বোঝাই হইয়া যায়। এই সব কারণে দিদির সঙ্গে ঝগড়া মিহিরের লাগিয়াই থাকে। মা এখানেও পক্ষপাত দেখান, কিন্তু মিহিরকে দমাইতে পারেন না। রবিবারে মাষ্টার, মহাশয়ের সঙ্গে বেড়াইয়া ফিরিয়া আসিয়া, মিহির দেখিল বাড়িতে কোথাও কেহ নাই । অত্যন্ত চটিয়া হন হন করিয়া নিজের ঘরে ঢুকিয়, বুট জুতা পায়েই থাটে শুইয়া পড়িল। এই কাজটি তাহার মায়ের অত্যন্ত অপছন্দ, সেই জন্য ইচ্ছা করিয়া ইহা করিয়া সে অনুপস্থিত মায়ের উপর শোধ তুলিতে লাগিল । ছোট আসিয়া বলিল, “খোকাবাবু ওঠ, হামি বিছানা লাগাবে।” মিহির বলিল, “উঠবে না, তুই বেরো।” ছোট্ট বলিল, “লক্ষ্মী খোকাকাবু উঠ, মেমসাহেব দেখলে গোসসা করবে, শেষে তুমাকেই লাগাতে হোবে।” বিছানা হইতে একটা বালিশ টানিয়া লইয়া মিহির ছোট্টকে ছুড়িয়া মারিল । সে বেচারা অগত্যা ঘর ছাড়িয়া চলিয়া গেল। ঝগড়া করিবার জন্ত মিহিরের মনটা এমনিতেই প্রস্তুত হইয়াছিল, তাই নানা উপত্রব করিয়া সে ঝগড়ার মালমশলা জোগাড় করিয়া রাখিতে লাগিল । নিজের ঘরে মিনিট-পনেরো শুইয়া থাকিয়া মিহিরের আর ভাল লাগিল না। আস্তে আস্তে উঠিয়া মায়ের ঘরের দিকে চলিল। সেখানে কিস্মতিয়া কাপড় গুছাইতেছে। খালি দিদির রূপগুণের বর্ণনায় মুখর বলিয়া মিহির আয়াকে দুই চক্ষে দেখিতে পারিত না । সে তাড়াতাড়ি দিদির ঘরে চলিয়া গেল । - মায়ের ঘরের পাশেই দিদির ঘর, অত বড় নয় বটে, তবে ঢের বেশী স্থসজ্জিত। এ ঘরের আসবাব, পরদা, বিছানা-ঢাকা, ছবি, সবগুলিই গৃহের অধিকারিণীর রুচির পরিচয় দিতেছে। অবিবাহিতা মেয়ের জন্য এত দামী আসবাব কেন কেনা হইয়াছে, তাহার কৈফিয়ং কেহ না চাহিলেও গৃহিণী যাচিয়া সকলকে শুনাইয়া দেন। জিনিষগুলি এক সাহেব অর্ডার দিয়া করাইয়াছিলেন, তাহার বাগদত্তা বধূর জন্য। তরুণীটি দুর্ভাগ্যক্রমে বিবাহের পূর্বেই আকস্মিক দুর্ঘটনায় মারা যান।