পাতা:প্রবাসী (একত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৯২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ছবি শ্ৰীস্থবোধ বসু সারাট মাঠ রোদে ঝা-ঝা করিতেছে, যেন আগুনের অদৃঙ্গ লীলা, যেন সাহারার হাওয়া উড়িয়া আসিয়াছে। একটা পার্থীও উড়িতেছে না, শুধু দু-একটা গরু ক্ষুধার জালায় ছায়ার বাহিরে গিয়া ঘাস খাইতেছে । গাছের মাথায় তীব্র রোদ ঝিকমিক করিতেছে। হাওয়া আছে। কিন্তু গরম। তবু তার ভিতর বসন্তের মনিরতার আমেজ পাওয়া যায়। একটা পলাশ গাছে ফুল ফুটয়াছে, নীচে পাপড়ি ছড়ান, চমৎকার । - ও-দিকের ঘাসে কি-সব বুনো ফুল ফুটয়াছিল। কিন্তু খর-তাপে তারা মান—যে রূপসীরা কঠোরের কাছে প্রেম নিবেদন করিয়া প্রত্যাখ্যাত হইয়াছে তাহাদের মত স্নান। দূরের রাস্তায় ট্রাম, বাস, মটর, রিক্স। তাদের শব্দ কানে আসে না। শুধু ছবির মত তাদের দেখা যাইতেছে । রাঙা স্বরকির একটা মেঠো পথ, পিথির পিছরের মত জল-জল করিতেছে। আরও দূরে বড় একটা অশখ, গাছ মন্ত ছায়া ফেলিয়া দাড়াইয়া। হাস্কা পাতাগুলি একটু হাওয়াতেই ঝিলিমিলি করে একটা ঘুঘু ডাকিতেছে। তাছাড়া সব একেবারে চুপ। নির্জন ময়দানে এতক্ষণ ... খুড় লোক দেখা গেল। বহুদূরে,—চেনা যায় না। লোকটা আগাইয় আসিতেছে। আরও”এখটুশল্প-বেশভূষা স্পষ্ট হইয়া উঠিতেছে । একজন বাঙালী যুবক। ছেড়া একটা পাঞ্জাবী গায়। তার বেতাম খোলা। অদ্ভুত ছাদে কাপড় পরা। সবই প্রায় ময়লা। পায়ে ৰিষ্ট্র রঙের একটা কাবুলী জুতা। ওর লম্ব রুক্ষ অবিন্যস্ত চুলে ওর ঢিলা আধ-ময়লা কিছুছড়া কাপড়জামায় যেমন একটা সযত্নের হয়ত মসৌন্দর্ঘ্যের ভাব, ওর মুখখানা কিন্তু ঠিক তার সব ক্রটি পোষাইয়া লইয়াছে। যেন প্রাচ্য প্রথায় আঁকা এক দেবতার মুখ। কেমন বিশেষ যে ধরণটা—এমন সচরাচর দেখা যায় না। তার ভিতর সৌন্দর্ঘ্যের চাইতে বেশী আছে প্রাণ—নিদিষ্ট্রের চাইতে বেশী আছে অনির্দিষ্ট । হঠাৎ চমক লাগায়, কিন্তু যেন ঠিক বোঝা যায় না। রোদে পুড়িয়া শেষে সে অশথ গাছের তলার পৌছিল। কপাল হইতে ঘাম ঝাড়িয়া ফেলিল । চুলগুলিতে একবায় আঙল চলাইল, তারপর অশখ গাছের গুড়িতে হেলান দিয়া একট। আরামের নিঃশ্বাস ফেলিল। একটু শিস দিল । পকেট হইতে ক'টা পলাশ ফুল বাহিঃ করিয়া ফেলিয়াছিল ঘাসের উপর । একটা ঢ়িল ছুড়িয়া অদূরের পুকুরটাতে একটা শৰ তুলিল। একটু চোখ বুজিয়াছিল । কিন্তু ক্ষণেকের জন্ত । তারপর স্বপ্ন-মাখা চমৎকার দুটি চোখ মেলিয়া বাহিরে তাকাইল । দূরে দেখা যায় মহারাণীর স্মৃতি-সৌধ,—দুপুরের চোথে একটা আবছা স্বপ্নের মত। - সে কি যেন ভাবিতেছে। জামার হাতায় মুখটা মুছিয়া লইয়া তারপর পকেট হইতে এক মুঠ চিনাবাদাম বাহির কঞ্জিয়া খাইতে লাগিল। চমৎকার হাওয়া, অশখ-শাখায় ঝির-ঝির শম্ব। পুকুরের ফটক জলে একটা কৃষ্ণচুড়া গাছের ছায়া কঁাপিতেছে। সাদা রেলিঙের উপর একটা লাল-সবুজ নানা রঙ পার্থী। নাম-না-জানা গান না-গাওয়া। শিশু-মধুরীর একটা গন্ধ। রাস্তার একটা বাস যাইতেছে। ও-দিকের মাঠে একটা ঘূর্ণ উঠিয়াছে। শুকনো পাত, ধূলা-বালি একটু ঘুরিয়া নাচিয়া গেল। ৰুচিং একটা হাম্ব রব। আবার একটু হাওয়া। আবার ঘনত্বগন্ধ। অদ্ভুত এই পান্থটি। ঠিক পাগল মনে হয় না, কিন্তু হয়ত একটু সাদৃশ্য ধরা যায়। হাওয়াতে আঙল দিয়া যেন ছবি আঁকিতেছে। মুখখানার দিকে চাছিলে