পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

o ১ম সংখ্যা ] দেশে আরম্ভ হইলে, যদি সেই দেশেরই কতক লোক, তাহাতে যোগ না দিলেও, তাহার বিরোধী হইয়া স্বাধীনতা-সমরে যথেষ্ট বাধা দিতে না পারে, তাহা হইলে তাহা স্বাধীনতালাভের পক্ষে একটা অল্পকূল অবস্থা বলিয়া বিবেচিত হয় । গুহ-শত্রু থাকিলে কোন প্রচেষ্ট৷ সফল হয় না। অসহযোগ-প্রচেষ্ঠী যুদ্ধ কথাটির প্রচলিত অর্থে যুদ্ধ নহে। কিন্তু যুদ্ধের ন্যায় ইহাও গবর্ণমেণ্ট কে কাবু করিবার একটি উপায় । স্বাধীনতা-যুদ্ধ যে-কারণে ব্যর্থ হইতে পারে, ইহাও সেই কারণে ব্যর্থ হইয়াছে। অর্থাৎ কোন দেশে স্বাধীনতা-প্রয়াসী দলকে বাধা দিবার এবং তালিকার বর্তমান রাজা বা শাসকদিগকে যথেষ্ট সাহায্য করিবার লোক যদি জাতির মধ্যেই থাকে, তাহ হইলে স্বাধীনতা-লাভ দুঃসাধ্য বা অসাধা হইয়া উঠে । আমাদের দেশেও দেখা যাইতেছে, যে, অসহযোগ আন্দোলনের প্রারম্ভিক ও প্রস্থতিবিধায়ক কাৰ্য্যপ্রণালী অল্পসরণ করিবার লোক অপেক্ষা উহা অনুসরণ ন করিবার ও উহাতে বাধা দিবার লোক বেশী ছিল । অসহযোগ-প্রচেষ্টার চরম উপায় যে গবর্ণমেণ্টের যথেষ্ট ট্যাক্স -প্রাপ্তি এবং চাকর-প্রাপ্তি অসম্ভব করিয়া তোলা, তাহা অবলম্বন করিবার মত অবস্থা ত হয়ই নাই । অসহযোগীদের মধ্যে কৌন্সিল-প্রবেশ-পক্ষীয় দলেরও বিফল-প্রধত্ব হুইবার কারণ এই, যে, আমরা স্বাধীনতা-যুদ্ধে জয়লাভের জন্য যে যে অবস্থা আবশ্বক বলিয়াছি, সেগুলি বিদ্যমান নাই । প্রত্যেক প্রদেশের কৌন্সিল এবং সমগ্রভারতীয় ব্যবস্থাপক সভায় যদি নির্বাচকের কেবল বা অধিকাংশ স্বরাজ্য-দলের লোক পাঠাইতেন, তাহা হইলে ঐ দলের লোকের। যাহা করিতে চাহিয়াছিলেন, তাহা করিতে পারিতেন। অবশু,তাহাকরিলেও,গবর্ণমেণ্ট, অচল হইত না । কিন্তু এবার তাহার যতটুকু করিতে পারিয়াছেন, তাহাতে গবৰ্ণমেণ্ট যে পরিমাণে চিন্তিত ও বিব্রত হইয়াছেন, তাহা অপেক্ষ গবর্ণমেণ্ট কে বেশী চিন্তিত ও বিত্রত হইতে হক্টত –পরে ফল যাহাই হউক । একটা কথা আমাদের সকলকে মনে রাপিতে হইবে —আমরা সম্পূর্ণ স্বাধীনতা বা তাহ অপেক্ষী কম রাষ্ট্রীয় অধিকার ও ক্ষমতা, যাহাই লাভ করিতে সমর্থ হই না বিবিধ প্রসঙ্গ—স্বাধীনতা লাভের উপায় లిసే কেন, তাহ হয় ব্রিটিশ জাতিকে বুঝাইয়া, রাজি করিয়া লইতে হইবে, নতুবা তাহা তাহদের অনিচ্ছাসত্ত্বেৰ । আদায় করিয়া লইতে হইবে । ব্রাজি করিয়া লইতে হুইলেও প্রমাণ করিতে হইবে, যে, আমরা সবাই বা অধিকাংশ লোক দাবী সম্বন্ধে একমত, কাড়িয়া লইতে হইলেও প্রমাণ করিতে হইবে, যে, আমাদের সকলের বা অধিকাংশের ঐক্যজনিত-শক্তি আছে । - উদার-নৈতিক দলের নেতাদের বক্তৃতা আদি হইতে মনে হয়, যে, তাহারা আপাততঃ সামরিক-বিভাগ এবং দেশী রাজ্যগুলির সহিত সম্পূক্ত বিভাগ ছাড়া ভারতবর্ষের আভ্যন্তরীণ সব কাজ সম্বন্ধে সম্পূর্ণ ক্ষমত চান। সফল স্বাধীনতা-যুদ্ধ দ্বারা যেমন কথন কখন খুব শীঘ্র স্বাধীনতা লন্ধ হইতে পারে, শান্তির পথে তত শীঘ্ৰ ফল পাওয়া যাইতে পারে মা ; হয়ত একেবারে সমস্তটা না পাইয়৷ ক্রমশঃ সবটা পাওয়া যাইতে পারে । এইজন্য ভাবিতেছিলাম, ভারতের রাষ্ট্ৰীয় দাবী সম্বন্ধে উদার-নৈতিক দল ও স্বারাজ্যিক দল কত দূর পর্য্যস্ত একমত, উভয় দলের নেতারা পরামর্শ করিয়া তাহা স্থির করিয়া, তাহাকেই ভারতীয়দের নূ্যনতম দাবীরূপে উপস্থাপিত করিলে কেমন হয় ? ব্রিটিশ জাতিকে বুঝাইতে হইলে ইহা একটা পথ । চরম পন্থা অবশ্য পড়িয়াই আছে। এই গরীব, বেকারবহুল, প্রতিযোগী নানা সম্প্রদায়ে পূর্ণ দেশে বিদেশী গবর্ণমেণ্ট কে যথেষ্ট চাকরবিহীন কথন করা যাইবে, বল যায় না ; কিন্তু কোন কোন স্থানে ট্যাক্স না দেওয়ার চেষ্টা হয়ত কিছুদিন পরে আরন্ধ হইতেও পারে। কিন্তু তাহাকে অন্ততঃ একটা প্রদেশব্যাপী করিতে ন পারিলে তাঙ্গতে ঈপ্সিত ফললাভের আশা আছে কি ? প্রজার ট্যাক্স না দিলে, গবৰ্ণমেণ্ট কে জোর করিয়া তাহ আদায় করিতে হুইবে । তাহা হইলে গবৰ্ণমেণ্ট ইংলণ্ডে ও সভ্য জগতের অন্যত্র লুণ্ঠনজীবী বলিয়া প্রতীত হইবেন । এই ভাবে দেশের কাজ বরাবর চালান যায় না । ইহার শেষ দুই প্রকারে হইতে পারে ;–ছয় গবর্ণমেণ্ট জোব করিয়া ট্যাক্স, আদায়ের চেষ্টা ছাড়িয়া দিবেন এবং প্রজাদের মতঅস্থায়ী শাসন-প্রণালী স্থাপন করিবেন, নতুবা প্রজারাই ট্যাক্স দিতে বাধ্য হইবেন এবং তাহাদুর পরাধীনতার