পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>b-8 কাজ করবার আছে। তোরা না লাগৃলে আমরা এক কিকরে পেরে উঠব ? : ইউরোপ-আমেরিকায় মেয়ের কত কাজ করছে, আর ভোরা কি চিরকাল ঘরের কোণে বসে থাকৃবি ?" এই-সব শুনে দেশের কাজ করবার জন্য মনটা মেতে উঠত। কিন্তু যখন পরেশ-দাদা বলত যে“দেখ, যদি বিয়ে করবি ঠিক করে থাকিস্, তা হ’লে তোর দ্বারা কিছু হবে না, মিথ্যে দুদিনের জন্য এসে আমাদের কাজের গণ্ডগোল করে দিসনে।” আমার মনটা একটু দমে যেত —মানস-পটে বহুদিন-আগে দেখ বড়-পরিচিত একখানি মুখ মনে পড়ে সব ঝাপসা করে দিত। কখনও চুপ করে’ থাকৃতাম—কখনও বা অতিকষ্টে চোখের জল সামূলে বস্তাম—“আচ্ছা পরেশদ, বিয়ে না করলে যদি আমার দ্বারা দেশের কোনো উপকার হয় তাঙ্গ’লে বিয়ে করব "ן וז: ‘ছোটমামা' অর্থাৎ অমর-বাবু প্রায়ই আসতেন— পরেশদার সঙ্গে তার খুব ভাব ছিল । সেজন্য অল্পদিনের মধ্যেই জানতে পারলাম যে ওঁরা সব এক দলেরই লোক —দেশ-উদ্ধারের জন্য উঠে-পড়ে লেগেছেন। ঠিকু হ’ল যে নিভা ও আমি ওঁদের দলের অন্তর্ভক্ত হব। ২৪ দিন পরে পরেশদ কাগজপত্র এনে বললে— “সমর-বাবু ফিরে এলে তাকে দেখে তুই হয়ত সব ভুলে’ যাবি। তার চেয়ে বরং তুই এখনি একেবারে লিখে দে,যে, বিয়ে কবিনে।" আমি চুপ করে রইলাম। “কি ভাবছিস লিখবিনে ?” “থাক্‌ ভাই, তিনি এলে মুখেই বলা যাবে।” পরেশদ বিরক্ত হ’য়ে বলে’ উঠল—“যাঃ, তোর স্বারা কিছু হবে না। এত দুৰ্ব্বল হ’লে কি আর দেশের কাজ হয় ? মেয়েদের কোনো মনের বল নেই বলেই ত আমাদের দেশের এই দশা ।” স্ত্রীজাতির অপবাদ মোচন করুবার জন্য তাড়াতাড়ি কলম তুলে নিয়ে লিখে দিলাম : “আজ আমি তোমার কাছে বিদায় নিতে এসেছি— তোমাকে ভালবাসি না বলে নয়—কৰ্ত্তব্য বলে । অনেক ভেবে দেখলাম যে মুথই সংসারে সব চেয়ে বড় জিনিষ নয় । তাই বিয়ে না করে দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করব প্রবাসী জ্যৈষ্ঠ, ১৩৩১ [ ২৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড ঠিক করেছি। এখন বেশ অনুভব করি যে আগের তুলনায় তোমার প্রণয়ের আবেশ অনেক কম হ’য়ে গেছে। সেজন্য মনে হয় আমাকে না হ’লেও তোমার চলবে, বিশেষ কিছু কষ্ট হবে না। ভগবানের নিকট সৰ্ব্বান্তঃকরণে প্রার্থনা করি—তুমি স্বর্থী হও । তোমার চরণে অনেক অপরাধ করলাম, ক্ষমা কোরো। যদি পরজন্ম থাকে তা হলে আবার যেন তোমার দেখা পাই । বিদায় ।” চিঠিখানা পাঠিয়ে দিয়েই মন ভেঙে গেল—অবসাদ শরীর মন ছেয়ে ফেললে । কিন্তু মনের দুঃখ চেপে রেখে কাজ করতে লাগলাম। তখন আমাদের কাজ খুব জোরে চলছিল। আমরা অনেকরকম সাহায্য করতাম, সে-সব গোপন কথা এখন না বলাই ভালে। কাজ করতে গেলে টাকার দরকার—পরেশদাদের পুজি ফুরিয়ে এসেছিল। সেজন্য ঠিক হ’ল যে নিভ ও আমি বাড়ী বাড়ী গিয়ে চাদা সংগ্রহ করব । আমরা দুচার বাড়ী গিয়েওছিলাম, কিন্তু কিছু বিশেষ লাভ হ’ল না—বেশী লোকই তাড়িয়ে দিলে। তা ছাড়া পুলিশ টের পেলে ফাস হ’য়ে যাবে বলে’ টাকা তোলা বন্ধ করা হ’ল। কিন্তু পরেশদা বললে— “যেমন করে হোক্ আমাদের টাকা জোগাড় করতেই হবে । দেশের লোকদের দেওয়া উচিত। কিন্তু তারা যপন স্বেচ্ছায় দেবে না, আমরা কেড়ে নেব। সংকাজের জন্য জোর জুলুম করলে কোনো দোষ নেই।” অনেকে সায় দিল, আবার কেউ কেউ আপত্তি করলে, তাই কিছুই ঠিক হ’ল না। কিন্তু কিছুদিন পর পরেশদা’রই জিত হ’ল। তার রাতদুপুরে ডাকাতি করে টাকা আমূতে আরম্ভ করলেন। দেশে হৈ চৈ পড়ে গেল । শেষে ওঁদের এমন সাহস বেড়ে গেল যে দিনের বেলায়ও টাকা আদায় আরম্ভ কমে’ দিলেন। কেমন করে’ পুলিশের চোখে ধুলো দিলে, কেমন করে কৃপণ মহাজনকে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করলে, এই-সব ওঁরা এসে গল্প করতেন। এ-সব শুনে যে একটুও গৰ্ব্ব হ’ত না তা নয়, কিন্তু তবু মনটা কেমন খুংখুং কবুত । - একদিন সকালে কাগজ খুলে ইনওয়ার্ড প্যাসেঞ্জাবুস্ র্দের মধ্যে ওঁর নাম দেখলাম । মন আশায় নেচে উঠল,