পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা] צףפא আধিপত্য বিস্তার করে। অবশু স্ত্রী-পুরুষের জীবন একস্বত্রেই গাথা। কবি গাহিয়া গিয়াছেন যে, যাহা স্ত্রীলোকের ভাবিবার বিষয় তাহ পুরুষেরও ভাবিবার বিষয়; স্ত্রী-পুরুষের উখান ও পতন একসঙ্গেই সম্ভব । কবির এই কল্পনা সত্য হইলেও স্ত্রী-পুরুষের সামাজিক সমস্তাগুলি স্বতন্ত্র-ভাবে আলোচনা করাতে অনেক স্ববিধা আছে। মহিলা সভাপতিরূপে তিনি তাহার স্বশ্রেণী স্ত্রীজাতির সামাজিক সমস্তাগুলির আলোচনা করিতেই সকলের অনুমতি প্রার্থনা করেন ; যেহেতু পুরুষজীবনের সামাজিক সমস্তার আলোচনা করিবার তেমন যোগ্যতা তাহার আছে বলিয়া তিনি মনে করেন না। তিনি বলেন, ভারতবর্ষীয় স্ত্রীলোকের উন্নতি দ্বিবিধ পর্দা দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হইয়াছে। এক বাহ পর্দা, আরএক মানসিক পর্দা । বাহ পর্দার ফলে স্ত্রীলোক গৃহ-কোণে আবদ্ধ হইয়া থাকে। মানসিক পর্দা দ্বারা স্ত্রীলোকের মন জ্ঞানের আলোক হইতে বঞ্চিত এবং অজ্ঞতার অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয় । বস্তুতঃ মানসিক পর্দা বাহ পর্দা অপেক্ষা অনেক বেশী অনিষ্টকর ; যদিও উভয়ের মধ্যে একটা অবিচ্ছিন্ন সংস্রব রহিয়াছে। মুসলমান রাজাদের আধিপত্য- ও অনুকরণ-বশতঃ উত্তর ভারতেই পর্দা অন্যান্য প্রদেশ অপেক্ষা স্ত্রীলোকের উন্নতির পথে অধিকতর বাধা দিয়াছে। ১৯০৪ খৃষ্টাব্দের জুলাই-সংখ্যক ইণ্ডিয়ান লেডিস ম্যাগাজিন হইতে বাক্যাংশ উদ্ধৃত করিয়া তিনি বলেন—পর্দা দ্বারা স্ত্রীলোক গৃহ-কোণে আবদ্ধ হইয়া থাকে এবং তাহাতে তাহারা ঈশ্বরের আলোকবাতাস হইতে বঞ্চিত হয়। সেজন্ত তাহাদের দেহ সুস্থ ও সবল হইতে পারে না। ফলে স্ত্রীলোকের এক দুৰ্ব্বল ও রুগ্নকায় জীব-বিশেষ হইয়া পড়ার আশঙ্কা আছে। পর্দা দ্বারা স্ত্রীলোকের নূতন তথ্য জানিবার কৌতুহল নষ্ট হইয়া যায় এবং পরিদর্শন করিবার ক্ষমতাও বিলুপ্ত হয়। পর্দার ফলে বালিকার বয়ঃপ্রাপ্ত হইলেই স্কুল ছাড়িয়া গৃহ-কোণে প্রবেশ করে। সেজন্ত স্ত্রীলোকের মধ্যে উচ্চ শিক্ষা বিস্তার-লাভ করিতে পারে না। তাহাতে স্ত্রীলোকের কুসংস্কার ও অজ্ঞত দৃঢ় ও চিরস্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে । মাতার উৎকর্যের উপর যখন সস্তানের শিক্ষাদীক্ষা নির্ভর করে তখন এই কথাও বলা যাইতে পারে যে, পর্দা দ্বারা সৰ্ব্বসাধারণের মধ্যে শিক্ষা-বিস্তারেরও বাধা ঘটিয়া থাকে । ইহাতে সামাজিক ক্ষতিও আছে । স্ত্রীলোক সাধারণতঃ পুরুষ-মনের স্বকুমার বৃত্তিগুলি পরিফুট করিয়া দেয়। পর্দার ফলে স্ত্রীলোকের আত্মশক্তির পরিস্ফুটন হয় না বলিয়া স্ত্রীলোকের দ্বারা পুরুষের মনেবৃত্তি-বিকাশ সম্ভব হয় না। পর্দার ফলে সমাজের মধ্যে অমিতাচার প্রভৃতি দোষগুলিও প্রবেশ করে। পর্দার ফলে স্ত্রীলোক পদে-পদে প্রবঞ্চিত হয় এবং কপটাচারী লোক এরূপ নিরুপায় স্ত্রীলোকের যথাসৰ্ব্বস্ব আত্মসাৎ করিয়া থাকে। পর্দার ফলে দেশে এমন অাইন হইয়াছে যাহাতে স্ত্রীলোক নিজে কোন বৈষয়িক কৰ্ম্ম করিতে অক্ষম ; যাহারা স্ত্রীলোকের সহিত কোনরূপ বৈষয়িক কৰ্ম্ম করে তাহারাও এরূপ আইনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হইতে পারে। এই পর্দা কখনো সম্পূর্ণভাবে দূরীভূত হইতে পারে কি না স্বতন্ত্র কথা । কিন্তু যতদিন এই নিয়ম সমাজে আছে ততদিন পর্দার ভিতরে থাকিয়াই স্ত্রীলোকের আত্মোৎকর্ষ এবং পরিবারে ও সমাজে আত্মশক্তি বিস্তার করিতে হইবে । রীতিমত জেনানা-শিক্ষা দ্বারা স্ত্রীলোকের কুসংস্কার ও অজ্ঞতা দূর করিতে হইবে। স্ত্রীলোকের প্রতি স্ত্রীলোকের যে কৰ্ত্তব্য রহিয়াছে সেই দায়িত্ব হইতে স্ত্রীলোক নিজেকে নিষ্কৃতি দিতে পারে না। অন্ধতমসাচ্ছন্ন গ্রাম্য স্ত্রীলোকের সম্মুখে শিক্ষিতা স্ত্রীলোকেরাই জ্ঞানের প্রদীপ প্রজালিত করিয়া দিতে পারে এবং তদ্বারা তাহাদের ভাগ্যলক্ষ্মী স্বপ্রসন্ন হইতে পারে। গ্রাম্য স্ত্রীলোকের চলিবার বা ভাবিবার শক্তির - অভাব নাই; কিন্তু তাহার হস্ত-পদাদি এমন কি মস্তিষ্কেরও ব্যবহার করিতে জানে না । স্ত্রীলোকেরা যেন অজ্ঞতার প্রতিযোগিতা করিয়া চলিতেছে ; কে কত কম শিক্ষায় জীবন-যাত্রা নির্বাহ করিতে পারে তাহা দেখানোই যেন স্ত্রীলোকের গৌরবের বিষয় । উত্তর-ভারতে স্ত্রীশিক্ষা-বিস্তারের অনেকগুলি কুসংস্কার-মূলক অন্তরায় বিশেষভাবে বর্তমান রহিয়াছে। সাধারণতঃ বালিকাদিগকে স্কুলে পাঠান হয় না ; কেন না তাতাতে অনেক খরচ করিতে হয় | এই খরচটা