পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] রাজপথ ૭૧કે বলছি যে সারাজীবন গবর্ণমেন্টের পয়সা খেয়ে এসে এখন গবর্ণমেণ্টের বিপক্ষ-দলের সঙ্গে যোগ দেওয়া তোমার উচিত হচ্ছে না ।” প্রমদাচরণ স্বরেশ্বরের জেল-সংবাদের উপর দৃষ্টি নিবন্ধ করিয়া ধীরে ধীরে কহিলেন, “না, না, এর মধ্যে গোলমেলে কথা কিছু নেই ত । তুমি যা বলছ তা যদি ঠিক হয়, তা হ’লে তবে বিপরীতটাও ঠিক । একথাটা আমি এরকম করে একদিনও ভেবে দেখিনি ; এখন মনে হচ্ছে ভেবে দেখা উচিত !” বলিয়া প্রমদাচরণ একাগ্রচিত্তে চিন্তা করিতে লাগিলেন । “বাবা ?” “কি, মা ?” “এক পেয়ালা চা তা হ’লে করে নিয়ে আসি ?” স্বমিত্রার প্রতি দৃষ্টি উখিত করিয়া প্রমদাচরণ শান্তকণ্ঠে কহিলেন, “আজ থাকৃ, মা । কাল না হয় সকালসকাল এক পেয়ালা করে দিয়ে ।” “কিন্তু আজ যে বড় ঠাণ্ড, বাবা ?” “তা হোক—আজকের দিনটা—আজকের দিনট থাকৃ।” প্রমদাচরণের কথা শুনিয়া জয়ন্তীর চক্ষু অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মত জলিয়া উঠিল এবং স্থমিত্রার চক্ষু সজল হইয়া আসিল । কিন্তু কেহও কোন কথা কহিল না । [ २१ ] ক্ষণকাল পরে সুমিত্রাকে একাস্তে পাইয়া জয়ন্তী তীব্র স্বরে কছিলেন, “বেশী বাড়াবাড়ি করিসনে স্বমিত্ৰা ! বেশী বাড়াবাড়ি করলে ওসব চরকা-টবৃক আমি বাড়ী থেকে বেঁটিয়ে বার কবে দেবো ?” স্বমিত্ৰা মাতার দিকে চাহিয়া ছলছল-নেত্রে বলিল, “তার চেয়ে তোমার এই আপদ-বালাই মেয়েটাকে ঝেটিয়ে বাড়ী থেকে বার করে দাও না মা ; তা হ’লে সব হাঙ্গামা চুকে যাবে!” অপলকনেত্রে ক্ষণকাল সুমিত্রার প্রতি চাহিয়া থাকিয়? জয়ন্তী ঈষৎ শাস্তম্বরে কহিলেন, “আমার কথা শোন স্বমিত্রা, এষ্ট বুডো-বয়সে তোর বাপকে পাগল করে’ তুলিসনে ! লেখাপড়ার সময় থেকে এতটা বয়স পৰ্য্যস্ত আমি যাকে চালিয়ে এসেছি, তাকে আজ আমার হাত থেকে বার করে নিসনে ! তাতে মঙ্গল হবে না।” সুমিত্রা ব্যস্ত হইয়া উঠিয়া কাতরতার সহিত বলিতে লাগিল, “এ-সব তুমি কি কথা বলছ, মা ? তোমাব হাত থেকে আমি বাবাকে বার করে নেব কেন ?” সহসা জয়ন্তীর চক্ষু হইতে ঝরঝর করিয়া অশ্র ঝরিতে লাগিল ; তিনি বাষ্প বিকৃতকণ্ঠে বলিলেন, “কিন্তু আমি যে দেখতে পাচ্ছি বার করে নিচ্ছিস্ ; ও ক্ষেপাকে আমি চিনি, উনি যদি একবার ক্ষেপে ওঠেন, তখন আর শত চেষ্টাতেও ফেরাতে পারবিনে ? আমার সব সাধ-আহলাদ, সব কাজ-কৰ্ম্ম বাকী রয়েছে। তোদের দুই বোনের বিয়ে আছে, আর দু-তিন মাস পরে তোর দাদা বিলেত থেকে ফিরে আসছে। এখন অনেক কাজ বাকী সুমিত্রা—আমার এত সাধের সংসারে আগুন ধরিয়ে দিসনে ! আমি তোর হাতে ধরছি, আমার কথা রাখ ! আমিও তোর মা !" বলিয়া জয়ী ব্যাকুলভাবে সুমিত্রার দুই হন্ত চাপিয়া ধরিলেন। জননীর মুষ্টি হইতে নিজের হস্ত মুক্ত করিয়া লইবার কোন চেষ্টা না করিয়া স্বমিত্রা নীরবে ক্ষণকাল দাড়াইয়া রহিল, তাহার পর রুদ্র বৈশাখের তপ্ত মেঘ হইতে সময়ে সময়ে যেমন বড় বড় ফোট ঝরিয়া পড়ে, তেমনি স্বমিত্রার চক্ষু হইতে অশ্র ঝরিয়া পড়িতে লাগিল । "বল, আমার কথা রাখবি ?” স্বমিত্রা তাহার আনত আৰ্দ্ৰ নেত্র উখিত করিয়া বলিল, “কি কথা রাখতে হবে মা, বলে ?” “তুই আগেকার মতন আবার হ ! আমার সংসার যেমন লছিল তেমনি চলুক !” ভয়ে স্থমিত্রার মুখ বিবর্ণ হইয়া গেল । “আগেকার মত আবার কি মা ? সেই সাজ-সজ্জা, লেসফ্রিল, সেই বিলাতী কাপড়, সেইসব আবার ?” জয়ন্তী ব্যগ্রভাবে কহিলেন, “আমি অত কথা জানিনে, তুই আগে যেমন ছিলি তেমনি হ'। তোর এ যোগিনীসাজ আমার যে কত বড় সাজা হয়েছে তা আমি কি করে? তোকে বোঝাব?” so স্বমিত্রা তাহার বিহ্বল বিমূঢ় খৃষ্ট জয়ন্ত্রীর মুখের উপর