পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] আর্টের আদর্শ 8brసి সকলেই বোঝে ভেম্নি রসও কি বস্তু তাহা সকলে বোঝে— বাক্য দ্বারা বুঝন যায় না। রসের ধারণা কঠিন বলিয়াই হউক অথবা রসের সম্বন্ধে সংস্কৃত সাহিত্যে উচ্চ ধারণা ছিল বলিয়াই হউক রসাস্বাদের সঙ্গে ব্ৰহ্মাস্বাদের তুলনা করা হইয়াছে। সংস্কৃত সাহিত্যের আদর্শ খুব উচ্চ ছিল । উৎকৃষ্ট সংস্কৃত সাহিত্য পাঠ করিলে মন একটা উচ্চভাবে পূর্ণ হয়। সংস্কৃত সাহিত্যের মধ্যে এমন অনেক জিনিষ আছে যাহা এখন আমরা পড়িতে লজ্জা পাই কিন্তু মোটের উপর যে ভাবটি মনে শেষ পৰ্য্যন্ত থাকিয়া যায় তাহা মনকে সতেজ করে, পবিত্র করে, স্বন্দর করে । কাব্যের বস্তু-সম্বন্ধে তখনকার লোকদের কি আদর্শ ছিল তাহা আমরা মৰ্ম্মট ভটের “কাব্য-প্রকাশে” কাব্যের ফল-নির্দেশ-ব্যপদেশে দেখিতে পাই । তিনি লিখিয়াছেন— “কাব্যং যশসেহর্থক্লতে ব্যবহারবিদে শিবেতরক্ষতয়ে সদ্যঃ পরনিবৃতয়ে কান্তাসংমিততয়োপদেশযুজে ।” অর্থাং কাব্যে যশ ও অর্থ হয়, লোক-ব্যবহার জানা যায়, অমঙ্গল নাশ হয়, বাধাহীন আনন্দ পাওয়া যায় এবং তাহা স্ত্রীর উপদেশের মত মধুর উপদেশ-বাক্যে পূর্ণ থাকে। স্বতরাং শুধু বাক্যের বিন্যাস কাব্য নয়। ইহাতে আনন্দ, শিক্ষা ও জ্ঞানের স্থান আছে। কাব্য-পাঠ করিয়া লোকব্যবহার জানা যায়—জাতীয় ও ব্যক্তিগত অমঙ্গল নাশ হয় —দেশের বা জাতির চরিত্র গঠন হয় । নিক্লষ্ট সাহিত্য যেমন জাতিকে পাপের পথে লইয়া যায়—তেমনি সংসাহিত্য মঙ্গলের পথে লইয়া যায়। - মোটের উপর আর্ট-সম্বন্ধে সংস্কৃত সাহিত্যে আমরা এই দেখি যে, নয়প্রকার রস ও ভাবের স্বষ্টিই কাব্য। ভারতীয় কাব্য, চিত্র ও ভাস্কৰ্য্য সকলের মধ্যেই এই রসহষ্টি করা হইয়াছে । কিন্তু এইসব রসস্থষ্টিরও বহু নিম্নে ভারতীয় কলার অন্তরের মধ্যে লুকায়িত দেখিতে পাই একটি অতীন্দ্রিয় সত্তার প্রভাব । এই অসীমের প্রভাব— এই খণ্ডের সহিত অখণ্ডের অন্তনিগুঢ় যোগ—ইহাই ভারতীয় কলার বিশেষত্ব। একখানি ভারতীয় কাব্য বা চিত্র যদি শুধু কাব্য বা চিত্র হিসাবে বিবেচিত হয় তবে দেখিব তাই আধখানা । তাহার আসল ভাগটি ছাটিয়া ফেলা হইয়াছে। প্রত্যেক চিত্র একটি বৃহতের tvరిశ থও মাত্র । অজন্ত। গিরি গুহার প্রত্যেকটি লত। অনারি ও অনন্ত । সে কোন নির্দেশ-বিহীন রাজ্য হইতে আরম্ভ করিয়া আবার কোন অসীমের মধ্যে পথ হারাইয়াছে। আমরা যেটুকু দেখি সেটুকু তাহার খগুরূপ মাত্র। প্রত্যেক রেখা অনাদি অনন্ত । তাঙ্গর স্বষ্টির মধ্যে। স্রষ্ট যেন স্বষ্টি-সিন্ধু মন্থনে ক্ষেপিয়া গিয়াছেন। এক-একটি চিত্রের মধ্যে কত লোক—কত ফুল—কত পাতা—সকলই সীমাহীন ! মন্দিরের উচ্চ চূড়াও অন্তহীনতার মধ্যে আত্ম-সমর্পণ করিয়াছে । সস্থত সাহিত্যে যেমন রস-স্বষ্টি ছিল, তেমনি যুরোপীয় সাহিত্যকার ও দার্শনিকদের মতে সৌন্দৰ্য্যস্বষ্টিই ছিল সাহিত্যের কার্য্য । যুরোপে ইহা লইয়া বেশ একট। আলোচনাও হইয়া গিয়াছে। গ্রীকৃ সভ্যতার প্রাণ ছিল সৌন্দৰ্য্য-স্বষ্টি ; এবং গ্রীকৃ সভ্যতার গুরু সেক্রিাতিস, প্লেটো ও আরিষ্টটলের লেথার মধ্যে এসম্বন্ধে বেশ একটা স্পষ্ট ভাব দেখিতে পাওয়া যায়। তাহারা পৃথিবীর সেই প্রাচীন কালেই সৌন্দৰ্য্যকে বেশ বিচারের চক্ষে দেখিয়াছিলেন। সেক্রিাভিসের সৌন্দৰ্য্য মঙ্গলের সঙ্গে ও ব্যবহারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ স্থত্রে আবদ্ধ । প্লেটোর সৌন্দর্ঘ্য জড় জগতের বস্তু নহে—অধ্যাত্মলোকের অদৃশ্য বস্তু—ইহার ছাপ যেখানে পড়ে সেখানেই মানুষ সৌন্দর্ঘ্য পায়। আরিষ্টটল সৌন্দর্যকে ব্যবহার ও মঙ্গল হইতে পৃথক্ করিয়াছেন । তিনি মনে করিতেন সৌন্দর্ঘ্যের মুখ্য উদ্দেশ্য আনন্দ-দান । গ্রীসে ও ইটালীতে সৌন্দর্য্যতত্ত্ব খুব আলোচিত হইয়াছিল সত্য, কিন্তু খৃষ্টধৰ্ম্মের অভু্যখানের অব্যবহিত পূৰ্ব্বে ও সমসাময়িক কালে আর্টের নামে এত ব্যভিচার ও কুরুচির প্রশ্রয় পাইয়াছিল যে খৃষ্টপূৰ্ম্মের প্রচারের সঙ্গে-সঙ্গে ঐ আর্ট বন্ধ করা খৃষ্টানের পক্ষে ধৰ্ম্মের অঙ্গ হইয়াছিল । খৃষ্টধৰ্ম্ম মঙ্গলের বার্তা লইয়া জগতে সমূদিত হইয়াছিল । সুতরাং আর্টের স্ব-উচ্চ দেওয়াল যাহা মানুষ হইতে মানুষকে পৃথক করিয়াছিল এবং যাহা নৈতিক শিথিলতার উপর প্রতিষ্ঠিত হইয়া বিলাসের প্রশ্রয় দিয়াছিল ও জাতীয় জীবনের অবনতি সাধন করিয়া মানব-সমাজকে পশুর সহধৰ্ম্মী করিয়ছিল তাহাকে গণনাতীত বস্তুল্য