পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

QQ8 গবর্ণমেণ্ট দরখাস্ত নামঞ্জুর করিয়াছেন। আবেদকগণ অতঃপর এবিষয়ে বিদ্যুত পালেমেন্টে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করান। উত্তরে অধ্যাপক রিচার্ডস্ হাউস অব কমন্সে জানাইয়াছেন, যে, ভারতসচিব লর্ড অলিভিয়ার উক্ত প্রাদেশিক গবর্ণমেণ্ট দ্বয়ের নিদ্ধারণের উপর হস্তক্ষেপ করিতে প্রস্তুত নতুন । প্রাদেশিক গবর্ণমেণ্ট দুটি তাহাদের আদেশের কোন কারণ দেখান নাই, লর্ড অলিভিয়াবৃও দেখান নাই। যদি বাংলার ও আগ্রাঅযোধ্যার ব্যবস্থাপক সভা দুটিতে এবিষয়ে প্রশ্ন করা যায়, তাহা হইলেও, খুব সম্ভব, কারণটা জানিতে পারা যাইবে না । কিন্তু চেষ্টা করায় দোষ নাই । মৌলানা আবুল কালাম আজাদ মুসলমান সমাজের, খিলাফৎ-কনফারেন্সের এবং কংগ্রেসের একজন মান্তগণ্য সভ্য। বাবু শিবপ্রসাদ গুপ্ত বারাণসীর হিন্দুস্তানী বৈশ্ব সমাজের একজন অতি মানী ও ধনশালী ব্যক্তি । তিনি নিজ মাতৃভাষা হিন্দীর পরম অনুরাগী এবং পূর্ণমাত্রায় স্বাঞ্জাতিক অর্থাৎ ন্যাশন্যালিষ্ট । “আজ” নামক হিন্দী দৈনিক কাগজ তাহারই ব্যয়ে চলে। মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ভারতে বিদ্রোহ বা বিপ্লব ঘটাইবার জন্য বিদেশে যাইতেছেন, এরূপ সন্দেহ করা যায় না। বাবু শিবপ্রসাদ গুপ্ত সস্ত্রীক, বিদ্রোহ ও বিপ্লব ঘটাইবার জন্য, বিদেশে যাইতেছেন, ইহাও সম্ভবপর নহে। ইহা সম্ভব, যে, ভারতের অনেক স্বাজাতিক মনে করেন, যে, যুদ্ধ না করিলে ভারতবর্ষকে স্বাধীন করা যাইবে না । কিন্তু ভারতবর্ষের নিজের একা, কিম্বা কোন শক্তিশালী জাতির সহযোগে, এখন যুদ্ধ করিবার স্থযোগ আছে বা অদূর ভরিষ্যতে ঘটিতে পারে, ইহা কোন প্রাপ্তবয়স্ক, পৃথিবীর রাজনৈতিকঅবস্থাভিজ্ঞ এবং বুদ্ধিমান ভারতীয় বিশ্বাস করেন বলিয়া আমরা অবগত নহি । আবেদকদ্বয় ইউরোপ যাইবার ছাড়পত্র চাহিয়াছিলেন। সে মহাদেশে এখন দুটি জাতি পরম্পরের সমকক্ষ—ফরাসী ও ইংরেজ। ফরাসীরা ইংরেজের সহিত সন্ধিস্বত্রে আবদ্ধ । ইহা ঠিক বটে, যে, যখনই কোন জাতির স্বার্থে আঘাত পড়ে, তখনই তাহারা সন্ধি অগ্রাহ করে। এবং ইংরেজ ও ফরাসীর বন্ধুতা প্রবাসী—শ্রাবণ, ১৩৩১ [ ২৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড অপেক্ষা শক্রতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাই অধিকতর ইতিহাসপ্রসিদ্ধ, ইহাও ঠিক । কিন্তু আমাদের পক্ষ অবলম্বন করিয়া ফরাসীরা ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়িবে, এ আশা বাতুল ভিন্ন কেহ বিশ্বাস করিতে পারে না। যদি লড়িবার ইচ্ছা করে, তাহা হইলেও তাহারা আমাদের কোন সাহায্য করিতে পারিবে না। কারণ, স্থলে ইংরেজ অপেক্ষা ফরাসী প্রবল বা অন্ততঃ ইংরেজদের সমকক্ষ হইলেও জলে ইংরেজ প্রবল। কিন্তু সমুদ্র অতিক্রম করিয়া না আসিলে ইউরোপীয় কোন জাতি আমাদের সাহায্য করিতে পারিবে না। ইউরোপের অন্য কোন জাতির, যদিই বা ইচ্ছা হয়, তাহা হইলেও একা একা ইংরেজের সঙ্গে লড়িবার সাধ্য নাই । অনেকগুলা জাতি একজোট হইয়া আমাদের পক্ষ অবলম্বনপূর্বক ইংরেজদিগকে ভারতবর্ষ হইতে তাড়াইয়া দিবে, এবং তাহার পর আমাদিগকে নিজেদের পদানত না করিয়া স্বাধীন করিয়া দিয়া চলিয়া যাইবে, এরূপ “সাত্ত্বিক” ও নিষ্কাম স্বভাব কোন জাতির নাই । আর-একটা কথা এখানে বিবেচ্য। পৃথিবীর যে-যে জাতি অন্য কোন জাতির সাহায্যে স্বাধীন হইয়াছে বা স্বাধীনতা রক্ষা করিয়াছে, স্বাধীনতা-সমরে তাহাদিগকে নিজেই প্রধান কৰ্ম্মী হইতে হইয়াছে, অন্যেরা কেবল সহায় হইয়াছে মাত্র। আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রসমূহ স্বাধীনতার জন্য ইংরেজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিয়াছিল, ফরাসীরা তাহাদেব সাহায্য করিয়াছিল ; গত শতাব্দীতে গ্রীকরা তুর্কদের অধীনতাপাশ ছিন্ন করিবার জন্য তাহাদের বিরুদ্ধে লড়িয়াছিল, ইংরেজরা তাহাদের সাহায্য করিয়াছিল ; বৰ্ত্তমান সমরে তুর্ক র স্বাধীনতা ও স্বদেশ-রক্ষার জন্য লড়িয়াছে ফরাসীরা তাহাতে তাহাদের সহায় ছিল । আমরা যদি অন্য কোন জাতির সাহায্যে যুদ্ধ করিয়া ইংরেজদিগকে তাড়াইয়া দিতে চাই, তাহা হইলে যুদ্ধটা প্রধানতঃ আমাদিগকেই করিতে হইবে । তাহার মত নেতা, সৈন্যদল, ঐক্য, জলস্থলআকাশের রণ-শিক্ষা, অস্ত্র-শস্ত্র, সরঞ্জাম, প্রভৃতি আমাদের কোথায় ? অতএব ইহা ধরিয়া লওয়া যাইতে পারে, যে, কোন বুদ্ধিমান ও প্রাপ্তবয়স্ক ভারতীয় স্বাজাতিক ষড়যন্ত্র করিবার জন্য বিদেশে যাইবেন না । ইউরোপে কেন