পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] · বিবিধ প্রসঙ্গ—আকাশপথে ভ্রমণ • > যাইবেন না, তাহ আমরা দেখাইয়াছি। আমেরিকা যাইবেন না কেন, তাহাও সহজবোধ্য। আমেরিকা আমাদের এমন বন্ধু যে, যে-সব ভারতীয় আমেরিকার পৌর অধিকার পাইয়াছিলেন তাহদের সে-অধিকার আমেরিকার লোকেরা নাকচ করিয়া দিতেছেন, এবং ভারতীয়েরা যাহাতে আমেরিক যাইতেই ন পারে, তাহার উপায় অবলম্বন করিয়াছেন—কেবল অনেক বাধাবাধির মধ্যে গুটিকতক ছাত্র যাইতে পারিবে মাত্র। জাপানীরা ত নিজেদের বিপদ এবং আভ্যন্তরিক ও বৈদেশিক সমস্তাসকল লইয়া বিত্রত। সেখানেও ভারতীয়ের ষড়যন্ত্র করিবার উদ্দেশ্যে যাইতে পারেন না। ফৌজদারী আইনে দণ্ডনীয় গৰ্হিত কাজ করিবার জন্য বিস্তর টাকা খরচ করিয়া সাত সমুদ্র তের নদী পার হইয়া মানুষ—বিশেষতঃ প্রৌঢ় শিক্ষিত সম্ৰান্ত মানুষ —একা বা সস্ত্রীক যায় না। . অতএব, যে-সব ভারতীয় বিচারাধীন বা জামিনে খালাস নাই বা যাহাদের বিরুদ্ধে প্রকাশযোগ্য স্পষ্ট প্রমাণ নাই, চাহিব। মাত্রই তাহাদিগকে ছাড়পত্র দেওয়া উচিত । ইহা ঠিক, যে, ভারতীয়ের বিদেশে গেলেই এদেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা এবং ইংরেজদের কার্য্যকলাপ তাহাদের লেখায় ও বক্তৃতায়, এবং, তাহারা লেখক ও বক্তা না হইলে, তাহাদের সাধারণ কথাবার্তায় প্রকাশ হইয়া পড়ে। তাহাতে বিদেশীরা জানিতে পারে, যে, ইংরেজরা ভারতবর্ষ সম্বন্ধে নিজেদের যেরূপ ছবি অঁাকে তাহারা তত ভাল নহে, ভারতের মুখসৌভাগ্যের যে ছবি অঁাকে ভারতের লোকেরা তত স্বর্থী সমৃদ্ধ নহে, এবং আমাদিগকে যত অসভ্য ও কুচরিত্র বলিয়া বর্ণনা করে, আমরা তত নিকৃষ্ট নহি । তাহাদের সম্বন্ধে এবং ভারতবর্ষের সম্বন্ধে সত্য কথা জানা পড়িবার ভয় ইংরেজদের আছে। কিন্তু কয়েকজন ভারতীয়ের বিদেশযাত্র বন্ধ করিতে পারিলেই কি সত্যকথাটা চাপ থাকিবে ? থাকিবে না। ছাড়পত্র দেওয়া-সম্বন্ধে কড়া নিয়ম এবং ভারতীয় সংবাদপত্ৰসকলের উপর কঠোর রাজদ্রোহী ও ইংরেজবিদ্বেষ বিষয়ক আইনের প্রয়োগ সত্ত্বেও অনেক সত্য কথা নানা দেশে প্রকাশ পাইয়াছে, ক্রমাগত প্রকাশ পাইতেছে, এবং ভবিষ্যতে আরও প্রকাশ পাইবে । সত্য চাপ দিয়া রাখিবার শক্তি ইংরেজের নাই, কোন জাতির নাই, কোন জাতিসংঘের নাই । বিদেশগামী এরূপ বিস্তর ভারতীয় আছেন, যাহারা ভারতে কোন রাজনৈতিক আন্দোলনের সহিত যুক্ত নহেন অথচ মতে বা অভিলাষে চরমপন্থী । ইংরেজের বিশ্বাসভাজন লোকদের মধ্যে, সরকারী কৰ্ম্মচারীদের মধ্যে, এরূপ লোক আছেন । গবর্ণমেণ্ট যে উদ্দেশ্যে ছাড়পত্র সম্বন্ধে কড়া নিয়ম ও অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করিয়াছেন, তাহা সিদ্ধ হয় নাই, হইতে পারে না ; লাভের মধ্যে কেবল এই খ্যাতি রটিতেছে, যে, ভারতবর্ষ কারাগার, এবং কারাধ্যক্ষ ইংরেজের অনুমতি ভিন্ন বন্দী ভারতীয়দের কোথাও যাইবার জো নাই । কারাগারের এই প্রাচীর ভাঙিবার চেষ্টা করা, ভাঙিয়া ফেলা সম্পূর্ণ বৈধ, ন-ভাঙাটাই অধৰ্ম্ম এবং মানুষের অমুচিত । আকাশপথে ভ্রমণ ভারতবর্ষে ইংরেজ, মার্কিন, পোস্তুগীজ ও ফরাসী বিমান-নাবিকদের ভিন্ন ভিন্ন সময়ে আগমনের সংবাদ খবরের কাগজে বাহির হইয়াছে। অন্যান্ত দেশেও আকাশপথে ভ্রমণের নানা-প্রকার প্রতিযোগিতা চলিতেছে। ভারতীয় কোন ব্যক্তির কিন্তু এরূপ সখ দেখা যাইতেছে না। ইহা অবশ্য গরীবের সাধ্যের অতীত সখ । কিন্তু ভারতের অনেক ধনী ত ঘোড়দৌড়ের অনেক ঘোড়া রাখেন ; তাহাতে বিস্তর খরচ হয়, এবং তাহারা নিজে সে-সব ঘোড়ায় চড়িয়া বাজী জিতিবার চেষ্টা করেন না। বেতনভোগী সওয়ারের সে-কাজ করে। তেমূনি, তাহাদের কেহ কেহ আকাশভ্রমণে ভারতীয় সাহসী ও বলবান যুবকদিগকে উৎসাহ দিবার সখ পোষণ করুন না ? ঘোড়দৌড়ের জুয়াখেলায় যে নৈতিক অবনতি হয়, এবং তাহাতে বাজী রাখিয়া যে অনেক গরীব লোকেরাও