পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] যোগ নাই, অনেকের সাহস নাই, এবং এই একান্ত-আবখ্যক না । সৎকাজটির জন্য স্থপৃঙ্খল দলবদ্ধতা নাই। দু-চার জন দুৰ্ব্বত্তের ভয়ে শতশত লোক শঙ্কিত থাকে, কারণ দুৰ্ব্বত্তের মন্দ কাজের জন্য কুপ্রবৃত্তির তাড়নায় ‘মরিয়া', কিন্তু ভালমানুষেরা সৎকাজের জন্য "মরিয়া' নহেন ৷ খবরের "গজে নারীনিৰ্য্যাতনের যত খবর বাহির হয়, তাহার অধিকাংশে অত্যাচারী পুরুষরা মুসলমান, নিৰ্য্যাতিতার হিন্দু। কিন্তু হিন্দুরমণীর উপর হিন্দুর অত্যাচার এবং মুসলমান রমণীর উপর মুসলমান পুরুষের অত্যাচারের বৃত্তান্তও মধ্যে-মধ্যে দেখা যায় । বেশীর ভাগ খবরে অত্যাচারীরা মুসলমান, এবং অধিকাংশ খবরের কাগজ হিন্দুদের ; ইহা হইতে মনে হইতে পারে, যে, ব্যাপারটি হিন্দু বনাম মুসলমান । কিন্তু তা নয়। পূর্বেই বলিয়াছি, মুসলমান স্ত্রীলোকের উপরও অত্যাচার হয়। তবে, অত্যাচারীদের মধ্যে মুসলমানের সংখ্যা বেশী বটে ; কোথাও কোথাও তাহারা দল বাধিয়া প্রকাশ্যভাবে দিনেদুপরে হিন্দু নারী হরণ করে ; এবং ইহাও দেখা যায়, যে, যখনই হিন্দু-মুসলমানে মনকষাকষি হয়, যেমন বঙ্গের অঙ্গচ্ছেদ ও স্বদেশী আন্দোলনের সময় হইয়াছিল এবং বর্তমানে “প্যাক্টের’ চাকরী ভাগ লইয়া হইয়াছে, তখনই নারীনিৰ্য্যাতন বাড়ে। ইহার কারণ কি, তাহ দেশহিতৈষী ও মোসলেমসম্প্রদায়-হিতৈষী মুসলমান-নেতারা অনুসন্ধানপূৰ্ব্বক স্থির করিলে ভাল হয়। আমাদের মনে হয়, এইরূপ কুকাজের বিরুদ্ধে মুসলমান-সমাজে লোকমত প্রবল নহে, এমং যথেষ্ট সামাজিক শাসন নাই । এবিষয়ে উন্নতি বাঞ্ছনীয়। কারণ, অত্যাচার দমন না হইলে হিন্দুসমাজের ক্ষতি, মুসলমান-সমাজের ক্ষতি, সমুদয় জাতির ক্ষতি । কোন কোন মুসলমান কাগজে এইধরণের লেথ দেখা যায়,যে,যেহেতু হিন্দু সমাজে অনেক যুবতী বিধবা আছেন, এবং তাহারা অস্থর্যাম্পশু নহেন, সেই কারণে কোন কোন শ্রেণীর মুসলমানদের ছন্দ্রবৃত্তি উত্তেজিত হওয়ায় তাহারা এইরকম কাজ করে । বালিকা ও তরুণীদের চিরবৈধব্যের বিরুদ্ধে আমরা অনেক লিখিয়াছি, ভবিষ্যতেও লিখিব । কিন্তু বিধবার অস্তিত্ব দ্বারা বদমাইসদের কাজ সমর্থিত কিম্বা তাহার গর্হিততার লাঘব হইতে পারে বিবিধ প্রসঙ্গ—নারীনির্য্যাতন ৫৭৩ তাহা হইলে বলিতে হয়, যেহেতু লেঙ্কারের দোকানে মূল্যবান জিনিষ থাকে, সেই জন্যই লোভের বশবৰ্ত্তী হইয়া গুণ্ডারা তাহা লুট করে । এপ্রকার যুক্তিতে দোষটা দুবৃত্ত লোকদের স্কন্ধ হইতে সম্পূর্ণ বা অনেকট। অন্যের স্বন্ধে ফেলা হয় । তা ছাড়া, ইহা সত্যও নহে, যে, কেবল বিধবাদের উপরন্ত অত্যাচার হয় । সধবারাও তাহদের বাড়ী হইতে স্বামী ও অন্যান্য আত্মীয়ের নিকট হইতে হৃত হন । সাত্মীয়দের নারীরক্ষায় অক্ষমতা লজ্জার বিষয় সন্দেহ নাই ; কিন্তু গুণ্ডাদেরও ইহা গৌরবের বিষয় নহে । আমাদের মনে হয়, মুসলমান সমাজে স্বশিক্ষার বিস্তার হইলে কিছু প্রতিকার হইবে । তাহাদের মধ্যে স্ত্রীশিক্ষার বিস্তার হইলে আরো অধিক প্রতিকার হইবে । বহুবিবাহ যে-কোন সমাজে প্রচলিত থাকে, তথায় নারীদের সম্বন্ধে ধারণ হীন হয় । শিক্ষিতা নারীরা ইহা সহ করেন না । এইজন্য স্ত্রীশিক্ষার বিস্তার হইলে বহুবিবাহও কমে ও পরে লোপ পায়। তুরষ্কের লোকের মুসলমান, মুসলমান শাস্ত্র-অনুসাবে বহুবিবাহ করা চলে ; কিন্তু তথাপি স্ত্রীশিক্ষার উন্নতি- ও বিস্তারবশতঃ তুরষ্কে বহুবিবাহ প্রায় উঠিয়া গিয়াছে। স্ত্রীশিক্ষণ হইতে নানা সুফল উৎপন্ন হইবে বলিয়া আমরা সরকারী শিক্ষারিপোর্টে দেখিয়া স্থখী হইয়াছি, যে, মুসলমান সমাজে স্ত্রীশিক্ষার দ্রুত বিস্তৃতি হইতেছে। হিন্দুধৰ্ম্ম-অনুসারে ও হিন্দুসমাজে বহুবিবাহ নিষিদ্ধ নহে । কিন্তু নানা কারণে উহা অপ্রচলিত হইয়া আসিতেছে। মুসলমান-সমাজেও তাহা হইবে। নারীনিৰ্য্যাতন-সমস্তাকে হিন্দু-মুসলমানের ঝগড়ার নূতন একটা কারণ করিলে, হিন্দু বা মুসলমান কাহারও লাভ নাই, অধিকন্তু তাহাতে স্ত্রীলোকদের বিপদ বাড়িবে। জেদ-বশতঃ ছবৃত্তেরা সৰ্ব্বদা অত্যাচারের সুযোগ অন্বেষণ করিবে। লাভের মধ্যে ইংরেজ আমলাতন্ত্রের ক্ষমতা ও সুবিধা বাড়িবে। হিন্দু-মুসলমানের ঝগড়া ব্যাপকভাবে দেশময় বিস্তৃত হইলে হিন্দুরাই নিশ্চিত হারিবে, এমন বলা যায় না। ভারতবর্ষে হিন্দুদের সংখ্যা বেশী, এবং তাহাদের সাহসও