পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ግ«my প্রবাসী—আশ্বিন, ১৩৩১ { ২৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড বিক্রয় করিবার পরামর্শ করিতেছেন শুনিয়া হিমানী বলিল, “আমার দুটে। মল আছে, সেই দুটাে বেচে দাও, ও ত আর কেউ পরবে না। তোমার মাকৃড়ী থাক না, তুমি যে বলছিলে ওগুলো খোকার বউকে দেবে ?” ভ্রাতাকে না জানাইয়া ভাইঝির মল বিক্রয় করা ঠিক হইবে কি না সাবিত্রী হঠাৎ তাহা ভাবিয়া ঠিক করিতে পারিলেন না। হিমানী কি যেন ভাবিয়া লইয়া বলিল, “ও ত আর বাবার জিনিষ নয়, ও আমার মা দিয়েছিলেন।” মা ও বাবার জিনিষের তফাং বুঝাইবার জন্ত সাবিত্রী তখন ব্যস্ত ছিলেন না। অনেক ভাবিয়া তিনি . মলজোড়া বিক্রয় করিয়াই ফেলিলেন। সেবারকার মত হিমানীকে আর মাথা হেঁট করিতে হইল না। পরীক্ষা সে নিৰ্ব্বিয়েই দিল এবং পাশও করিল । দুঃখের বিষয় স্কলারশিপ, সে পাইল না, পাইল বড়লোকের মেয়ে মুকুল। যাক, মৃণাল যে পায় নাই, এই সাস্তুনাতেই সে কোনো প্রকারে দুঃখটাকে সহনীয় করিয়া লইল । পরের বছর অনেক কষ্টে একটা ফ্রি সিটু জোগাড় করিয়া তাহাকে পড়া চালাইতে হইল। স্কুলের গাড়ী ব্যবহার করিতে হইলে মাহিনী ছাড়া আরও দু’টাকা করিয়া দিতে হইত। তাহ দেওয়া সম্ভব হইল না, স্বতরাং গাড়ী ছাড়িয়া তাহাকে হাটিয়া স্কুলে যাইতে হইত। ইহার পর কয়েকটা বছর ঠিক একইভাবে যেন কাটিয় গেল। পিতার অর্থহীনতার অপরাধ সে কিছুতেই ভুলিয়া উঠিতে পারিত না । ইহার ফলে যখন যত বেদন তাহাকে পাইতে হইল, সব ক’টাকে সে মনে চিরজীগন্ধক করিয়া রাখিয়া দিল। দরিদ্র হওয়া তাহার কাছে একটা খুব বড় ক্রটি হইয়াই রহিল, এবং আত্মাভিমানটাও ঘা খাইয়া খাইয় তাহার মধ্যে অস্বাভাবিকরকম উগ্র হষ্টয়া উঠিল। তাহার ভিতর স্বভাবতঃ মাধুর্ঘ্য বা লালিত্যের অভাব ছিল না, কিন্তু তাহা এমনভাবে আত্মগোপন করিয়া রহিল, যে, উহাদের অস্তিত্ব সম্বন্ধে বিশেষ কোনো অঙ্গর প্রমাণ পাওয়া গেল না । 品 - 影 - پیسہ بھجن3.شعہ’’ সে ম্যাটিকুলেশন পাশ করিয়া কলেজে পড়িবার চেষ্টা “করিল, কিন্তু অর্থাভাবে তাহাকে কলেজে না ঢুকিয়া ট্রেনিং ক্লাশে ঢুকিতে হইল। ইতিমধ্যে তাহার সমপাঠনীর দল কেহ বা বিবাহ করিয়া সংসার করিতে গেল, কেহ বা কলেজে চুকিল। মুকুল আর মৃণাল ছিল তাহার সব চেয়ে বন্ধু । মুকুল পরীক্ষায় খুব উচ্চস্থান অধিকার করিয়া সগৰ্ব্বে কলেজে পড়িতে গেল, মৃণাল শরীর খারাপের ছুতা করিয়া পড়া ছাড়িয়া বাড়ীতে বসিয়া রহিল । স্কুল হইতে বাড়ী ফিরিয়া একদিন সে শুনিল, মুণালের নাকি বিবাহের আয়োজন হইতেছে, আজ তাহাকে সন্ধ্যার সময় একজনরা দেখিতে আসিবে । হিমানী অবাকৃ হইয়া বলিল, "বুড়ে মেয়েকে দেখতে আসবে।" আবার! ও কি কচি খুকী যে মুখে পাউডার মেখে আর সি দুর-টপ কেটে দেখা দিতে বেরবে। ওর লজ্জা করবে না ?” সাবিত্ৰী বলিলেন, “হিন্দু-ঘরের মেয়ের আবার ওদিকে লজ বলে’ কিছু আছে নাকি ? সোনা-রূপোর জিনিষের মত কত লোকে যাচাই করে দেখবে, তার পর কারো যদি মনে ধরে, তখন তার ঘরে যাবে।” হিমানী বলিল, “তাই বলে’ আঠারো-উনিশ বছরের মেয়ে—” বাধা দিয়া সাহিত্রী বলিলেন, “হ্যা, ওর মূখে ওর বয়স লেখা থাকবে কি না ? চোদ-পনেরো বলে’ চালিয়ে দেবে।” - মৃণালদের বাড়ী খুবই কাছে। তাড়াতাড়ি-হাতমুখ ধুইয়া, দুই টুকরা রুটি কোনোরকমে গিলিয়া হিমানী বলিল, “ছোটপিসি, একটু দেখে আসি ওরা মৃণালটাকে কেমন সং সাজাচ্ছে।” পিসীর অনুমতিৰ অপেক্ষ না করিয়াই সে দুড়দুড় করিয়া সিড়ি বাহিয়া নামিয়া গেল । R, মৃণালের সাজসজ্জা তখনও আvস্থ হয় নাই। সে হাত-মুখ ধুইতে স্বানের ঘরে গিয়াছে। হিমানী তাহার . ঘরে ঢুকিতেই মৃণালের মা হাসিয়া বলিলেন, “এই যে হিমু, বন্ধুর বিয়ের নাম শুনেই ছুটে এসেছ দেখছি।”