পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা ] বায়ুমণ্ডলে হিলিয়াম ও তাহার ব্যবহার ۹ oسb কাচ লইয়া বিবিধ রশ্মির আলোকপথ পরিবর্তনের পরিমাণ স্থির করিতে গিয়া জাৰ্মাণ পণ্ডিত জোসেফ* ফন হোফার সৌর বর্ণচ্ছত্রের মধ্যে কৃষ্ণ রেখা আবিষ্কার করেন । এই বিখ্যাত পণ্ডিত কেবল কৃষ্ণ রেখা অাবিস্কার করিয়াই ক্ষান্ত হন নাই, তিনিই প্রথম প্রচার করেন যে, সাধারণ স্বৰ্য্যালোক চন্দ্রাদি গ্রহউপগ্রহ ও নক্ষত্ৰাগত প্রতিফলিত আলোকে এই কৃষ্ণ রেখাগুলির স্থান নির্দিষ্ট ও অপরিবর্তনীয়। ফন হোফার কিন্তু কৃষ্ণ রেখাসমূহের উপস্থিতির মূল কারণ নির্দেশ করিতে পারেন নাই। এইত গেল সূৰ্য্যালোকের কথা । অপর আলোকও বিশ্লিষ্ট হইলে বর্ণচ্ছত্র উৎপন্ন হইয়া থাকে। কিন্তু যে সকল মৌলিক বর্ণ রশ্মি সংযোগে স্থৰ্য্যালোক উৎপন্ন হয় তাহার সকলগুলি উহাতে এক সঙ্গে উপস্থিত থাকে না । - বর্ণচ্ছত্র দ্বারা পদার্থের প্রথম সার জন্‌ হার্শেল ও ফক্স, ট্যালবট, এই পণ্ডিতযুগল প্রচারিত করিয়াছিলেন । ১৮২২ খৃষ্টাব্দে হার্শেল সাহেব বিবিধ জীবন্ত পদার্থের বর্ণচ্ছত্র পরীক্ষায় নিযুক্ত হন এবং প্রত্যেক পদার্থের বর্ণচ্ছত্রের নির্দিষ্টস্থলে এক-একটি স্থূল বর্ণ-রেখা দেখিয়া এই নির্দিষ্ট রেখাগুলিকেই দাহ্য পদার্থের প্রকৃতিজ্ঞাপক বলিয়। স্থির করেন। সোডিয়ামযুক্ত পদার্থের বর্ণচ্ছত্ৰে সৰ্ব্বদা দুইটি বিশিষ্ট স্থানে পীতরেখা *fco ( (D1 and D2 line of sodium) so পোটাশিয়াম-যুক্ত পদার্থের বর্ণচ্ছত্ৰে সৰ্ব্বদা ভায়োলেট, রঙের কয়েকটি রেখা দৃষ্ট হয়। কাজেই দেখা যাইতেছে যে বর্ণচ্ছত্রস্থ স্থির রেখাগুলি পরিদর্শন করিয়া মূল পদার্থের প্রকৃতি নির্ণয় ও অতি জটিল পদার্থের গঠনোৎপাদনও নির্দেশ করা যায়। সোডিয়াম, পোটাসিয়াম্ প্রভৃতি ধাতু সাধারণ দীপ-শিখায় সহজেই বাস্পীভূত ও প্ৰজলিত হয়, এইজন্য ইহার বর্ণচ্ছত্র অতি সহজেই প্রাপ্ত হওয়া যায়, কিন্তু অপর পদার্থ অল্প তাপে বাষ্পীভূত ও প্ৰজলিত করা অতি কষ্টসাধ্য বলিয়া বিবেচিত হওয়ায় এপর্যন্ত সাধারণ বিশ্লেষণ-কার্ধ্যে ব্যবহৃত হইত না ; কিন্তু আজকাল বৈদ্যুতিক প্রবাহ ও অক্সি-হাইড্রোজেন দ্বীপ-শিখার সাহায্যে এইসকল কাৰ্য্য সম্পন্ন হইতেছে, এজন্য এই প্রকৃতি নির্ণয়ের কথা সৰ্ব্ব o অভিনব বিশ্লেষণ-প্রথা সৰ্ব্বাপেক্ষ সরল বলিয়া আদৃত হইতেছে। বর্ণচ্ছত্র দ্বারা কেবল যে পদার্থ বিশ্লেষণের স্বযোগ হইয়াছে তাহ নয়, ইহা দ্বারা কয়েকটি নূতন ধাতুও আবিষ্কৃত হইয়াছে। পোটাসিয়াম্ ধাতুর বর্ণচ্ছত্রে বর্ণরেখা নিরূপণ-কালে কয়েকটি অদৃষ্টপূৰ্ব্ব বর্ণরেখা দেখিয়া নিশ্চয়ই উহা কোন বিজাতীয় পদার্থ-যোগে উৎপন্ন হইয়াছে স্থির করিয়া বুনসেন এই বর্ণোৎপাদক পদার্থটিকে পৃথক্ করিবার চেষ্টা করেন এবং ইহার এই চেষ্টার ফলে রুবিডিয়াম ও সিজিয়াম্ নামক দুইটি নূতন ধাতুর আবিষ্কার হয়। এইরূপেই বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক ক্রুকুস থ্যালিয়াম, বয়স বান্দ্রে। ইণ্ডিয়াম ও ফ্রেনবার্গ, গ্যালিয়াম নামক ধাতু আবিষ্কার করেন। পূৰ্ব্ব বর্ণিত সৌরবর্ণ-ছত্ৰস্থ কৃষ্ণরেখা উৎপাদনের প্রকৃত কারণের আভাসও হার্শেল সাহেব সৰ্ব্বপ্রথম প্রচারিত করেন । তিনি দেখান যে, প্রত্যেক বাম্পের যেরূপ বর্ণচ্ছত্রের মধ্যে নির্দিষ্ট বর্ণরেখা প্রকাশ করিবার ক্ষমতা আছে, সেইরূপ প্রত্যেক বাম্পের আবার নির্দিষ্ট রশ্মি হয়ণ করিবার ক্ষমতা আছে । বিজ্ঞানামুরাগী পাঠক পরিষ্কার জানেন যে, আমরা সচরাচর যেসকল পদার্থ প্রত্যক্ষ করি, তাহার। তাহাদের বর্ণ স্থধ্যালোক হইতেই প্রাপ্ত হয়। শুভ্রালোক ঐসকল পদার্থে পতিত হইলে প্রাকৃতিক ধৰ্ম্মানুসারে ইহার আলোকস্থ কতকগুলি বর্ণরেখা হরণ করে ও হৃতাবশিষ্ট রশ্মিগুলি প্রতিফলিত করে—এই প্রতিফলিত রশ্মিদ্বারা আমরা পদার্থগণকে তত্তংবর্ণবিশিষ্ট দেখিতে পাই । লোহিত বর্ণের কাচখণ্ড লোহিত ব্যতীত পীত, বেগুনিয়া প্রভৃতি শুভ্রালোকের অদ্যান্য বর্ণ হরণ করে এবং কেবলমাত্র লোহিত বর্ণ প্রতিফলিত করে, এজন্য আমরা ঐ কাচখণ্ডকে লোহিত বর্ণ দেখি স্বর্ষ্যের মধ্যে প্ৰজলিত হাইড্রোজৈন, লৌহ প্রভৃতি অনেক ধাতু আছে। স্বর্ষ্যের অভ্যন্তরস্থ আলোকরশ্মি যখন এইসকলের মধ্য দিয়া পৃথিবীতে আসিয়া উপস্থিত হ, তখন এই সকল প্ৰজলিত বাষ্পরশ্মি স্বীয় প্রকৃতি-অহসারে কতকগুলি রশ্মি ইরণ করিয়া লয় এবং এইজন্ত কৃষ্ণরেখা অর্থাৎ লুপ্ত রেখা উৎপন্ন হয়।