পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমেরিকায় ব্যাঙ্কিং সঙ্কট শ্রীযোগেশচন্দ্র সেন, গত ৪ঠা মার্চ আমেরিকার নবনিৰ্ব্বাচিত প্রেসিডেণ্ট রুজভেল্ট স্বীয় পদে অভিষিক্ত হইতে-না-হইতেই তথায় ‘দারুণ ব্যাঙ্কিং এবং আর্থিক সঙ্কট উপস্থিত হইয়াছে। পৃথিবীর এক-তৃতীয়াংশ স্বর্ণ যে-দেশের কোষাগারে আবদ্ধ, যে-দেশ শিল্প-বাণিজ্যে অসাধারণ উৎকর্ষ লাভ করিয়াছে, যাহার শিল্প-কৌশল সকলের অনুকরণীয়, ব্যবহারিক জ্ঞানে এবং ধনে যে-দেশ অদ্বিতীয় বলিয়া খ্যাত —এহেন দেশের যে এরূপ অবস্থা হইবে তাহা কল্পনারও অতীত। তাহার ইতিহাসে এরূপ কঠিন ব্যাঙ্কিং সঙ্কট পূৰ্ব্বে কখনও উপস্থিত হয় নাই। যুক্তরাজ্যের অন্তর্গত আটচল্লিশটি ষ্টেটই এবং ডিষ্ট্রিক্ট অফ কলম্বিয়ার সমস্ত ব্যাঙ্ক লেন-দেন বন্ধ করিয়াছিল। প্রেসিডেন্ট রুজভেণ্ট ঘোষণা করিয়াছিলেন যে, আমেরিক হইতে স্বর্ণ এবং রৌপ্য রপ্তানি হইতে পারিবে না, তদুপরি আরও নিয়ম করা হইয়াছিল যে, ব্যাঙ্ক পরস্পরের দেনা-পাওনা মুদ্রার দ্বারা নয়, পরন্তু ক্লিয়ারিং হাউস লোন সার্টিফিকেট দ্বারা পরিশোধ করিবে । কেহ স্বগৃহে মুদ্র অথবা নোট সংগ্ৰহ করিয়া রাখিতে পারিবে না এবং বিদেশীয়দের প্রাপ্য স্বর্ণ ব্যাঙ্ক ভিন্ন তহবিলে পৃথক করিয়া রাখিতে পারিবে না। ক্লিয়ারিং হাউস সার্টিফিকেট আমেরিকার একটি নিজস্ব আবিষ্কার। ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাঙ্কের যোজনা হওয়ার পূৰ্ব্বেও প্রায় প্রত্যেক ব্যাঙ্কই ক্লিয়ারিং হাউসের মেম্বর হইত। ইহার উদ্বেগু এই যে, ব্যাঙ্কগুলি পরস্পরের দেনা-পাওনা যেন সহজে এবং মুদ্রার অ্যদান-প্রদান না করিয়া মিটাইতে পারে। পূর্বে প্রত্যেক মেম্বর-ব্যাঙ্ককেই ক্লিয়ারিং হাউসে স্বর্ণ মজুত রাখিতে হইত এবং তৎপরিবর্তে স্বর্ণের পরিমাণ অনুসারে ৫,• • • কিম্বা ১০,০০০ ডলারের ক্লিয়ারিং হাউস সার্টিফিকেট পাইত। প্রত্যেক মেম্বর-ব্যাঙ্ক অন্ত ব্যাঙ্কের উপর যে-সব চেক্‌ জমা পায় সেগুলি লইয়া ক্লিয়ারিং হাউসে উপস্থিত হয় । চেকের আদান-প্রদান করিয়া যদি দেয় বেশী হয় তাহা হইলে ক্লিয়ারিং হাউস সাটিফিকেট অথবা নগদ টাকা দ্বারা পরস্পরের জেনা চুকাইয়া দেয়। এরূপ করাতে একপয়সারও বিনিময় ব্যতীত লক্ষ লক্ষ টাকার জমা খরচ হইয়া যায়। ইহাই হুইল ক্লিয়ারিং হাউস সার্টিফিকেটের মুখ্য উদ্দেশ্য। ফেডারেল রিজার্ত ব্যাঙ্ক স্থাপনার পর হইতে ক্লিয়ারিঙের কাজ উহাদের মারফতেই হইয়া থাকে। প্রত্যেক মেম্বর-ব্যাঙ্ক তথায় চলতি খাতা রাখে এবং যাহাদের প্রাপ্য অপেক্ষা দেয় অধিক হয় তাহারা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের উপর চেক্ দ্বারা দেন মিটাইয় দেয় । U বি-এ ( হারভার্ড ) আমেরিকায় যখনই ব্যাঙ্কিং সঙ্কট উপস্থিত হইয়াছে, তখনই প্রাপ্য টাকা ন দিতে পারিয়া যাহাতে ব্যাঙ্ক ফেল না পড়ে সেজন্ত ক্লিয়ারিং হাউস লোন সার্টিফিকেট দ্বারা ব্যাঙ্কসকল পরস্পরের দেনা-পাওনা শোধ করিয়াছে । সকলেই জানেন, ব্যাঙ্ক ষে আমানত গ্রহণ করে উহার অধিকাংশ ভাগই লগ্নি করা হয়। যদি একই সময়ে সকলে টাকা উঠাইতে চায় তাহা হইলে ব্যাঙ্কের পক্ষে দেওয়া অসম্ভব । অথচ ব্যান্ধের মূল্যবান সম্পত্তি থাকে ৷ এই অবস্থায় সঙ্কটের সময় আমেরিকার ব্যাঙ্ক শেয়ার, বণ্ড এবং কমার্শিয়াল পেপার অর্থাৎ দস্তাবেজী বিল ক্লিয়ারিং হাউসে জমা রাথে এবং সেগুলির মূল্যের তিন-চতুথাংশ পরিমাণ তাহাদিগকে ক্লিয়ারিং হাউস লোন সার্টিফিকেটু দেওয়া হয়। লোন সার্টিফিকেট ব্যাঙ্কের পরস্পর দেনা-পাওনা মিটান ছাড়া অন্ত কাজে ব্যবহৃত হয় না । সার্টিফিকেট দ্বারা যে ঋণ গ্রহণ করা হয়, উহার স্বদের হার অত্যন্ত উচ্চ হওয়াতে প্রয়োজনাতিরিক্ত বেশী দিন কেহ তাহা অনাদায় রাখে না । যখনই আমেরিকার আর্থিক এবং ব্যাঙ্কিং সঙ্কট উপস্থিত হইয়াছে তখনই সেখানে ক্লিয়ারিং হাউস লোন সার্টিফিকেটের প্রচলন হুইয়াছে। প্রথম ইহার প্রচলন হইয়াছিল ১৮৬০ সালে । তৎপর ১৮৬১, ১৮৬৩, ১৮৮৪, ১৮৯০, ১৯০৭, ১৯১৪ এবং বর্তমানে ইহার প্রচলন হইয়াছে। সঙ্কটের সময় যাহাতে মুত্রার আদান প্রদান কম হয় সেই উদ্দেশ্যেই এই সাটিফিকেটু ব্যবহৃত হয় । ১৯৩১ সালের অক্টোবর মাসে যখন ব্রিটেন স্বর্ণমান স্থগিত করে তখন ভারতবর্ষে তিন দিন সমস্ত ব্যাঙ্ক বন্ধ রাখা হইয়াছিল। আমেরিকায়ও প্রথম ৬ই মার্চ হইতে ৯ই মার্চ পৰ্য্যন্ত এবং পরে ১৫ই মার্চ পৰ্য্যস্ত, মোট দশ দিন সমস্ত ব্যাঙ্ক বন্ধ রাখা হইয়াছিল। দশ দিন পরেও সমস্ত ব্যাঙ্ক খোলা হয় নাই, শুধু যেগুলি স্বদূঢ় বলিয়া বিবেচিত উহারাই কাৰ্য্য করিবার অনুমতি পাইয়াছে। স্বর্ণ রপ্তানি বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডলারের সহিত অস্কান্ত মুদ্রার বিনিময়ের হার নির্ণয় করাও বদ্ধ করা হইয়াছিল। কতকগুলি ব্যাঙ্ক কারবার আরম্ভ করাতে পুনরায় মুদ্র বিনিময়ের পূর্বের হারই বজায় রহিয়াছে। ইহা হইতে ইহাই প্রতিপন্ন হয় যে, আমেরিকা স্বর্ণমান পরিত্যাগ করিবে না । কেন-না, স্বর্ণ রপ্তানি একেবারে বন্ধ করিলে স্বর্ণমান স্থগিত হইবেই। তবে পূর্বের দ্যায়, অবাধে আমেরিকা হইতে স্বর্ণ রপ্তানি হইতে পারিবে না,