পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\OSS গ্রাম হইতে অল্প দূরে ক্ষুদ্র নদী। নদীর তীরে শ্মশান। চিতা সজ্জিত হইলে সরোজিনীর মৃতদেহ তাহার উপর রক্ষিত হইল। একথান চেলাকাঠের অগ্রভাগ তাহার পৃষ্ঠে বিদ্ধ হইল তাহ কেহ লক্ষ্য করিল না। সরোজিনী জীবিত থাকিলে বেদনা অনুভব করিত। উমেশ চুড়া জালিয়া শবের মুখাগ্নি করিবেন এমন সময় দেখেন শব চক্ষু উন্মীলন করিয়া বিস্ময় বিস্ফারিত দৃষ্টিতে র্তাহার মুখের দিকে চাহিয়া আছে ! অঁ্য-স্ট্র্যা-আঁ্যা শব্দ করিয়া উমেশ পিছাইয়া পড়িলেন। র্তাহার হাতের প্রজলিত তুণগুচ্ছ মাটিতে পড়িয়া গেল। র্তাহার সৰ্ব্বাঙ্গ ঠক-ঠক করিয়া কঁাপিতে লাগিল । যাহারা পাশে দাড়াইয় ছিল তাহারী কিছু বুঝিতে পারিল না, বিস্মিত হইয়। উমেশকে জিজ্ঞাসা করিল--কি হয়েচে ? আপনি এমন ভয় পেয়েচেন কেন ? উমেশকে উত্তর দিতে হইল না। সরোজিনী চিতার উপর উঠিয়া বসিয়৷ পৃষ্ঠদেশে হাত বুলাইতে লাগিল। যাহারা চিতার কাছে দাড়াইয়া ছিল তাহার। চীৎকার করিয়া সরিয়া গেল । সরোজিনীর সম্পূর্ণরূপে চৈতন্তোৎপাদন হয় নাই। মাথায় কাপড় টানিয়া দিতে তাহার প্রথমে মনে পড়িল না । অঙ্গে আঘাত লাগিতেছে বলিয়া সে চারিদিকে চাহিয়৷ দেখিল। পরে চিত হইতে নামিয় দাড়াইল । সরোজিনীর চক্ষের জড়িমা অপস্থত হইল। সে কহিল— আমাকে চিলুর উপর গুইয়েছিল কেন ? আমি কি মরে গিয়েচি ? তাহার পর অনেক লোক দাড়াইয়া আছে দেখিয়া সরোজিনী মস্তক ও মুখ অবগুষ্ঠিত করিল। যাহারা দাড়াইয় দেখিতেছিল তাহদের মধ্যে এ-পর্য্যন্ত কাহারও বাকাজুৰ্ত্তি হয় নাই। সহসা একজন চীৎকার করিয়া উঠিল-ওকে দানোয় পেয়েচে । ওকে চিলুতে ফেলে আগুন ধরিয়ে দাও। অমনি অপর লোকের সমস্বরে বলিয়া উঠিল,—দানোয় পেয়েচে । দানোয় পেয়েচে । কয়েক জন যুবক সাহস করিয়া সরোজিনীকে বলপূৰ্ব্বক চিতায় নিক্ষেপ করিবার জন্য অগ্রসর হইল । গ্রামের চৌকিদার লাঠি হাতে করিম দাড়াইয়া দেখিতেছিল। SOBO সে হাকিম৷ বলিল,- দানোয় পাক আর যাই হোক, তোমরা কি জ্যান্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারবে ? তোমাদের সবাইকে ধ’রে থানায় নিয়ে যাব, জান না ? থানার নাম শুনিয়াই সকলে পিছাইল । আর কোন কথা না বলিয়। সকলে গ্রামের অভিমুখে ফিরিয়া চলিল । সরোজিনীও তাহদের পশ্চাতে যাইবার উপক্রম করিতেছিল, এমন সময় উমেশ সভয়ে চীংকার করিয়া বলিলেন;– আরে কি সৰ্ব্বনাশ দামোয় পেয়ে কি আবার বাড়িতে ঢুকবে না কি ? চল, চল, সব বাড়ির দরজা বন্ধ করে দেবে। আজ রাত্রে কেউ দোর খুলে না, কি জানি কার উমেশের কথা শুনিয়া সরোজিনীর পা আর চলিল না । সে পাষাণ মূৰ্ত্তির ন্যায় স্থির হইয়া রহিল । দেখিতে দেখিতে শ্মশান জনশূন্য হইল। সরোজিনী ব্যতীত জনমন্ত্য রহিল না। \$,9 সাম্রাহ্নের স্বৰ্য্য অস্তমিত হইতেছে । আকাশ গোধূলি রাগে রঞ্জিত হইয়াছে। বায়ুর বেগ মন্দীভূত হইয়৷ আসিতেছে। নদীস্রোতের স্নিগ্ধ কল কল ছল ছল শব্দ, চারিদিকে নীড় গমনোন্মুখ পক্ষীর কুজন। সেই সান্ধ্য শান্তির মধ্যে নিম্পন্দ হইয় দাড়াইয়৷ একাকিনী রমণী ! সে নিম্পন্দতা শাস্তির স্থিরতা নহে, বজ্রাঘাতের ভস্মীভূত জড়ত। অনেকক্ষণ সরোজিনী কিছু বুঝিতে পারিল না, কিছু ভাবিতে পারিল না। ক্রমে চিত্তবৃত্তি ফিরিয়া আসিল। তাহার কি হইয়াছে ? সে গৃহস্থের বধু, সন্ধ্যার সময় সে একাকিনী শ্মশানে দাড়াইয়। কেন ? উমেশের কথায় সে বুঝিয়াছিল যে শ্বশুর-বাড়িতে তাহার আর স্থান নাই। তবে সে কোথায় যাইবে ? বাপের বাড়ি ? সেখানে কি সে আশ্রয় পাইবে, না তাহাকে দেখিয়া বাপের বাড়িরও স্বার রুদ্ধ হইবে ? সে কি মরিয়া গিয়াছিল যে তাহাকে শ্মশানে আনিয়া, চিতায় শয়ন করাইয় তাহার মুখাগ্নি করিবার উদ্যোগ হইতেছিল ? সেই যে সরলাকে বলিয়াছিল তাহার মাথা কেমন করিতেছে তাহার পর আর কিছু স্মরণ নাই। যখন তাহার চৈতন্য হইল তখন তাহার পৃষ্ঠে বেদন, কে যেন