পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আষাঢ় शूलपॆ्रबच BAC সরলা বলিল,—এই মাত্র ছোট বউ আমাকে বললে ওর কয়েকটা ঔষধ ও পাচন সংগ্রহ, বায়ু পিত্ত কফের প্রকোপ মাথা কেমন করচে। ব’লেই অজ্ঞান হয়ে গেল । পিসিম বলিলেন---কেন কিছুর দিষ্টি লাগে নি ত ? যোগেশের মা সরোজিনীর পাশে বসিয়া, তাহার গায়ে হাত দিয়া, তাহাকে নাড়াচাড়া দিয়া বলিলেন,-কি হয়েচে, বউ-মা ? অমন ক’রে রয়েচ কেন ? সরোজিনীর মুখে কথা নাই। সৰ্ব্বাঙ্গ স্থির, চক্ষু নিমীলিত, নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস বহিতেছে না। উমেশ বাহিরের রোয়াকে বসিয়া তামাক খাইতেছিলেন। গোলমাল শুনিয়া, ইক রাখিয়া, খড়ম-পায়ে তিনিও আসিলেন। জিজ্ঞাসা করিলেন,~—এত চেঁচামেচি কিসের ? কি হয়েচে ? তাঙ্গর ভগিনী বলিলেন,-ছোট বউ হঠাৎ অজ্ঞান হয়েচে, ডাকলে সাড়া দিচ্চে না। কি জানি কি হয়েচে । রোজ ডেকে পাঠাও। উমেশ তাচ্ছিল্য ভাবে বলিলেন,- হ্যা, তোমাদের সব তাতেই রোজ ডাক। রোজ কি করবে ? দাতকপাটি লেগেচে, মুখে জলের ঝাপটা দাও, সেরে যাবে। সরল তাড়াতাড়ি এক ঘটি জল লইয়া আসিল । যোগেশের ম সরোজিনীর মুখে কয়েক বার জলের ঝাপটা দিলেন। সরোজিনীর মুখের ভিতর আঙুল দিয়া চুপি চুপি ননকে বলিলেন,—ঠাকুরঝি, কই, দাতে ত দাত লাগে নি, মুখ খোলা রয়েচে । ভাস্করের সাক্ষাতে- যোগেশের মা জোরে কথা কহিতে পারিলেন না । জলের ঝাপটায় কোন ফল হইল না। আলুলায়িতকেশী, নিমীলিতনমুনা সুন্দরী নিম্পন্দ রহিল। উমেশ বলিলেন,-তোমরা গোল করো না, আমি কবিরাজ-মশায়কে ডেকে আনচি । উমেশ কবিরাজ ডাকিতে গেলেন। যোগেশের ম৷ অঞ্চল দিয়া মূচ্ছিত পুত্রবধুর কেশ মুখ মুছাইয়া দিলেন, তাহার পর তিন জনে ধরাধরি করিয়া তাহাকে শয্যায় শয়ন করাইলেন। গ্রামে চিকিৎসকের মধ্যে এক প্রাচীন হাতুড়িয়া বৈদ্য। পড়াশুনা কিছুই নাই, পুরুষাঙ্কমে চিকিৎসা ব্যবসা। আবৃত্তি করা অভ্যন্ত ছিল। উমেশের সঙ্গে কবিরাজকে আসিতে দেখিয়া পাড়ার কয়েকজন স্ত্রী-পুরুষ আসিয়া জুটিল। পুরুষেরা বাড়ির বাহিরে দাড়াইয়া রহিল, স্ত্রীলোকেরা বাড়ির ভিতর প্রবেশ করিল। কবিরাজ উমেশের সঙ্গে ঘরের ভিতর গিয়া সরোজিনীকে দেখিলেন । সরোজিনীর নাড়ী দেখিয়া কহিলেন,—আমি আর কি করব ? হয়ে গিয়েচে । নাড়ী নেই । ঘরের বাহিরে আসিয়া কবিরাজ আর দাড়াইলেন না, বাড়ি চলিয়া গেলেন। উমেশ ঘরের মধ্যে স্তজিত হুইয়া দাড়াইয়া রহিলেন। তাহার পর বাহিরে আসিয়া শুকমুখে কহিলেন– কবিরাজ আর কি করবে ? হয়ে গিয়েচে । গৃহে ক্রনীনের রোল উঠিল। ওগো আমাদের কি হ’ল গো! বলিয়া পিসিমা চীৎকার করিয়া কাদিয়া উঠিলেন। যোগেশের মা মাটিতে পড়িয়া রোদন করিতে লাগিলেন । সরল ফু পাইয়া ফু পাইয়া কাদিতে লাগিল। সরোজিনীর শয্যার পাশে দাড়াইয় এক বৃদ্ধ তাহার স্থির মূৰ্ত্তি দেখিতেছিলেন। চক্ষের জল মুছিয়া বলিলেন-- যেন দুর্গ-ঠাকুরুণের প্রতিমা ! মুখের ভাব একটুও বদলায় নি, ঠিক যেন ঘুমিয়ে রয়েচে। দেখলে কে বলবে মরে গিয়েচে। নিদ্রা না মহানিদ্ৰা ? পাড়ার আরও লোক জড় হইল। গ্রামবুদ্ধের উমেশকে বলিলেন- যা হবার তা হয়ে গিয়েচে, ভবিতব্য কে খণ্ডন করতে পারে ? তুমি আর ভেবে কি করবে, এখন সংকারের ব্যবস্থা কর । উমেশ বলিলেন,-আমার ত বুদ্ধিমুদ্ধি লোপ পেয়েচে, ঘ করবার তোমরাই কর । —বেশ ত, তুমি স্থির হও, আমরাই সব আয়োজন করচি । তাহাদের আদেশে কয়েক জন ব্রাহ্মণ যুবক সকল ভার গ্রহ করিল। বাড়ির ভিতর সরোজিনীর মৃতদেহ ভূতলে স্থাপিও হইল । তাহাকে চওড়া লালপেড়ে কোরা শাড়ী পরিধান করানো হইল। সরল কাদিতে কাদিতে তাহার পায় আলতা মাথায় সিলুর পরাইয়া দিল। যুবকেরা শবের জন্ত একখানি ছোট খাট জানিয়াছিল। শব বাহির করিয়া লইয়া যাইবার সময় গৃহে রোদনের উচ্ছ্বাস উঠিল ।