পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আষাঢ় তাহার মুখে আগুন দিতে আসিতেছে। পরে বুঝিল সে উমেশ । সরোজিনীকে কি সত্য সতাই দানোয় পাইয়াছে ? সে ত পূৰ্ব্বে যেমন ছিল এখনও সেইরূপ আছে, তবে সকলে এমন কথা কেন বলিল ? তাহার শরীরের কি মনের কোন বিকার হয় নাই, কোন পরিবর্তন হয় নাই। তবে তাহাকে কেন গৃহবহিষ্কৃত করিয়া তাহার ভয়ে সকলে বাড়ির দরজা বন্ধ করিবে ? শ্মশানে জনপ্রাণী নাই, সরোজিনী এক দাড়াইয়া ভাবিতে লাগিল। তাহার কি অপরাধ ? সে কি করিয়াছে যে কারণে তাহাকে শ্মশানে রাখিয়া সকলে চলিয়। গেল ? সরোজিনী বুঝিতে পারিল তাহার অপরাধ সে মরিয়াও মরে নাই। যে একবার মরে সে আবার বাচিয়া উঠিলেও গৃহসংসারে তাহার আর ঠাই নাই। যদি চৌকিদার না থাকিত তাহ হইলে গ্রামের লোক তাহাকে জোর করিয়া পুড়াইয়৷ মারিত। ঘরে যদি তাহার আর স্থান না রহিল তাহা হইলে সে কোথায় থাকিবে ? শ্মশানবাসিনী হইবে ? সরোজিন স্থির করিল, মরণ ছাড়া তাহার অন্য উপায় নাই। সম্মুখে নদী। নদীতে ডুবিয়া মরিবে । ঘোর-ঘোর হইয়৷ আসিয়াছে । আকাশে তারা উঠিয়াছে, মাথার উপর দিয়া বাদুড় উড়িয়া যাইতেছে। সরোজিনী ধীরে ধীরে নদীর অভিমূপে চলিল। তাহার পিছনে আর এক জন আসিতেছে তাহ। লক্ষ্য করে নাই । সে জলে নামিবার উপক্রম করিতেছে এমন সময় পশ্চাৎ হইতে নারীকণ্ঠে কে বলিল,--- হঁ্যাগা, বাছা, ভর সন্ধোবেল কি জলে নামতে আছে ? সরোজিনী অপরাধীর ন্যায় থমকিয় দাড়াইল। যে কথা কহিয়াছিল সে সরোজিনীর পাশে আসিয়া দাড়াইল। তাহাকে দেখিয়া সরোজিনী চিনিল—বাম। বাম জাতিতে কৈবৰ্ত্ত, বিধবা, আধাবম্বসী । সময়ে সময়ে সরোজিনীর শ্বশুর-বাড়িতে তরি-তরকারী দিয়া যাইত। সে ভূত-প্রেতের ভয় করে ন, গ্রামের লোকের চেচামেচি শুনিয়া শ্মশানে সরোজিনীর অন্বেষণে আসিয়াছিল । সরোজিনীকে নদীর দিকে যাইতে দেখিয়াই তাহার অভিপ্রায় বুঝিতে পারিয়াছিল। কাছে আসিয়া বলিল,—বউদিদি, কি করচ ? তুমি এখানে কেন ? শুষ্ক মুখে শুষ্ক চক্ষে সরোজিনী বলিল,—আর কোথায় शूबजौबञ veృగి যাব ? আমার ত আর কোথাও ঠাই নেই, ডুবে মলেই সব যন্ত্রণা ফুরোবে। —বালাই, বউদি, অমন কথা মুখে আনতে নেই। কোথকার এক হাতুড়ে কবিরাজ, তার কথায় এমন কাজ করতে হয় : দানে-টানে কিছু নয়, তুমি অজ্ঞান হয়ে গিয়ে থাকবে, তাই নিয়ে এত কাণ্ড ! তুমি আমার সঙ্গে বাড়ি চল। তখন সরোজিনী কাদিয়া ফেলিল। তাহার দুই চক্ষু বহিয়৷ অজস্র অশ্রধারা বহিতে লাগিল। কাদিতে কঁাদিতে বলিল, কোথায় যাব বামা ? আমার কি বাড়িঘর আছে, না আমাকে কেউ ঘরে ঢুকতে দেবে ? আমায় যে দানোয় পেয়েচে ! —ওদের যেমন কথা ! তুমি আমার বাড়ি চল, তোমার সব আলাদা করে দেব । দু-দিন পরে ত দাদাবাবু আসবে, তখন আর কোন গোল থাকবে না । - সরোজিনী নীরবে রোদন করিতে করিতে বামার সঙ্গে তাহার বাড়ি গেল। দিব্য খট-ঘটে ঘর, ঘরে তক্তপোষ পাতা ছিল । বাম বলিল, --বাইরে ইঁট দিয়ে উনান পেতে দিচ্চি, কোর হাড়ি কুমোরঘর থেকে এনে দিচ্চি, তুমি রোধে খাও। সে রাত্রে সরোজিনী কিছুতেই পাক করিতে স্বীকার করিল না। বাম গম্বুল-বাড়ি হইতে দুধ লইয়া আসিল, অনেক পীড়াপীড়িতে সরোজিনী সেই দুধটুকু পান করিম। শয়ন করিল। বাম মাটিতে মাদুর পাতিয়া শুইয়৷ পড়িল । S উমেশ বাড়ি ফিরিবার পূৰ্ব্বেই সরোজিনীর অদ্ভুত বৃত্তান্ত গ্ৰামময় রাষ্ট্র হুঙ্গয় গিয়াছিল। তিনি বাড়িতে ফিরিয়া দেখেন কান্নাকাটি থামিয়া গিয়াছে, স্ত্রীলোকের ভয়ে জড়সড় হইয়া রহিয়াছে। সরলার মাথায় ঘোমটা, যোগেশের মা মাথায় অল্প কাপড় টানিয়া দিয়াছেন। উমেশের ভগিনী ভয়ে আড়ষ্ট, চক্ষু কপালে উঠিয়াছে। তিনি বয়সে উমেশের অপেক্ষ বড়। তিনি বলিলেন,—কি হয়েচে ? লোকে কত কি বলচে । উমেশ বলিলেন,--আশ্চৰ্য্য ব্যাপার । ছোট বউমাকে চিলুতে গুইয়ে মুখাগ্নি করতে যাচ্চি, দেখি সে কটমট করে