পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আষাঢ় মাতৃ-ৰণ s)\\9 পিতা ও কস্তাতে বেড়াইতে বেড়াইতে অনেক দূর চলিয়া গেলেন। বাড়ি ফিরিবার অনিচ্ছ ক্রমেই যেন তাহদের Dপ্রবল হইয়া উঠতে লাগিল। জ্ঞানদার সম্মুখীন হইবার মত সাহস দু-জনের এক জনেরও ছিল না। কিন্তু ঘুম ষ্টেশন পর্যন্ত আসিয়া পড়িয় তাহার নিতান্তই Pথামিতে রাধা হইলেন। সত্যই ত আর হাটিয়া কলিকাতা চলিয়া যাইতে পরিবেন না ? ফিরিতে র্তাহাদের হইবেই, ইচ্ছা থাক বা নাই থাক। যামিনী নিজের হাতঘড়ি দেখিয়৷ বলিল, “অনেক দেরি হয়ে গেল বাব, বাড়ি ফিরতে একেবারে বেল ছটাে বেজে যাবে।" নৃপেন্দ্রবাবু বলিলেন, “ত হোক। ওঁকে ঠাণ্ড হবার জন্যে একটু বেশী সময়ই দেওয়া দরকার ছিল,” বলিয়। তিনি পীর মন্থর গতিতে আবার ফিরিয়৷ চলিলেন। কুয়াস ভাল করিয়া কাটে নাই। একবার রোদ উঠিতেছে, আবার শুভ্ৰ মেঘপুঞ্জে প্রকৃতিদেবীর মুখশোভ ঢাকিয় ধাইতেছে। যামিনী একরকম কোনোদিকে না তাকাইয়াই পিতার পিছন পিছন চলিতেছিল। তাহার হৃদয়ের ভিতর দারুণ অন্ধকার, বাহিরের আলোর দিকে তাকাইবার কোনো প্রবৃত্তি তাহার ছিল না । নৃপেন্দ্রবাবু হঠাৎ আচমকা দাড়াচয় গেলেন, যামিনী তাহার গায়ের উপর ছুঁচোটু পাইয় পড়িতে পড়িতে সাম্লাষ্টয় গেল। নৃপেন্দ্রবাবু বলিলেন, “দেখ ত মা, আমাদের ভজ ঘু ? ঘোড়ায় চড়ে অমন করে ছুটে আসছে কেন ?" যামিনী মুখ তুলিয় চাহিয়৷ দেখিল । ঘোড়াটাকে চার হাতপায়ে আঁকড়াইয় পরিয়া একটি মানুষ এক রকম গুলিতে ঝুলিতে আসিতেছে । তাহদের ভূত্য বলিয়াই ত বোধ হয়, কিন্তু এমন ভাবে আসিতেছে কেন ? কোন বিপদআপদ হইল না কি ? দুই জনেরই চলার গৃতি বাড়িয়া গেল, ঘোড়াটাও ক্রমে কাছে আসিয়া পড়িল। নৃপেন্দ্রবাবুকে দেখিয়৷ ভজু ঘোড়ার পিঠ হইতে একরকম গড়াইয়া নামিয়া পড়িল । নৃপেন্দ্রবাবু, বাস্ত হইয়া জিজ্ঞানা করিলেন, “কি হয়েছে?" গিয়ে বেম্বস হয়ে গেছেন ?” যামিনী কাদিয়া ফেলিল। নৃপেন্দ্রবাবু এদিক-ওদিক তাকাইয়া একটা রিকৃশ দেখিতে পাইয়, তাহাতেই চড়িয় বসিলেন। বাহকদের প্রচুর বখসি কবুল করাতে তাহারা দু-জনকেই রিক্শতে বসাইয়া প্রাণপণে দৌড়িয়৷ চলিল। ভজু আর ঘোড়ায় চড়িতে ভরস পাইল না, সেটার লাগাম ধরিয়া টানিয়া লইয়৷ চলিল । বাড়িতে পৌঁছিয়াই যামিনী ছুটির গিল্প। মায়ের ঘরে ঢুকিল । একমাত্র আয় সেখানে বসিয়া কঁদিতেছে, বাড়িতে আর কেহু নাই । মিহির ডাক্তার ডাকিতে গিল্পাছে । জ্ঞানদা থাটের উপর গুচয় আছেন, জ্ঞান হুইয়াছে কি-না ঠিক নাই, চোখ বন্ধ । নৃপেন্দ্রবাবুও যামিনীর পিছন পিছন ঘরে ঢুকিয়া জিজ্ঞাস করিলেন, “কি ক’রে পড়ে গেলেন ?" আয় কাদিতে কঁাদিতে যাহা বলিল, তাহার মৰ্ম্ম এষ্ট যে, মেমসাহেবকে কিছুতেই খাওয়াইতে না পারিয়৷ সে নিজে স্নান করিতে চলিয়া গিয়াছিল। পোকাবাবুও পাইয় গুইয় ছিলেন, চাকরর রান্নাঘরে কাজ করিতেছিল । ইতিমধ্যে কি ঘটিয়াছে সে কিছুই জালে না। হঠাৎ কোলাহল শুনিয়। ভিজা কাপড়ে বাহিরে আসিয়া দেখে ধে উপরে উঠবার রাস্তায় মেমসাহেব অজ্ঞান হইয় পড়িয়৷ আছেন, আর একটা পাহাড়া কুলি তাহার স্নার্টুকেশট পিঠে বাধিয়া ইঁদার মত দাড়াইয়া আছে। তাহাকে জিজ্ঞাসা করায় বলিল মে, মেমসাহেল ষ্টেশনে যাইবার জন্য তাহাকে রাস্ত হইতে ডাকিরাছিলেন। কখন সে মেমসাহেব রাস্তায় গেলেন আর. কুলি ডাকিলেন, তাহ সে জানে না। যাহ হউক, পয়স দিয়া তাহার কুলি বিদায় করিয়া দিয়াছে, তার মেমসাহেবকে ধরাধরি করিয়া বিছানায় আনিয়া শোয়াইয়াছে। পোকাবাবু ডাক্তার ডাকিতে গিয়াছেন। নৃপেন্দ্রবাবু দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলিয়া বলিলেন, “এমন করে নিজের প্রাণ নিজে নষ্ট করলে কি আর কে করতে পারে ?” যামিনী আকুল হইয়া কঁদিতে লাগিল। ম যে তাছারষ্ট অবাধ্যতায় অভিমান করিয়া চলিয়া যাইতেছেন, এ দুঃখ সে ভুলিবে কি করিম ? তাহার নিজের কথা ভাবিবার কি অধিকার ছিল ? সে কেন নিজেকে বলিদান দিতে সন্মত হয় নাই ?