পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আষাঢ় । করিলাম, কিন্তু যতই বুঝাই ততই তার কান্ন বাড়িয়া যায়। বিপদে পড়িলাম। ফিরিয়া আসিয়াই স্ত্রীকে সমস্ত কথ। বলিলাম। শুনিয়া তিনিও ঘাটে চলিলেন, কিন্তু তাকে দেখিয়া তার রাগ আরও বাড়িয়া যায়, তার কান্না সপ্তমে চড়ে, তার আব্দার আরও প্রবল হইয় উঠে। যখন কিছুতেই তাকে শাস্ত করা গেল না, তখন নিরাশ হইয়া স্ত্রী বলিলেন – “না হয় লোকটাকে আজ রাত্রের মত ঘরেই নিয়ে চল ।” সে রাত্রের মত লোকটাকে বাড়িতে লইয়া আসিলাম । নীচে একটা ঘর খালি পড়িয়া থাকিত। তিনটি প্রাণীর জন্য উপরের ঘরগুলিই যথেষ্ট ছিল—নীচেরটা ব্যবহারে আসিত না। সেই ঘরটায় তাকে থাকিবার বন্দোবস্ত করিয়া দিলাম। ভাবিয়াছিলাম পরদিন প্রাতে সে স্বেচ্ছায়ই চলিয়া যাইবে । কিন্তু চলিয়া যাইবার বিন্দুমাত্র ইচ্ছ। তার মধ্যে দেখিলাম না। বেলা যথম দ্বিপ্রহরের কাছাকাছি তখন পৰ্য্যস্ত যখন তাহার স্বেচ্ছায় চলিয়৷ যাওয়ার কোন চিহ্ন দেখিলাম না, তখন ভাবিলাম দুপুর বেলা খাওয়াইয়া-দাওয়াইয়। বিকালবেল তাহাকে বিদায় করিয়া দিব । স্ত্রীকে বলিলাম “লোকটির ধে যাবার নামগন্ধ নেই।” স্ত্রী বলিলেন “তাই ত, এ যে সাধ করে আপদ ডেকে আনলাম।” আমি বলিলাম--"বিকেলবেল তাকে মুখ ফুটে বলতে হবে।” থোক নিকটে দাড়াহয় আমাদের কথাবাৰ্ত্ত শুনিতেছিল। সে বলিয়া উঠিল— ‘ন, বাবা, সে হবে না। ও আমাদের এখানেই থাকবে। সেখানে গেলে আবার ওকে মারবে।” আমি তাকে বুঝাইতে চেষ্টা করিলাম। কিন্তু সে আমার কোন কথা না শুনিয়া আঙ্গুল ধরিয়া শুধু বলিতে লাগিল— “বল তাকে যেতে দেবে না, বল তাকে যেতে দেবে না।” কি করি, বলিলাম-- না, তাকে যেতে দেব না। সে আমাদের এখানেই থাকবে, তোমার সঙ্গে থেল করবে, তোমাকে নিয়ে বেড়াতে যাবে। স্ত্রী বলিলেন—“থাকুকই ; ভগবান যখন এনে জুটিয়েছেন তখন আর তাড়িয়ে দিয়ে দরকার নেই।” লোকটি আমাদের সঙ্গে বাস করিতে স্বরু করিল। প্রথম প্রথম বোধ হয় তার একটু বাধ-বাধ ঠেকিত, সেইজন্ত নীচের जांबू v©ፃው ঘরেই সে নিজের শালগ্রাম শিলা আর তার পূজাঅর্জন, সেব-ষত্ব লইয়া থাকিত। মাটি কুড়াইম আনিম্ন ঘরের মধ্যে আবার একটি বেদী করিয়াছিল। খোকাও তাহাকে সে বিষয়ে সাহায্য করিয়াছিল। সকাল হইলেই কোথা হইতে গিয়া ফুল তুলিয়৷ আনিত, তারপর অনেকক্ষণ ধরিয়া স্নান করিয়া ঘরে ঢুকিয়া নৈবেদ্য সাজাইয়া পূজা করিত, আর পূজা শেষ হইলে খোকাকে ডাকিয় প্রসাদ দিত। দুইবেলার আহার সে চাহিয়৷ খাইত না । কিন্তু ক্রমে সে পরিবারেরই একজন হুইয়া উঠিল। খোকার সঙ্গে মিলটাই বেশী করিয়া জমিয়া উঠিল, কিন্তু আমাদের সঙ্গেও আর পূর্বের বাধ বাধ ভাব ছিল না—সকল বিষয়ই সে নিঃসঙ্কোচে আলোচনা করিত। সে তার গত জীবনের ইতিহাস আমাদিগকে বলিত তার শৈশবের ঘটনা, যৌবনে সে কি কি কাজ করিয়াছে সে সব কথা, কেন সে সংসারবিরাগী হইয়া গেরুয়া ধরিয়াছে তার কৈফিয়ং : সংসারে তার বাবা মা আত্মীয়স্বজন বলিতে গেলে কেহই ছিল মা--স্ত্রী একজন ছিল, কিন্তু সেও বহুদিন পূৰ্ব্বে স্বামিগৃহ ছাড়িয়া গিয়াছে, তার কারণ, সে বলিত তার স্ত্রীর মনটা ছিল একটু বিলাসী, কিন্তু সে তার বিলাসবাসন চরিতার্থ করিতে পারিত না । আমি তাকে জিজ্ঞাসা করিতাম, সে আবার সংসার করিতে চায় কি-না। সে বলিত, সে, প্রবৃত্তি তার আর নাই। কোনদিনই সে কৰ্ম্মঠ প্রকৃতির ছিল না। কিন্তু এখন তার কাজ করিবার বয়স চলিয়া না গেলেও সে আর সংসারের ঝঞ্জাটের মধ্যে ফিরিয়া যাইতে চায় না। যে অবস্থায় আছে সেই অবস্থায়ই সে বেশ সুখী। এই অবস্থায় সে যে স্বর্থী ছিল তাহাতে সন্দেহ ছিল না। একে ত কাশীর মত আমন অলস শহর বোধ হয় আর দ্বিতীয়, নাই। অকৰ্ম্মার সংখ্যা এখানে গণনা করা যায় না। যারা কাজ করে তারাও বেশী পরিশ্রম করিতে প্রস্তুত নয়। তার উপর যদি আমন অনায়াসে খাওয়-পরা জুটিয়া যায়, তাহা হইলে স্বথে না থাকিবার কোন কারণ নাই । বস্তুতঃ যতই দিন যাইতে লাগিল, লোকটি খাইয়-দাইয়া বাবা বিশ্বনাথের যাড়ের মত, মোটা হুইতে লাগিল। আরাম পাইয়া তার চালচলনেও একটু একটু করিয়া পরিবর্তন আসিল । কৌপান ঘন ঘন পরিষ্কার হইতে লাগিল,