পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

"Goob পূজার আগ্রহ পূর্কের চেয়ে কমি আসিল, গলায় তুলসী কাঠের মালা সৰ্ব্বদা থাকিত না, স্তোত্র পাঠ কচিৎ কখনও শোনা যাইত। পূৰ্ব্বে তার যে সকল অদ্ভূত ধারণা ছিল সেসব দূর হইয়া গেল। এককথায় লোকটি আবার স্বাভাবিক সাধারণ মনুষ্যত্ব ফিরিয়া পাইল । তার ভিতরকার যে সকল জন্মগত প্রবৃত্তি এতদিন চাপা পড়িয়াছিল, সেগুলি আবার অল্পে অল্পে মাথা তুলিতে লাগিল। যে পঞ্চেন্দ্রিয়ের স্বথ সে ত্যাগ করিতে গিয়াছিল, দেখিলাম সে সবগুলিরই সে একজন সমজদার। আহারে রুচি জ্ঞান তার টনটনে, শয়নে আরামটুকু তার পুরামাত্রায় চাই, স্কন্দ্রর জিনিষের প্রতি লোভ তার কম নয়। তবু যদি তাকে জিজ্ঞাসা করা যাইত আবার ঘরসংসার করিতে সাধ যায় কি না, সে না বলিয়া উঠিত। সব-কিছুই সে পাইতে চায়, কিন্তু কোন প্রকার আবল্যের মধ্যে না গিয়া। এইরূপে দিন যায়। সে আমার বাজার করে, ছেলেটাকে লইয়া বেড়াইতে যায়, ফরমায়েস খাটে। আমারও এখন তাকে বেলা দুমুঠো থাইতে দিতে মনে কোন খুংখুখ নাই। একদিন বড় গরম পড়িয়াছিল। বিছানায় গুইয়া অনেকক্ষণ পৰ্যন্ত অস্থির ভাবে ঘুমের জন্য বৃথা চেষ্টা করিয়া উঠা ছাতে গেলাম। তখন রাস্তায় লোক চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হইয়া গিয়াছে শুধু ইলেকটকের আলোগুলি রাত্রির বিনিদ্র চোখের মত জলিতেছে। আকাশে জ্যোৎস্না ছিল— জ্যোৎস্নায় অদূরে গঙ্গার স্থির জলরাশি দেখা যাইতেছিল। আমার বাড়িটার ঠিক পাশেই একটি বিস্তৃত লেবুবাগান আছে—তার অপর পাশে কয়েকজন সাধু সন্ন্যাসীর আড্ডা, জনকতক গরীব লোকের বাস। ঈষৎ গতিশীল বাতাসে লেবুর গন্ধ ভাসিয়া আসিতেছিল। আমি আপন মনে পামচারি করিতে ছিলাম, এমন সময় হঠাৎ মনে হইল যেন দেখিতে পাইলাম একটি মচুন্যমূৰ্ত্তি লেবুগাছের আড়ালে আড়ালে আমাদের বাড়ির দিকে অগ্রসর হইয়া আসিতেছে। আমি একটু আড়ালে সরিয়া গিয়া তাহাকে দেখিতে লাগিলাম। লোকটি নিকটে আসিলে আমি হঠাৎ ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করিলাম—“কে ?” সে চমকাইয়া উঠিল। বলিল- “আমি বাৰু।” দেখিলাম আমারই পোষা লোকটি। মনের ভিতর দিয়া একটি সন্দেহু বিদ্যুৎরেখার মত চলিয়া গেল। প্রশ্ন করিলাম—“এত রাত্রে কোথায় গিয়েছিলে ?” সে আমৃত আমৃত্যু করিয়া উত্তর '•6 o' SనOBO দিল—“সন্ন্যাসীদের আখড়ায়।” তারপর সে ভিতরে চুকি৷ গেল । নীচে নামিয়া আসিয়া স্ত্রীকে ঘটনাটা বলিলাম। তিনি বলিলেন—“হয়ত সন্ন্যাসীদের আখড়াতেই গিয়েছিল।” যাহা হউক ঘটনাটা লইয়া আমি বেশী উচ্চবাচ্য করিলাম না। পরদিন সকাল বেল নীচে গিয়া দেখি সে চুপ করিয়া বসিয়া গুন গুন করিয়া গাহিতেছে— "চঞ্চল মনকে বশ কয়ূন বড় ভাবনা, বড় ভাবনা ।” ভাবিলাম ব্যাপার কি ? যে লোকটা আগে গান গাহিলে হয় রাম, না হয় বিষ্ণু, না হয় শিবের গান গাহিত, তার মুখে হঠাৎ “চঞ্চল মনকে বশ কর না, বড় ভাবনা, বড় ভাবনা” এর মানে কি ? প্রশ্ন করিলাম—“কি রে, চঞ্চল মনকে বশ করবার জন্ত । এত ব্যস্ত হলি কেন?” সে যেন একটা কৈফিয়ৎ তৈয়ার করিয়া ঠোঠের ডগায় রাখিয়া দিয়াছিল। প্রশ্ন কবিতে-নাকরিতেই বলিতে লাগিল যে, কাল রাত্রে সন্ন্যাসীদের সঙ্গে তত্ত্বকথা আলোচনা করিয়া অবধি বড়ই বিবেকদংশন অনুভব করিতেছে। ভাবিতেছে যে গৃহীলোকের সংস্পর্শ সে ছাড়িয়া যাইতে চেষ্টা করিতেছিল, মনের দুৰ্ব্বলতা বশতঃ আবার কি করিয়া তারই মোহে আচ্ছন্ন হইয়া যাইতেছে ইত্যাদি। কিন্তু যখন বলিলাম সে যদি গৃহী লোকের সংসর্গ ছাড়িতে চায়, ইচ্ছা করিলেই ছাড়িয়া যাইতে পারে—সে চুপ করিয়া গেল । আরও দিন যায়। এখন তার মুখে প্রায় সৰ্ব্বদাই লাগিয়া থাকে—“চঞ্চল মনকে বশ করুন, বড় ভাবনা, বড় ভাবনা।” আমার ছেলেটিও শুনিয়া শুনিয়া গানের পদটা শিথিয়া লইয়াছে। সেও সময়ে অসময়ে গাহিয়া —“চঞ্চল মনকে বশ করুন, বড় ভাবনা, বড় ভাবনা।” আর প্রশ্ন করে, চঞ্চল কি, মন কি, বশ করা কি, সেজন্ত তার সাধুদাদার অত ভাবনা কিসের। কিন্তু এখন হইতে আমার বাড়িতে একটা বড় মজার ঘটনা ঘটিতে লাগিল। এতদিন আমার বাড়িতে যেখানে যে জিনিষটি থাকিত, সেটির আর নড়াচড় হুইত না । কিন্তু এখন গোলমাল হইত লাগিল, যেখানে যে জিনিব খাৰিত,