পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আষাঢ় বাধিয়া কৈলাস পোষ্টাপিসে ফিরিয়া গেল। গুমোট হইয়৷ দারুণ গরম পড়িয়াছে। বিকালে ঝড়-বৃষ্টি হওয়া আশ্চয্য নয়। হাৰ্ম্মোনিয়মটা আজ তাহ হইলে আর কেন হয় না। কিন্তু কালী পাচ মিনিটের নোটিশে কাল তার মান রাখিয়াছে, পুরস্কারটাও তাকে অবিলঙ্গে দেওয়া দরকার। কাল পর্য্যন্ত ধৈৰ্য্য কৈলাস ধরিতে পারিবে না। অথচ দেরী করিয়া আসিয়। পাচটার আগে আজ ছুটি পাওয়াও মুঙ্গিল । সে শ্রান্তি বোধ করিতেছিল। তবু বেঞ্চিতে চিং হইয় খানিক ঝিমানোর ইচ্ছা ত্যাগ করিয়া সে পোষ্টমাষ্টারের বাড়ির মধ্যে গেল । পোষ্টমাষ্টারের মেয়ে দাওয়ায় ছেলে কোলে লঙ্গয় বসিয়াছিল, বলিল, কি, কৈলাস ?” “সেই যে মাদুলির কথা বলছিলে দিদিমণি, আজ গেলে সেট পাওয়া যায়।’ পোষ্টমাষ্টারের মেয়ে সাগ্রহে বলিল, তবে তুমি আজকেষ্ট যাও কৈলাস।” বাবু যদি রাগ করেন ? ‘আমি বলে রাখব।” মাজুলি লইয়৷ পোষ্টমাষ্টারের মেয়েকে কৈলাস অনেক দিন ঠকাইতেছে । ঝিকণ ফকিরের মাদুলি আন সহজ কথা নয়, একবেলা নৌকায় গিয়া সাত ক্রোশ গাটলে তবে ঝিকণ ফকিরের আস্তানা। আজকাল করিয়া কৈলাস মাদুলির দাম বাড়াইয়াছে, এবার একদিন আপ পয়সা দিয়া একট। মাদুলি কিনিয়া তার গ্রামেরই জাগ্রত দেবতার পূজার ফুলের একটি শুকনে পাপড়ি ভরিয়া আনিয়া দিবে। বলিবে, ‘দিতে কি চায় দিদিমণি, কত হাতে পায়ে ধরে আনলাম। পাচসিকে লাগল। ন না, ও আর তোমাকে দিতে হবে ন৷ দিদিমণি । নিতে নেই গো, নইলে নিষ্ট না ? মাদুলির খরচ বলে নয়, আমার মেয়েকে সন্দেশ খাবার জন্য যদি দাও তবে বরং নিতে পারি।’ পোষ্টমাষ্টার যে পাচসিকে গালে চড় মারিয়া লইয়াছে সেটা ফেরৎ আসিবে। এই মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে কৈলাসের বিবেকের কোন প্রতিবাদ নাই। কালী ভিন্ন সংসারের আর সমস্ত মেয়ে তাদের কৰ্ম্মফল ভোগ করিবেই, ঝিকশ ফকিরের মাদুলিতে পোষ্টাপিসের পিয়ল ও তাঁর মেয়ে లిగి তাদের কোন উপকার হওয়া সম্ভব নয় । এটুকু ছলনায় তবে ক্ষতি কিসের ? মাদুলিতে দেবতার ফুল তো থাকিবেই । সকলের মত কৈলাসের আত্মপ্রবঞ্চনাতেও এমনি একটি সুন্দর শৃঙ্খল থাকে । কালীর সঙ্গন্ধেও তার আত্মপ্রবঞ্চনা এমনি মনোহর। পোষ্টমাষ্টারের মেয়ের কাছে ঝিকণ ফকিরের মাদুলির মত কালীর জীবনে বল অনর্থক, মঙ্গল দূরে থাক এ দু’টি মেয়ের দুঃখ মোচন ৪ মার্চুলি আর সুবক্তকে দিয়া হইবে না । একজনের জন্ত সে তাই অকারণে সাতক্রোশ পথ হাটিতে যেমন রাজা নয়, আর একজনকে পরের বাড়ি পাঠাইয়। শুন্য ঘরে বুক চাপড়াঙ্গতেও তার তেমন ইচ্ছা নাই। সভাশের বাড়ি পথে পড়ে না, একটু ঘুরিয়া যাইতে হয়। হাৰ্ম্মোনিয়ম কিনিয়া বাহির হইতে অপরাধ হইয়া গেল । রোদের তেজ কমিয়াছে, কিন্তু হাৰ্ম্মোনিয়ম ঘাড়ে করিয়া পথ চলিতে কৈলাস শ্রান্ত হত্তম পড়িল । মনে হয় এতক্ষণে তার নেশা টুটিয়া গিয়াছে। কিন্তু নেশার সঙ্গে স্নেহকে সে ঝিমাইম পড়িতে দিবে কেন ? সে জোরে জোরে পী ফেলিয়া চলিতে লাগিল । আধ মাইল গিষাক্ত সে হাপাইয়ু পড়িল । বাদ্যযন্ধের ভারে ঘাড়ট ইতিমধ্যে ব্যথা হইয়া গিয়াছে । পথের ধারে সেটা সে নামাঙ্গয় রাপিল । প। দুটি বেঙ্গায় টন টন করিতেছে । বয়স যে পঞ্চাশ পার হইয়াছে সেটা আর অস্বীকার করা যায় না। এই ধরণের প্রমাণ আজকাল প্রায়ই পাওয়া যায়। বয়সটা কৈলাসের গুরুতর বিপদ। কালীর জীবনের অৰ্দ্ধেকট কাটিতে-ন-কাটিতে তাকে মরিতে হইবে ভাবিতে কৈলাসের ভাল লাগে না । কালীর কি উপায় হইবে ? : কালীর ভার কে লঙ্গবে ? - স্থবল লক্টতে পারিত। তার মৃত্যুর পরেও স্ববল বঁাচিয়া । থাকিবে । মৃত্যুর সঙ্কেত মানিয়া মেয়েকে তার নিশ্চিত দুঃখ-দুৰ্দ্দশার মধ্যে বিসর্জন দিতে হইবে ন কি? তার এত স্নেহ এত. কল্যাণকামন, এত ত্যাগ কোন কাজে লাগানো যাইবে: না? মাঝে মাঝে নেশার অবসাদের সময় কথাটা ভাবিয়া; অসহায় আপশোষে কৈলাসের মাথা কিম কিম করে। মরণে ;