পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্রাবণ শিশুর শিক্ষায় খেলার স্থান 8ፃ¢ পেলায় চিন্তাশক্তি প্রয়োগ করিতে দেখা যায়। এই সময়ে সে ধাঁধার উত্তর করিতে, খেলাসংক্রান্ত কোন বিষয় চিন্তা করিয়া অনুমান করিতে অত্যন্ত আমোদ বোধ করে। এই সময় হইতে কৈশোর পর্যন্ত শিশুরা আপন আপন দৈহিক ও মানসিক শক্তির পরিচালনা করিতেই শুধু ভালবাসে না, তাহারা ঐ শক্তিগুলির পরীক্ষা দিয়া নিজ নিজ শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করিতেও অতিশয় আনন্দ পায়। ইহার পর ক্রমে শিশু খেলার যুক্তি ও বিচার শক্তি নিয়োগ করিতে শিখে । কোন কাল্পনিক বিবরণ দিতে গিয়া শিশু যুক্তি দ্বারা বিচার করিতে চাহে যে, বাস্তবে তাহ সম্ভবপর কি-না। শিশুরা আর একটু বড় হইলে, তাস ইত্যাদি খেলায়, যাহাতে তাহাদের বুদ্ধিশক্তির পরিচালন হয় তাহাতে তাহদের বিশেষ অনুরাগ লক্ষিত হয় । সুতরাং দেখা যাইতেছে যে, শিশুর দৈহিক ও মানসিক শক্তিগুলি যেরূপভাবে ক্রমবিকাশ প্রাপ্ত হয় তদনুযায়ী তাহার খেলারও প্রকারভেদ হয়। শিশুর খেল-প্রবৃত্তির মূল তাহার কতকগুলি সহজাত সংস্কারের ( instincts ) মধ্যে নিহিত আছে বলিয়া বিবেচিত হয়। অনুসন্ধিৎসা বা কৌতুহল ইহাদের মধ্যে একটি। এই কৌতুহলই শিশুর ক্রীড়াপৃহা জাগাইয়া তুলিতে সহায়তা করে। যে-খেলার মধ্যে কোন বৈচিত্রা বা নূতনত্ব নাই শিশুরা তাহ পছন্দ করে না, যেহেতু তাহাতে তাহদের স্বাভাবিক কৌতুহল উদ্দীপিত হয় না। তাঁহাদের কাছে সে খেলা খেলাই না, এবং তাঁহাদের মনও তাঁহাতে স্বতই ক্লাস্ত হইয়া পড়ে। তিন বৎসর বয়স হইতেই শিশুর খেলার মধ্যে তাহার আত্মপ্রকাশের স্বাভাবিক স্পৃহা ও চেষ্টা লক্ষিত হয়। এই সময়ে সে বিভিন্ন শব্দ দ্বারা ও নানা অঙ্গভঙ্গীর সাহায্যে তাহার মনোভাব ব্যক্ত করিতে চাহে । এই আত্মপ্রকাশের ইচ্ছা শিশুর একটি সহজাত সংস্কার । ইহা তাহার পরবর্তী জীবনেও থাকিয়া যায়। ক্রমে যখন শিশুর আত্মশক্তিবোধ জন্মিতে থাকে সে তখন তাহার নিজশক্তিতে বিশ্বাস করিতে শিখে । এই সময়ে সে নিজের হাতে সব জিনিষ নাড়িয়া-চাড়িয়া খেলা করিয়া আনন্দ পায়। শিশুর এই স্বাভাবিক বৃত্তিটি তাহার ক্রীড়াপূহ জাগাইতে বিশেষ আহুকূল্য করে। মানুষের মন গতিশীলতায় একটি স্বাভাবিক আনন্দ পায়। তাই শিশু যখন প্রথম চলিতে বা হামাগুড়ি দিতে শিখে সে গতিতে স্বভাবতই আনন্দ অনুভব করিয়া থাকে । তাহাকে কেহ ধরিতে গেলে অনেক সময় সে তাহাকে এড়াইয়৷ চলিবার চেষ্টা করিয়া বড়ই আমোদ উপভোগ করে। এই সময় ইহাই তাহার একটি অত্যস্ত প্রিয় খেলা। ইহার পর শিশু একটু বড় হইলে তাহার মনে অনুকরণ-স্পৃহা জাগে । এই সময়ে সে অপরের কাৰ্য্যকলাপ বাক্যাদি নকল করিয়া অভিনয় করিতে ভালবাসে । এইরূপ অভিনয়ই তাহার খেলাবিশেষ। সাত হইতে বার বৎসর বয়সের মধ্যে শিশুর প্রতিদ্বন্দ্বিতার স্পৃহা প্রবল থাকে। এই সময়ে সে কি পেলায়, কি পাঠে তাহার সঙ্গীদের পরাস্ত করিতে চায়। এই প্রবৃত্তি বয়ঃপ্রাপ্ত মানুষের পেলার মধ্যেও অল্লাধিক পরিমাণে থাকে। কিন্তু তাহার সামাজিকতার পুহা ইহাকে কতক পরিমাণে দমন করির রাখে। বম্বোবৃদ্ধির সহিত শিশু তাহার ব্যক্তিগত স্বাতন্ত্রকে তাহার সামাজিক বৃহত্তর সত্তার অধীন করিয়ু রাখিতে শিখে । সে দলের ও শ্রেণীর অপরাপর সঙ্গীদের সহিত সহযোগে গেল ও কাজ করিয়া আনন্দ পায়। এইরূপে সে তাহার নিজ ব্যক্তিত্বকে দলের ও ক্রণে সমাজের বৃহত্তর সভায় ডুবাইয় দিতে শিখে । বালকদিগের ফুটবল ক্রিকেট ইত্যাদি খেলায় এই সঙ্ঘবোধের উৎকর্ম সাধিত হয়। শিশুর খেলায় আরও কতকগুলি সহজাত সংস্কারের আভাস পাওয়া যায়---যথা, সংগ্ৰহ-পূহু (collective instinct), wool (creative instinct), নিৰ্ম্মাণ-পূহ ( constructive instinct ), Gừ #### ( aesthetic instinct ) ইত্যাদি | বিদ্যালয়ে মুদক্ষ শিক্ষক শিশুর স্বাভাবিক বৃত্তিগুলিকে খেলার সাহায্যে পরিচালিত করিয়া শিক্ষা দিতে পারেন । খেলার মধ্য দিম্ব মানসিক, নৈতিক এবং দৈহিক সৰ্ব্ববিধ শিক্ষাই দেওয়৷ যাইতে পারে। শিক্ষক বিদ্যালয়ে অনেক পাঠ্যবিষয়ই থেলার মত করিয়া শিশুর নিকট উপস্থিত করিতে পারেন। পাঠে যদি খেলার ন্যায় আনন্দ ও বৈচিত্র্য দেওয়া যায় তাহা হইলে শিশু ক্লান্ত না হইয়া অধিকক্ষণ উহাতে মনঃসংযোগ করিতে পারে। তাঁহাতে শিক্ষক শিশুর স্বাভাবিক কৌতুহলকেও অধিকক্ষণ জাগাইয়া রাথিতে পরিবেন। এইরূপে খেলাচ্ছলে অভিনয়, চিত্রাঙ্কণ, মডেল প্রভৃতি হস্তসম্পাদ্য কার্ধ্যের দ্বারা ইতিহাস ভূগোলাদি পাঠ দেওয়া যায়। নানা প্রকার খেলার সাহায্যে বানান পঠন অঙ্কনাদি শিক্ষা