পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

—তোর বন্ধু—তুই বলছিস ও নির্দোষ-আচ্ছ, আমি ওকে ছেড়ে দিলাম ।’ এই বলিয়। তিনি কনেষ্টবলদিগকে কি বলিলেন, তাহারা শঙ্করকে ছাড়িয়া দিল । শঙ্কর এইরূপে ছাড় পাইয়া আমার কাছে আসিল এবং আমাকে দুই বাহু দিয়া জড়াইয়া ধরিয়া বলিল, কিশোর। আমি এত দিনে জানলুম, তোর মত হিতৈষী বন্ধু আমার আর কেউ নেই ? আমি হাসিয়া বলিলাম,—‘অর্থাং রাজদ্বারে শ্মশানে চ য স্তিষ্ঠতি স বান্ধবঃ–কিন্তু ভাই, হেডমাষ্টারের দ্বারে ত আমাকে শত্র বলেই মনে করেছিলে ।” শঙ্কর আমার হাত তাহার হাতের মধ্যে চাপিয়া ধরিয়৷ বলিল,—‘সে জন্য তুই কিছু মনে করিসনে ভাই । আমি ভুল বুঝেছিলুম। ভুল বুঝে তোর প্রতি অন্তায় ব্যবহার করেছিলুম। আজ থেকে আমি আর ও-সব ছেলেদের সঙ্গে মিশব না ! দেখিস ভাই, আজকার এ কথা যেন বেশী জানাজানি না হয়। আমার বাবা শুনলে নিশ্চয়ই আমাকে আর ঘরের বাইরে যেতে দেবেন না ’ আমি বলিলাম,--“কুচ পরোমা নেই, তুমি নিশ্চিন্ত থাক । চল তবে আমরা এখন বাড়ি ফিরে যাই, আজ আর যাত্রা গুনে কাজ নেই ? এই বলিয়া আমি শঙ্করের সঙ্গে বাড়ি রওনা হইলাম। হাজারী বাৰু অমিয় ও সত্যচরণকে লইয়া থানায় গেলেন । পরদিন শুনিলাম, দারোগ তাহদের নিকট মুচলিক লইয়া ছাড়িয়া দিয়াছিলেন। কিন্তু তদন্তে তাহাদের বিরুদ্ধে কোন সন্তোষজনক প্রমাণ না পাওয়ায় তাহাদিগকে আর তলব করিলেন না । এইরূপে শঙ্করের সহিত আমার বন্ধুত্ব স্থাপিত হইল। আমি তাহাকে অত্যন্ত ভালবাসিতাম, সেও আমাকে ভালবাসিতে লাগিল। ক্লাসে আমরা প্রায় এক জায়গায় বসিতাম। অন্ত সময়ে আমি তাহদের বাসায় যাইতাম, সেও আমাদের বাড়িতে জালিত।- শঙ্কর-আমার প্রতি স্বপ্রসন্ন হওয়াম্ব-কান্তি-বিভূতি ইছারা আর আমাকে জালাতন করিত না। শঙ্কর তাহদের সঙ্গে মেলামেশা পরিত্যাগ করিল। বিনয় সময়-সময় আমাকে শিক্ষান্ধি দিতে ছাড়িত না, কিন্তু আমি বানৰ তাহারও মন ૧હ્યું ત્રાવ્યા છે సానD8O রাখিয়া চলিতাম। শঙ্করের একটি ভগিনী ছিল, তাহার নাম প্রমীলা। সে গোয়াড়ী বালিক-বিদ্যালয়ে পড়িত। তাহার স্কুল আমাদের বাড়ির খুব নিকটে, সে মধ্যে-মধ্যে আমার বোন কমলার সহিত আমাদের বাড়িতে আসিত ও আমাকে দাদা বলিয়৷ ডাকিত। আমি তাহদের বাড়িতে গেলে সে আমাকে যেন পাইয়া বসিত। তাহার মাও আমাকে খুব আদর করিতেন। সেবারে বাংসরিক পরীক্ষায় শঙ্কর পূর্বের ন্যায় প্রথম স্থান অধিকার করিল, কিন্তু অঙ্কে আমিই প্রথম হইলাম, মোটের উপর আমি দ্বিতীয় হইলাম। আমাদের হেড পণ্ডিত মহাশয় আমাদের দুই জনের অত্যন্ত ভাব দেখিয়া আমাদের নাম দিয়াছিলেন “মাণিকজোড়”—কিন্তু অল্প দিন পরেই আমাদের ‘জোড় ভাঙিয়া গেল। আমাদের বাংসরিক পরীক্ষার পরেই শঙ্করের পিতা অমরেন্দ্র বাৰু বরিশাল বদলী হইয় গেলেন, আমি কৃষ্ণনগরেই রহিলাম । বরিশালে গিয়া শঙ্কর মধ্যে মধ্যে চিঠি লিখিত, আমিও তাহাকে পত্র দিতাম। তাহার চিঠি না পাইলে মন বড় ব্যাকুল হইত। কিন্তু ক্রমে যত দিন যাইতে লাগিল, ততই আমাদের চিঠি লেখালেখি কমিতে লাগিল এবং অবশেষে একেবারে বন্ধ হইয়া গেল। যাহাকে একদিনও না দেখিয়া থাকিতে পারিতাম না,—যেদিন তাহার সঙ্গে দেখা ন হইত সে দিনটাই ব্যর্থ মনে করিতাম, কালক্রমে তাহাকে ভুলিয়৷ গেলাম, কদাচিৎ কখনও তাহাকে স্বপ্নে দেখিতাম। বোধ হয় শঙ্করও আমাকে সেইরূপ ভুলিয়া গিয়াছিল। ইহাই বুঝি বাল্যপ্রণয়ের প্রতি বিধাতার অভিশাপ । কিন্তু ইহার পর শঙ্করের সহিত যখন পুনৰ্ম্মিলিত হইলাম, তখন বিধাতা আমাদের দ্বারা অন্ত খেলা খেলিবেন বলিয়াই যেন আমাদের পূর্বপ্রণয়ের স্মৃতি জাগরক রাখিয়াছিলেন। সে ছ-সাত বৎসর পরের কথা । আমি কৃষ্ণনগর কলেজ “ হইতে আই-এসসি পাস করিয়া কলিকাতা মেডিক্যাল কলেজে জাসিয়া ভৰ্ত্তি হইলাম। আমি এনাটমি, ফিজিওলজী চর্চার সঙ্গে সঙ্গে কিছু কিছু সাহিত্যচর্চা আরম্ভ করিলাম। ইসপাতালে ডিউটি বরিতে গিয়া