পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

6օ {{ প্ৰবাসনী । ఏం9O গাড়ীতে লেমান! নিশ্চয়ই গুরুতর রকম আহত, কারণ তার সর্বাঙ্গে রক্ত ! তীরের মত সে গাড়ী অদৃপ্ত হয়ে গেল । কী সৰ্ব্বনাশ ! রায় ছুটে গিয়ে এক ট্যাক্সির সদ্ধান করলে । অনেক ট্যাক্সি সেখানে রয়েছে, হয়ত শহুরের সব ট্যাক্সি সেখানে জড় হ’য়েছে, কিন্তু একটাও পাওয়া শক্ত, কারণ প্রত্যেকেই আহতদের নিতে ব্যস্ত । সহস্ৰ সহস্র নরনারী ইতিমধ্যেই সেখানে সমবেত হয়েছে। অনেকে আহতদের সেবায় ব্যস্ত, আর অধিকাংশ মাঝে মাঝে চীৎকার করছে, “কার ল্যসফ নিপাত যাউক, হিটলারের জয় হউক!" দেখতে দেখতে সমস্ত লুড় হুইগ ষ্ট্রাশে এক বিশাল জনতায় ভরে গেল। আর গগন-ভেদী চীৎকার, “কার লাসফ নিপাত যাউক, হিটলারের জয় হউক।” যেখানে জনতার উত্তেজনা একটু বাড়াবাড়ি রকমের হয়, অমনি একদল ফৌজ তেড়ে গিয়ে বন্দুক উচিয়ে দাড়ায়, নয় একটা আমর্পণ্ড কার ফাক আওয়াজ করতে করতে তার সামনে যায় আর সকলে উৰ্দ্ধশ্বাসে পলায়ন করে। রায়ের কিন্তু এসব দাড়িয়ে দেখবার সময় আর নেই—তার প্রতিবেশী আহত হয়ত বা নিহত, তাকে তখনই যে রকম ক’রে হ’ক হাসপাতালে গিয়ে সন্ধান নিতেই হবে । অতিকষ্টে এক ট্যাক্সি জুটলো। তাতে ক’রে তীর বেগে ছুটে এসে রায় সেই সোয়াবিঙ্গের প্রকাও হাসপাতালের উঠানে ঢুকলো । হাসপাতালের উঠানে ট্যাক্সি, প্রাইভেট গাড়ী আর য়্যাম্বুলেন্স গাড়ীতে ভৰ্ত্তি। কিন্তু দৈবাৎ এতবড় হাঙ্গামা হ’লেও এ জাতের বিশৃঙ্খলা আসে না, এরা যেন বিপ্লবটাও ডিসিপ্লিণ্ড হ’য়ে করে । একটা বিশেষ অনুসন্ধান অফিস ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে। সেখানে আহত আত্মীরস্বজনের সন্ধান নিতে সার বেঁধে নর-নারী দাড়িয়ে গেছে । রায় সেই সারের পেছনে দাড়িয়ে গেল । অল্প সময়ের মধ্যেই সন্ধান পেল কোন ঘরে লেমানকে রাখা হয়েছে, সে কত নম্বরের রুগী ইত্যাদি । লেমান তখনও মরেনি—তবে সে গুরুতর রকম আহত । সেই ঘরে ভাড়াতাড়ি গিয়ে দেখে একজন চিকিৎসক এবং তার ছুই সহকারী লেমানকে ব্যাণ্ডেজ করতে ব্যস্ত। আঘাত লাংঘাতিক, তবে হৃৎযন্ত্র, ফুসফুস বা পাকস্থলী এই রকম কোন অতি প্রয়োজনীয় শারীরিক যন্ত্রে গুলি প্রবেশ করে নি। শুধু একটা কান, নাকটা আর চিবুকের নিম্নভাগ উড়ে গেছে, আর এক সার মেশিনগানের গুলি তার দুই কাধের হাড়, আর বাহুর অগ্রভাগের গ্রন্থি ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। গলাটা অদ্ভুত ভাবে বেঁচে গেছে—না হ’লে নাকি তৎক্ষণাৎ স্বত্যু হ’ত। মেশিনগানের মুখটা সিকি ইঞ্চি উচুতে, নয় সিকি ইঞ্চি নিচুতে থাকলে নাকি তার মাথাটা যেত গুড়ো হয়ে নয় ফুসফুসটা যেত ঝর্ণঝরা হয়ে । খুব বেঁচে গেছে— এতে শুধু কাধের হাড়টা গেছে ভেঙে। জার্মান সামরিক অভিধানে নাকি এটা তত সাংঘাতিক জখম নয়। বঁচিবার সম্ভাবনা নাকি এখনও ভাল আছে, যদি অন্তর-রক্ত-স্থালন না হয়। তবে বাচলে হাত থাকবে না, নাক থাকবে না, একটা কানও থাকবে না—চিবুকটা জোড়া লাগলেও লাগতে পারে । কিন্তু তবু সেটা বিকৃত অবশুই হবে । লেমান তখনও সংজ্ঞাশুন্ত । রায় একটা চেয়ারে বলে অপেক্ষা করলে। ডাক্তাররা তার সংজ্ঞা ফিরিয়ে এনে চলে গেল। চোখ পাশে ফিরিয়ে লেমান রায়কে দেখলে । রায় উঠে তার কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলে, “কেমন বোধ করছেন ?” লেমান বাকৃ-শক্তিরহিত— তার চক্ষু দিয়ে অশ্র নির্গত হ’ল । রায় রুমাল বার ক'রে তার অশ্র মুছিয়ে দিয়ে বললে, “কোন ভয় নেই, শীঘ্রই ভাল হ’য়ে উঠবেন।” অল্প মাথা নেড়ে লেমান বোঝালে, “না” । রায় আশ্বাস দিলে, “ডাক্তার বলেছে কোন ভয় নেই। আপনি সত্বর সেরে উঠবেন।” লেমানের মুখে যেন একটু অবিশ্বাসের হাসি ফুটে উঠলো। রায় বললে, “আপনার পিতাকে কিন্তু এখুনি তার করতে হবে । শুনেছি তিনি ডুসেলডফের বিখ্যাত ইঞ্জিয়ার গেহাইম্রাটু লেমান, তাকে আসতে বলি ?” রায় আশা করেছিল লেমান একথায় নিশ্চয়ই একটু উৎফুল্প হৰে। কিন্তু ফল হ’ল ঠিক উন্ট। এক ব্যথাভরা দৃষ্টি রায়ের ওপর ফেলে লেমান চোখ দুটো বুজলে। মুখের যেটুকু অংশ বেরিয়ে আছে তারই পরিবর্তন দেখে মনে হ’ল তার প্রাণে এক দারুণ আঘাত লেগেছে । রায় বিস্থিত