পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

५३ ভারতের ইতিহাসে বিরল নহে। একটা লক্ষণীয় বিষয় —আবুল-ফজল আইন-ই-আকবরীতে আকবরের সভার যে ছত্রিণ জন ওস্তাদের নাম করিয়াছেন, তাহাদের মধ্যে পনের জন গোয়ালিয়রের লোক—এবং এই গোয়ালিয়রের ওস্তাদ বা কলাবস্থদের অনেকেই হিন্দুনাম-যুক্ত মুসলমান ; যথা—"মিয়া তানসেন’ স্বয়ং, র্তাহার পুত্র ‘তানভরঙ্গ খা" ; এবং "শ্রীজ্ঞান খ’, ‘মিয়া টাদ’, ‘বিচিত্র খ', ( তদভ্ৰাভা ‘স্বীকৃষ্ঠান খ৷ ), ‘বীরমণ্ডল খ’, ‘প্রবীণ খ', ‘চাদ খ।’ গোয়ালিয়র-নিবাসী হিন্দু—খুব সম্ভবত্ত: তানসেনের গোষ্ঠীর—অনেক ঘর ব্রাহ্মণ গায়ক ও বাদককে মুসলমান করিয়া দেওয়ায়, বা কোন ৪ কারণে র্তাহীদের মুসলমান হইয়া যাওয়ায়, এষ্টরূপটা ঘটিয়া থাকিবে । আরও একটা কারণ থাকিতে পারে—৫য় তো তানসেন কোনও মুসলমান রমণীর প্রেমে পড়িয়া ধৰ্ম্মত্যাগ বা হিন্দুনাম ত্যাগ করিয়া থাকিবেন। একটা বাজে গল্প আছে যে তানসেনকে নিজ দরবারে আনিয়াও আকবর গান গাওয়াইতে পারেন নাই, শেষে নিজ কন্যাদান করিয়া তাহার প্রসন্নক্ত-সাধন পূৰ্ব্বক গান গাওয়াইতে পারিয়াছিলেন। এই গল্পের মূলে, প্রেমে পড়িয়া ধৰ্ম্মভ্যাগের কথা থাকিতে পারে । যাঙ্গী হউক, মোঃ স্মদ ঘোঁসের প্রভাব তানসেনের জীবনে বিশেষ ভাবেই কার্ধ্যকর হইয়াছিল বলিয়া অহমান হয় । তানসেনের মৃত্যুর পর তাহার দেহ গোয়ালিয়রের বিরাট পৰ্ব্বত-ভুর্গের পাদদেশে মেহম্মদ ঘোঁসের সমাধি-মন্দিরের পার্শ্বে উন্মুক্ত প্রাঙ্গনে সমাহিত হয় । পাথরে গাথা তানসেনের সমাধি এখন উত্তর ভারতের গায়কগণের পক্ষে এক মহাতীৰ্থস্থান ; এই সমাপির পাশ্বে একটা তেঁতুল গছ আছে, গায়কের শ্রদ্ধার সহিত এই গাছের পাতা চিবায়, তাহাতে নাকি সঙ্গীত-গুরু তানসেনের আশীৰ্ব্বাদে কণ্ঠস্বর স্বমিষ্ট ह्युम्न ? তানসেনের প্রথম যৌবনের পৃষ্ঠপোষক শেরশাহ-পুত্ৰ দৌলত থার মৃত্যুর পর তিনি মধ্যভারতের রীব (রেওয়া) রাজ্যের অন্তঃপাতী বাস্কোর রাজা রামচাদ সিংহ বাঘেলার আশ্রয়ে বহু বৎসর যাপন করেন ৷ তানসেন বহু ধ্রুপদ গানে ‘রাজা রাম’ নাম দিয়া এই রাজার যশ কীৰ্ত্তন করিয়া So&O গিয়াছেন ; ইনি তানসেনকে সম্মান ও অর্থ দান করিতেন যথেষ্ট। তানসেনের খ্যাতি ইতিমধ্যে চতুর্দিকে পরিব্যাপ্ত হয়, এবং বাদশাহ ইব্রাহীম খা আগ্রায় নিজ দরবারে র্তfহাকে আহবান করেন, কিন্তু তানসেন রেওয়া ত্যাগ করিয়া আসিতে চাহিলেন না। ইতিমধ্যে হুমায়ুন বাদশাহ আসিয়া পাঠান শেরশাহের বংশধরদের পরাজিত ও উৎখাত করিয়া ১৫৫৬ সালে পুনরায় মোগল রাজ বংশের প্রতিষ্ঠা করিলেন। আকবর নিজ রাজ্যে স্বপ্রতিষ্ঠিত হইয়া, ১৫৬২ খ্ৰীষ্টাব্দে জলালুদ্দীন ক বুচী নামে এক মনসবদারকে রেওয়ায় পাঠাষ্টয়া তানসেনকে নিজ দরবারে ডাকিয়া আনাইলেন –এবার তানসেন আপত্তি করিতে পারিলেন না। তানসেনের অবশিষ্ট জীবন আকবরের দরবারেই অতিবাহিত হয়। কোনও সময়ে নিজেকে মুসলমান-ধৰ্ম্মাবলম্বী বলিয়া স্বীকার করা : ভিন্ন তাহার জীবনে অতঃপর উল্লেখযোগ্য আর কোনও ঘটনা হইয়াছিল বলিয়া মনে হয় না । 를 তানসেন গানে অদ্বিতীয় ছিলেন-কল্প বিস্ত ও সঙ্গীতকার বলিয়া তাহার অসীম খ্যাতি-কিন্তু কবিহিসাবেও তিনি কম ছিলেন না ; তানসেন যে যুগে জীবিত ছিলেন সে যুগ প্রাচীন হিন্দী সাহিত্যের বিশেষতঃ কাব্য সাহিত্যের পক্ষে সৰ্ব্বাপেক্ষ গৌরবময় যুগ । তাহার সমসাময়িকদের মধ্যে এক দিকে ছিলেন তুলসীদাস, এবং র্তাহ অপেক্ষ অস্ততঃ এক পুরুষ প্রাচীন ছিলেন অন্ধ কবি সুরদাস । আকবরের দরবারে যেমন একদিকে ফারসী ছিল রাজভাষা, পোষাকী ভাষা—ফারসী সাহিত্যের চর্চা ও ফারসীতে ইতিহাসাদি রচনায় যেমন একদিকে আকবর ও তাহার অমাত্যগণের পূর্ণ উৎসাত ছিল, তেমনি অশুদিকে দেশ-ভাষা হিন্দীর ( ব্রজভাষার ) চর্চা ও ইহাতে কবিতা-রচনায় সম্রাট ও র্তাহার সভাসদগণের উৎসাহের অস্ত ছিল না । আকবর নিজে হিন্দীতে কবিতা রচনা করিতেন,—‘অককবর’ বা ‘অককবর সাহি” এই ভণিতায় আকবরের রচনা বলিয়া প্রচারিত কতকগুলি হিন্দী দোহা বা কবিতা পাওয়া যায়। তাহার সভাসদগণের মধ্যে রাজা বীরবল, মীরজা আৰু বৃ-রহীম খ-খানান ও বীকানেরের রাজকুমার পৃথ্বীরাজ রাঠোড়