পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা } বুলাকিলালের ইজ্জৎ S)も> বুলাকিলালের ইজ্জৎ ( > ) বুলাকিলাল আমার সঙ্গে মাটিকুলেশন অবধি পড়েছিল । মসিংস্কুলের দিনে দুপুর-বেলা আমার পড়বার ঘরে বসে হয় ত মাসিক পত্রিকার পাত্তা উল্টাচ্ছি, এমন সময় বুলাকি এসে হাজির হ’ল—রদূরে তার মুখ পাঙাশবর্ণ ধারণ করেছে, পায়ের হাটু পর্য্যন্ত ধুলো, গায়ের পনর-দিন-আগে-ধোপার-বাড়ীর-ফেরত কোর্তাটি ঘামে টস্টস করছে, টুপির ধার দিয়ে ধার দিয়ে নেড়া মাথাটির ঘাম কপাল দিয়ে গড়িয়ে নাকে ঝরে পড়ছে ! আমি বললাম, “একি বুলাকি, এই রদুরে !” বুলাকি জবাব দিল, “আরে ভাই, তুমি কি করুছ দেখতে এলাম। আমায় এক লোট জল দাও না, ভাই ।” আমি বুলাকিকে বসিয়ে চাকরকে জোরে জোরে পাখা টানতে বল্লাম । খানিক জিরিয়ে, জল খেয়ে শস্ত হয়ে বুলাকি বলল, “ওখানা কি বই পড়ছ, স্বরেন ?” আমি বললাম, “এটা একটা মাসিকপত্র।” লালজী বুঝতে পারল না, খানিক ইঁ। ক’রে থেকে - বলল, “আউটু বুক্‌ ?” আমি তাকে বোঝাতে লাগ লাম, এতে দেশের কথা, সমাজের কথা, স্ত্রী-স্বাধীনতার কথা, এই-সব আছে । স্ত্রীস্বাধীনতার কথার নাম শুনে সে চমকে উঠে বলল, “স্ত্রীস্বাধীনতা ? সে আবার কি ? মেয়ের স্বামীর অধীনে থাকুবে না ! মেমের মত রাস্তায় বেরুবে ! সৰ্ব্বনাশ !” বুলাকির সঙ্গে আমার সম্বন্ধ এই রকমই ছিল । থার্ড ক্লাসে পড়বার সময়ই বুলাকির বিয়ে হয়েছে। আমি কিনা তার সবচেয়ে “best friend”—-অন্তরঙ্গ বন্ধু, তাই আমায় সে বলেছে যে তার স্ত্রী লেখাপড় জানে। শুনে আমি বললাম, “কই, তোমার চিঠি-পত্র আসতে দেখি না ত ?” - বুলাকি আমার এই প্রশ্নে এতদূর আশ্চৰ্য্য হ’য়ে গেল যে, তার মুখ গহ্বরের পরিমাণটা যে কতখানি, আমায় তা’ ঠাউরে ঠাউরে আন্দাজ করবার অনেকক্ষণ 8 \ =s o অবসর দিল, তার পরে বল্ল, “সে কি, স্বরেন ? বউ চিঠি লিখবে—তার হাতের লেখা পিওন, পোষ্টমাষ্টার—যত পরপুরুষে দেখে ফেলবে--আরে রাম, রাম ! ( २ ) ম্যাটিকুলেশান পাশ ক’রে আমি মেডিকেল স্কুলে পড়েছি । বুলাকি বেচারীর প্রতি হৃদয়হীন ইউনিভারসিটি ন্তাষ-ব্যবহার করে নি। বুলাকি এমন স্থবিচারের অভাব দেখে আশ্চৰ্য্য হ’য়ে গিয়েছিল,— তারা পড়বার জন্তে বই ঠিক ক'রে দেয় এক, আর এক্জামিন করে যত “আউট বুক" থেকে । গরীবের উপর বড়লোকের চিরকালই অত্যাচার,— এই দেখ না অত বড় শ্রীরামচন্দ্রজী যেই গরীবের মত পোষাকে বনে গিয়েছেন, আমনি রাবণ রাজ সীতা মাইকে চুরি করে নিয়ে গেল। শ্রীরামচন্দ্রজী অযোধ্যায় রাজা থাকলে কি এমন অত্যাচার তার উপর করতে রাবণ সাহস পেত ! রেগে বুলাকি ইমৃতাহানের উপর চ’টে গিয়ে কোথায় যে ‘দেহাতে চ'লে গেল, তা' চার বছরের মধ্যে আমি আর জানতে পারি নি । মেডিকেল স্কুল থেকে পাশ ক’রেই, পাটনার কাছাকাছি এক সহরে আমি একটা পোষ্ট, পেলাম। সেখানে মাসখানেক আছি, এমন সময় হঠাৎ একদিন আবার তার সঙ্গে দেখা হ’ল, আমি কোর্টের কাছে একটা রোগী দেখতে গিয়েছিলাম। দেখি বুলাকির মত কে একজন আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে—আমি তাকে দেখে চিনতে পেরে বললাম, “আরে, লালজী নাকি ! আদা, আদাব ।” বস্তুতই সে আমাকে ভালবাস্ত । দেখা হওয়ায় ভারি খুলী হ’ল । আমি ডাক্তার হয়েছি শুনে তার আহলাদ দেখে কে ; সে হেসে বললে, “স্বরেন, আমি ত বলতামই তুমি একটা মস্ত লোক না হয়ে যাও না ! দেখলে ত আমার কথা ফল্‌ল কি না ?” হুঁ, মস্ত লোকই হয়ে গিয়েছি বটে ! শুনলাম বুলাকিলাল কোটেই সেরেস্তাদারের অধীনে চাকুরী করে, টাকা বিশেক মাইনে পায়।