পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] সাঁওতাল জাতি তী নইলে সম্ভব নয়। এদের একটা গুণ এই যে, মদ খেয়ে এরা মারামারি খুব কমই করে। ভাতই এদের খাদ্য, আর ভাতের সঙ্গে তরকারি হচ্ছে তেঁতুল, হুন, লঙ্কা, শাকভাজ, বেগুনপোড়া কিম্বা এমুনি যা-হয়-একটা-কিছু। তবে যাদের নেহাৎ ভাত জোটে না তারা জঙ্গলের খাম-আলুর মত একরকম আলু সিদ্ধ করে খায়। তাকে এরা বলে সাং । গাছে যে লাল পিপড়া হয়, সেই ভাজা এদের বেশ মুখরোচক। বাদলে-পোকার ডানা ছাড়িয়ে কাচাই এরা চিবিয়ে খায়, আর কখন বা তেজে মুড়ির সঙ্গে খায়। বনের একরকম পাতলা গোল গোল ফল এরা পুড়িয়ে খায়, সেগুলো খেতে ঠিক বিস্কুটের মত চমৎকার। কেঁদ, পিয়াল, ভেলাই ত এরা খুবই খায়। এর জমি চাষ করতে শিখেছে। আমাদেরই মত বীজ বুনে রোওয়া-পোত করে চাষ করে। এদের লাঙ্গলগুলি ছোট ছোট, ফলাখানিও এক ইঞ্চির বেশী চটাল হবে না। তাতেই যতদূর হয়, কিন্তু তাতেও ধান মন্দ হয় ন। জমি ছেচবার জন্য আমাদের মত ‘দুনি’ এদের নেই, এরা হাত দিয়ে কোন-একটা-কিছু করে ছেচে । ধান পাকুলে মেয়ে-পুরুষে গিয়ে ধান কেটে আনে। খড়ের পালুই দিতে এরা জানে না। গোল করে থাকৃ দিয়ে রাখে। ধান ঝাড়ে আমাদেরই মত, কিন্তু মরাই বাধ তে জানে না । ‘পুড়োর মধ্যে রেখে ঘরে তুলে রাখে । অস্ত্রশস্ত্রের মধ্যে তীর-ধনুকই প্রধান। পূৰ্ব্বে এর অব্যর্থ-লক্ষ্য তীরন্দাজ ছিল, এখন সভ্যতার সংস্পর্শে এসে সব ভুলে যেতে বসেছে। লোহা থেকে চার পীচ রকমের তীর এরা তৈরী করত। এখনও কুড়ল, টাঙ্গি প্রভৃতি এরা বেশ ভাল রকম তৈরী করতে পারে। এদের এই-সব অস্ত্র তৈরী করবার জন্য লোহা জাৰ্ম্মানী বা স্কটুলণও থেকে আস্ত না, এরা নিজেরাই তৈরী করে’ নিত । এদের লৌহ-প্রস্তুতপ্রণালী :– নদীর ধারে একটা কাদার ভাটি তৈরী করত। সেটার প্রায় এক তৃতীয়াংশ কাঠের কয়লা দিয়ে পূর্ণ কবুত, তার উপর এক তৃতীয়াংশ লোহার পাথর ( iron ore ) দিত, 8?)

এবং বাকিট বালী দিয়ে পূর্ণ করত। তার পর নীচে আগুন দিয়ে হাপরের হাওয়া দিত। পাথর গলে’ গিয়ে বালি ক্রমশঃ যখন নীচে নেমে যেত, তখন বুঝতে পাবৃত যে লোহা তৈরী হয়েছে। সেই লোহা থেকে ইস্পাতও তৈরী কবুত, এবং সেই ইস্পাত षांशकगत्ं) বিদেশী লোহার চেয়ে কোন অংশে হীন ছিল না। এখন এরা সে-সব তুলে যেতে বলেছে। পূৰ্ব্বে আগুন জালাতে এদের দেশলাইএর আবশ্বক হ’ত না । কাঠে কাঠে ঘষে’ এরা আগুন জালাত। এখনও অনেক স্থলে এর তাই করে। মাটিতে এক টুকরো কাঠি রেখে আর একটুকরো কাঠি হাতে করে তার উপর ঘোরায়, আর কাঠিটা গরম হয়ে আগুন হয় । সব কাঠে এটা সহজে হয় না। যে-গুলোতে হয় তা এরা জানে । এদের মাসের বা বারের কোন নাম নেই। এক এক মাসকে এরা ‘চাদো বলে, আর বছরকে বলে ‘সেরমা’। এদের মাসে ৩০ দিন । এদের সংখ্যা-গণনা কুড়ি পৰ্য্যন্ত, তার উপর নেই । ‘এক—মিট্‌, দুই—বার, তিন—পে, চার-পুত্ৰ, পাচ --মোরে, ছয়—তুরুই, সাত—এয়, আট—ইরেল, নয়— আরে, দশ–গেল, কুড়ি—ঈশি ! এর বেশী আর এদের নেই, কারণ এর বেশী গোনবার সৌভাগ্য এদের হয় নি। এগার হ’লে,-এদের ভাষায় হবে—মিটু গেল মিটু। ইত্যাদি। এদের অম্লখ খুব কম হয়। আর ডাক্তারি ওষুধও খুব কম থায়,--শক্ত ব্যারাম না হ’লে নয়। মাথা ধরলে সমস্ত কপালে এরা ভেলার টিপূ দেয়। অন্ত অমুখেও এদের ওষুধ গাছগাছড়া, আর সে ওষুধ দেয় সাওতাল বৈষ্ঠ । এত পরিশ্রম করে বলেই বোধ হয় এদের মধ্যে অমূখ এত কম । সামাজিক রীতি-নীতি কোন ঘরে ছেলে হ'লে তাকে এরা বলে “নোত। ঘর’ বা কামান ঘর। ছেলে যখন হয় তখন এরা কিছু খায় না, নাপিত এসে কামিয়ে দিলে, নেয়ে এসে এর খায়। আবার দশ দিন পরে নাপিত এসে কামিয়ে দেয়। সেদিন এর স্বজ্ঞাতিদের নিমন্ত্রণ করে হাড়িয়া, মুরগী গাঙ্গষে দেয ।