পাতা:প্রবাসী (দ্বাবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্য। ] কেউ রূপকথার রাজকন্য, কেউ কোন উপন্যাসের নায়ক, কেউ কোন নাটকের নায়িকা, কেউ ইরাণী, কেউ নরওয়েজিয়ান, কেউ জাপানী, কেউ মেকৃসিক্যান। কোনো টেবিলে কোনো কবি তার কবিতা পড়ছে, কোনো টেবিলে মুখে মুখে গল্প হচ্ছে অথবা গল্পপাঠ চলছে, ঘরের কোনো কোণে একটা ছোট অভিনয় চলছে। হঠাৎ এক কোণে -পুলিসের লাল পাগড়ী আর বিচারপতির লাল গাউন দেখে আমি চম্কে বল্লুম—ওটা কি হচ্ছে বন্ধু ? সে হেসে বল্লে—ও একটা প্রহসন হচ্ছে । তোমাদের যুগে কি রকম আইনের বিচার হোত, আমাদের ফলের দরকার হলে তারই অভিনয় করি। কাশের মতু সাদা লীলাপদ্ম-জাক কাচের থালায় বেগম রাঙা পোলাও দিয়ে গেলো। কাবাবটা মুখে দিতে বন্ধু বল্লে—ভেবো না এটা মাংস। —মাংসের চেয়ে স্বস্বাছ খেতে । —এ দেশে ত জন্তু বধ হয় না । পোলাও শেষ হতে না হতেই এক চীন-রমণী টেবিলের কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলে—কোনো চীনে ডিশ, খাবে ? —খুব খাব ৷ ড্রাগন-আঁকা একটা চীনেমাটির ডিশ, নিয়ে সে কি আনতে গেল । আমাদের পাশের টেবিলে কাবুলী-সাজ-পরা কয়েকটি যুবক মুখে মুখে এক গল্প রচনা করছিল। গল্পের স্বতোটা সবাই মিলে টেনে টেনে যখন প্রায় ছেড়ে, আমার দিকে সবাই মিলে তাকিয়েবল্লে,—ভাই, এটা শেষ করে দাওনা ! আমি কোনমতে গল্পটা শেষ করে বল্লুম,—ত গল্পটাত মুম্ব হলো না। এখানে বুঝি কোনো মাসিকপত্রের সম্পাদক নেই ? থাকৃলে নিশ্চয় তোমাদের তাগাদ দিয়ে এটা লিখিয়ে ছাড়তেন। o আমার কথা শুনে সবাই আমার দিকে অবাক হয়ে চাইল, যেন কিছুই বুঝতে পারলে না। তরণীবন্ধু একটু হেসে বল্পে—এ হচ্ছে নতুন বিদৃেশ, আমাদের দেশের কিছুই জানে না। জানো বন্ধু,Aামাদের দেশে মাসিকপঞ্জিকা আর খবরের-কাগজ নেই, এমন কি কোন ঘরে বইয়ের জালমারি নেই। লেখক লিখেই খালাস-আর সব পেয়েছির দেশে సిసిసి গল্প কবিতা শুনিয়েই তার আনন্দ। তারপর লেখা খুব ভালো লাগলে সমজুদার বন্ধুরা সেটা নিজেদের হাতে কপি করে রাখে, আর যদি অনেক লোকেরই সে লেখাটা দরকার হয় তবে সবাই মিলে প্রেসে গিয়ে নিজেরাই খেটে ছাপাখ আর বন্ধুদের উপহার দেয়। — তোমাদের তাহলে কোন মাসিক-পত্রিকা নেই ? —পত্রিকা আছে, তবে সেগুলো ঠিক মাসে মাসে বেরয় না । লেখকরা ত আর যন্ত্র নয় ?—এই যে এখানে একখানা পড়ে' রয়েছে দেখো না । পত্রিকাখানা তুলে নিলুম, ভেলভেট কাফে বাধানে, মন্থণ তুলট কাগজগুলোর উপর কি স্বন্দর হাতের লেখা ! হাতে আঁকা কয়েকখানি ছবি,—মিথ্যা বিজ্ঞাপনের বোঝা আর কলের ফিতের মত ক্রমশঃ-প্রকাশু উপন্যাস নেই।' তুষারের মত সাদা এক কাকাতুয়া আর এক কালোক ময়না কোথা থেকে উড়ে এসে আমাদের পাশে বসল। তাদের ভাগ দিয়ে খাওয়া চলতে লাগল। খাওয়া শেষ হলে বন্ধু উঠে বল্পে—তোমার তখন জলতেষ্ট পেয়েছিল, আমি সৰ্ববং করে নিয়ে আসছি, তুমি ততক্ষণ থাল-বাটিগুলো ওই জলের ধারায় ধুয়ে নিয়ে এসো । টেৰিল পরিষ্কার করে থাল-বাটি ধুয়ে সাজিয়ে রেখে দেওয়ালের ছবিগুলো দেখৃছিলুম, বন্ধু সৰ্ববং নিয়ে এলো। মধুর মত মিষ্টি, মদের মত আবেশময় সে সরবং, বন্ধুর অন্তরের প্রেমস্থধার মত স্নিগ্ধ। তাই পান করে সব বন্ধুদের আমাদের আনন্দ জানিয়ে আবার পথে বেরিয়ে পড়লুম। রজনী গভীরা, নিরালা পথ, পুষ্পৰীথিকার বাতাস আনন্দে অধীর হয়ে উঠছে, কুস্থধ্বনি থেমে গেছে। বন্ধুর হাত ধীরে টেনে নিয়ে বহুম—তোমার নামটা কি জানা হলো না ত বন্ধু!— —আমার নাম ? আমার তো কোন নাম নেই, যে যা বলে ডাক্বে তাই আমার নাম। আমার যত বন্ধু তত নাম । —আমি তোমায় কি বলব ? —যা খুলী ।