পাতা:প্রবাসী (দ্বাবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩১২ হইবে। অবশু, যদি কেহ বেসরকারী ভাবে ঐ অভাব দূর করিতে পারেন, তবে সে ভিন্ন কথা। রাজনীতি হিসাবেও এইরূপ অবিচারিত বাধা দিবার প্রণালী উৎকৃষ্ট নয়। কারণ, গবর্ণমেণ্ট যাহা করিয়া দিতে চাহিতেছেন, তাহা নিজে করিবার সাধ্য যদি না থাকে, তবে কেবলমাত্র বাধা দেওয়ার জন্য ধিনি বাধা দিয়াছেন, তাহার প্রতি দেশের লোক শ্রদ্ধা ও সহানুভূতি হারাইবে । দেশের ছোট বড় অনেক অভাবই গবর্ণমেণ্ট মোচন করিতেছেন। কি উদ্দেশ্বে করিতেছেন, বলা কঠিন হইতে পারে। কিন্তু দেশে কি এমন বে-সরকারী লোক আছেন, উক্ত সব অভাব মোচন করিবার উপযুক্ত আর্থিক বল, বন্দোবস্ত ও শৃঙ্খলাবদ্ধ কৰ্ম্মী যাহার বা র্যাহাদের হাতে আছে ? এমন লোক আছেন বলিয়া আমাদের মনে হয় না। স্বতরাং ব্যবস্থাপক সভায় বসিয়া নিৰ্ব্বিচারে সব তাতে বাধা দিলেই কাজ হইবে না। কেবল যদি দলের জয়লাভের কথাই ভাবা যায়, তাহা হইলেও এই নীতি খুব সফল হইবার কথা নয় । কারণ গবর্ণমেণ্ট ইচ্ছা করিলেই ব্যবস্থাপক সভা সম্বন্ধীয় আইন পরিবর্তন করিতে পারেন। ব্রিটিশ পালেমেণ্টে যে-সকল আইরিশ সভ্য ছিলেন বা আছেন, তাহারা বাধা দিবার নীতি অবলম্বন করিয়া যে আয়ারল্যাণ্ডের প্রভূত উপকার সাধন করিতে পারিয়াছিলেন, ७ीश्वन नग्न ! কোন কোন অসহযোগীর মনে এই ভয় থাকিতে পারে, যে, তাহারা যদি ব্যবস্থাপক সভায় প্রবেশ করিয়া গবর্ণমেন্টের যথার্থ বা আপাত-প্রতীয়মান হিতচেষ্টার সহযোগী হন, তাহা হইলে লোকের মনে এই বিশ্বাস উৎপাদন করা হুইবে, যে, গবর্ণমেণ্ট সম্পূর্ণ শয়তানী নয়, উহার ভিতর চাল কিছুও থাকিতে পারে। এবং এইরূপ বিশ্বাস হইলে তাহাজের মনে পর-রাজের পরিবর্তে স্ব-রাজ পাইবার প্রবল আকাঙ্ক্ষা হ্রাস পাইতে পারে। আমাদের কিন্তু এ প্রকার ভয় নাই । বিদেশী শাসন যতই উৎকৃষ্ট হোক না কেন, মানবজীবনের চরম লক্ষ্য সৰ্ব্বাঙ্গীন মাত্মকর্তৃত্ব-বিকাশ সম্বন্ধে তাহা কখনই স্বায়ত্তশাসনের সমান হইতে পারে না । আমাদের বিশ্বাস এই যে, উহার অভিপ্রায় যতই সং হোক না, প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৩২৯ [ ২২শ ভাগ, ১ম খণ্ড কোন বিদেশী গবর্ণমেণ্টের কক্ষে শাসনের সৰ্ব্বোচ্চ লক্ষ্য সম্বন্ধে সম্পূর্ণ আদর্শাহুরূপ o সম্ভব নয়। অবশ্ব বিদেশী শাসকেরা যদি এই পণ করিয়া আসেন, যে, যতশীয় সম্ভব তাহার অধীন জাতিকে স্বায়ত্ত-শাসনে শিক্ষিত করিয়া তাহাদের হাতে শাসনভার সম্পূণভাবে অর্পণ করিয়া বিদায় হইবেন, তাহা হইলে তাহারা সফল হইতে পারেন। ইংরেজ গবর্ণমেণ্টের এমন কোন উদ্বেগু এপর্য্যন্ত । প্রকট হয় নাই। কিন্তু আমরা কাহাকে শাসনের সৰ্ব্বশ্রেষ্ঠ লক্ষ্য মনে করি, তাহা এখনও বলা হয় নাই। জনসাধারণকে শরীর মন ও আত্মার সর্বাঙ্গীন উন্নতিসাধনের সুবিধা দেওয়া ও এই উন্নতির পথের সকল বাধা দূর করাই শাসনব্যবস্থার সৰ্ব্বোচ্চ লক্ষ্য হওয়া উচিত। সৰ্ব্বাঙ্গীন বিকাশ বলিতে রাজনৈতিক ক্ষমতার পূর্ণ বিকাশও অবশ্যই বুঝায়। স্বতরাং দেখা যাইতেছে, যে, গবর্ণমেণ্ট যদি বিদেশী হন, তবে আপনার সদভিপ্রায় প্রমাণ করিতে হইলে, শাসিত লোকদের হাতে কোনও না কোন সময়ে তাহীদের দেশের কার্য্যভার সমর্পণ করিতে হইবে। বিদেশী গবর্ণমেণ্টকে, প্রজার স্বায়ত্তশাসনে যথেষ্ট শিক্ষিত হইলেই এইভাবে ভার সমর্পণ করিবার জন্য প্রস্তুত থাকিতে হইবে এবং সে-দিকে লক্ষ্য রাখিয়া চলিতে হইবে। পরাধীন জাতির শিক্ষানবীশীর । সময় বড়-জোর এক পুরুষের জীবিতকাল পর্য্যন্ত ; কিন্তু, অৰ্দ্ধশতাব্দীতেও যাহারা নিজেদের অধীন দেশকে স্বশাসক করিয়া ছাড়িয়া দিতে পারে না, সেইসব বিদেশী শাসকদের সদভিপ্রায়ে বা স্বশাসনদক্ষতায়, কিম্বা উভয়েই সন্দিহান হওয়া অষ্ঠায় নহে । আমাদের বিশ্বাস এই, যে, গবর্ণমেণ্ট বিদেশী হইলেই তাহার মূল্য অনেক কমিয়া যায়, কারণ, শাসনতন্ত্রবিশেষের শ্রেষ্ঠত্বের সার অংশ হইতেছে উহার স্বায়ত্ততা । বিদেশী শাসন আর যত স্থখ-সুবিধাই দিক্‌ না কেন, তাহা যতই মূল্যবান হোক না কেন, তাহা স্বশাসন-শক্তির . সমতুল্য হইতে পারে না। নিজেরাই নিজেদের নিয়ামক, পরিচালক ও রক্ষক হওয়া অপেক্ষ উংকৃষ্ট সম্পত্তি মানুষের নাই। e অধীন জাতিকে এই সার ধন হইতে বঞ্চিত না করিয়া কোন বিদেশী গবর্ণমেণ্ট