পাতা:প্রবাসী (দ্বাবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

రిఫ్చి8 প্রবাসী—আষাঢ়, ১৩২৯ [ ২২শ ভাগ, ১ম খণ্ড সভায় ধৰ্ম্মপূজা সম্বন্ধে আলোচনা করবার সময়ে আচার্ধ্য রবীন্দ্রনাথ লেখককে ‘যোগীর কাচ' নামে এক খানি খাতা পরীক্ষা করবার জন্য দেন। এই গানের মধ্যেও ধর্শ্ব-পূজার স্বষ্টিতত্বের প্রভাব দেখতে পাই। সেই গানগুলি সম্বন্ধে ভবিষ্যতে আলোচনা করব। ধৰ্ম্মপূজার প্রভাব কতদূর গিয়েছিল সেই গানগুলি হতে স্পষ্ট হবে। প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় চরকা ও খদ্দর চরকা সম্বন্ধে অনেক লেখা পড়া হইয়া গিয়াছে, প্রায় প্রত্যহ কোথাও-না-কোথাও ব্যাখ্যান চলিতেছে । তথাপি এখনও অনেকের সংশয় আছে । সংশয়ীর হেতু এই–(১) প্রচলিত সমাজ-সংস্থার বিপরীত কিছু ভাবিতে ও করিতে হইলে প্রষত্ব চাই ; অনেকের প্রধত্ব করিবার শক্তি নাই। (২) কলের শত শত অশ্বশক্তির দ্বারা যে কম সম্পন্ন হইতেছে, মানুষের দুইখান হাত দিয়া সে কম হইতে পারে কি ? (৩) যদি বা লক্ষ লক্ষ লোকের হাত লাগানা যায়, তা হইলেণ্ড হাতের কাজের দাম বেশী পড়িবেই পড়িবে। কারণ কলের কয়লা খরচের চেয়ে মানুষের খোরাকের খরচ বেশী। ( s ) বিলাতের সহিত যদি টক্কর দিতে হয়, বিলাতী কল বসাইতে হইবে। বিলাত যদি শতন্ত্রী বাণ ছুড়িয়া লড়াই করে, আমাদিগকেও শতঘ্নী বাণ বাহির করিতে হইবে। কারণ শতীর মুখে লে-কেলে ঢাল-তলোয়ার টিকিবে না। (৫) পেছু হট নয়, আগে চল। নূতন থাকিতে পুরাতন কে চায় ? কারণ পুরাতনে কুলায় নাই বলিয়াই নূতনের উৎপত্তি। ইত্যাদি। “ইত্যাধি” পড়িয়া কেহ চমকাইবেন না। প্রবল বাধা “ইত্যাদির মধ্যে লুকাইয়া আছে। (৬) চরকার স্বতা মোট । এত কাল সরু পরিয়া এখন এই বয়সে মোট পরিতে পারা যাইবে না। অঙ্গে সহিবে না, সাজিবে না। গ্রীষ্মদেশে গায়ে সৰু কাপড় রাখাই কষ্টকর। (৭) অঙ্গে মানাইবে না। চরকার পুঞ্জি ১০১২ নম্বরের স্বতা। সে স্থতার কাপড় যদি সকলকেই পরিতে হয়, ভদ্রলোকের ভদ্রত রক্ষা হইবে না, কে ছোট কে বড়, চেনা বাইবে না। (৮) শুনিতেছি, ঢাকা শান্তিপুর ফাক ভাঙ্গ রামজীবনপুর প্রভৃতি প্রসিদ্ধ আড়ঙ্গের তাতীর মোটা স্থতায় কাপড় বুনিতে পারে না। সরু স্বতায় তাদের হাত। বিলাতী সরু স্বতা বন্ধ হইলে তারা মারা যাইবে । তা ছাড়া, দেশের শিল্প সব ত গিয়াছে, এখন যেটুকু আছে, সেটুকুও নষ্ট করিতে হইবে কি ? (৯ ) যদি দেশে স্বতা-কাটা ও কাপড়-বোন কল বসাইতে পার, ভাল। না পার,—” তিন বৎসর পূৰ্ব্বে যখন বৰ্ত্তমান স্বদেশীর তরঙ্গ বহে নাই, কিন্তু বস্ত্রচিন্তা আরম্ভ হইয়াছিল, তখন “ভারতবর্ষে’ ( ১৩২৫ কার্তিক) ও “প্রবাসীতে” ( ১৩২৫ কীর্তিক) চরকার ও মোট কাপড়ের অনেক গুণ গাহিয়াছি । তখন সে গান, অরণ্যে রোদন হইয়াছিল। তার পর দেড় বৎসরের মধ্যে এক যুগ চলিয়া গিয়াছে, যেন চিরকুদ্ধ শ্বাসের কপাট খুলিয়া গিয়াছে। আশঙ্কাও হয়, " শোকের উপশম হইলে চরকারও অবসান হইবে। কারণ উল্লিখিত আপত্তিগুলি অসার নহে। বাদী বলিতেছে, পুরাতনে ফিরিয়া চল। প্রতিবাদী বলিতেছে" তা কি আর পারি। বাদী বলিতেছে, কলকারখানার কলহ লাগিয়াই থাকিবে, সে অশান্তি হইতে মুক্ত হও । প্রতিবাদী বলিতেছে, আমি ইচ্ছা করিলেই কি মুক্ত হইতে পারি? আমি কি ইচ্ছা করিয়া ঘূর্ণিপাকে ঘোর থাইতে যাইতেছি । কল চলিবেই, ভাতে-মারা' হইতে প্রাণে-মারা পৰ্য্যন্ত । বাদী বলিতেছে, সে কি, তুমি যে চিরমুক্ত, আপনাকে তুলিতেছ কেন ? প্রতিবাদী এ-সব তত্ত্ব বুঝিবে না। তাই তাহাকে দেশের দারিদ্র্য ও অর্থনীতির উপদেশ স্মরণ করাইতে হইতেছে। ն ©*