পাতা:প্রবাসী (দ্বাবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্য। ] জুম্ভের মুখের দিকে তাকাইও না, বাহিরের সফলতার দিকে তাকাইও না । বিশ্বজিং যখন জানাইলেন—“তোমার শিবতরাইয়ের ভক্তদল যে তোমার কাজে হাত দেবার জন্যে অপেক্ষা করে আছে, তাদের ডাকৃবে না ?” অভিজিৎ বলিলেন—“যে ডাক আমি শুনেছি সেই ডাক যদি তারাও শুনত তবে আমার জন্যে অপেক্ষা করত না। আমার উাকে তারা পথ ভুলবে।” নিজের সম্বন্ধে যুবরাজের মনে কিন্তু কখনও সন্দেহ মাত্র হয় নাই, প্রথম হইতে শেষ পৰ্য্যন্ত র্তাহার সংকল্প স্থির, তাহার বিশ্বাস আচঞ্চল। অস্বাকে বলিলেন, স্বমন যে পথে গিয়াছে তিনি নিজেও সেইপথেই যাইবেন । অম্বা বলিল—“যখন তার দেখা পাবে, বোলো মা তার জন্যে পথ চেয়ে আছে।” পরিপূর্ণ ভরসায় যুবরাজ শুধু একটি কথা বলিলেন—“বলব।” যাইবার সময়ে বিশ্বজিং যখন বড়ই ব্যাকুল হইয়া বলিলেন—“কেবল একটি আশ্বাসের কথা বলে যাও যে, আবার মিলন ঘটবে।" অকম্পিত চিত্তে যুবরাজ উত্তর দিলেন—“তোমার সঙ্গে আমার বিচ্ছেদ হবার নয় এই কথাটি মনে রেখো।” হৃদয়ে অপরিমিত শান্তি লইয়া যুবরাজ চলিয়া গেলেন। কুমার সঞ্জয় মুক্তধারার নিকটেও অভিজিতের জন্য অপেক্ষা করিতেছিলেন, কিন্তু অভিজিৎ কুমারকে আর অগ্রসর হইতে দিলেন না, এক চলিয়া গেলেন। সমস্ত দুঃখ সমস্ত পাপের সম্মুথে যেন একাই দাড়াইতে চাহিলেন । “দুঃখেরে দেখেচি নিত্য, পাপেরে দেখেচি নানা ছলে ; অশাস্তির ঘূর্ণি দেখি জীবনের স্রোতে পলে পলে ; মৃত্যু করে লুকাচুরি - সমস্ত পৃথিবী জুড়ি। ভেসে যায় তা'রা সরে যায় জীবনেরে করে যায় ক্ষণিক বিদ্ধপ । আজ দেপ তাহাদের অভ্ৰভেদী বিরাট স্বরূপ ! তা’র পরে দঁাড়াও সম্মুখে, @ বল অকম্পিজ্ঞ বুকে,— পথ-মোচন S)8S ‘তোরে নাহি করি ভয়, এ সংসারে প্রতিদিন তোরে করিয়াছি জয় । তোর চেয়ে আমি সত্য এ বিশ্বাসে প্রাণ দিব, দেখ ! শাস্তি সত্য, শিব সত্য, সত্য সেই চিরন্তন এক ? " যুবরাজ অভিজিং জীবনের চরম মূল্য দিয়া সমস্ত মানুষের জন্ত পথ মোচন করিয়া দিলেন, নিজের প্রাণ উৎসর্গ করিয়া ভৈরবকে জাগাইলেন । * এইরূপ করিয়াই ভৈরবের জাগরণ হয়। স্বার্থের বন্ধনে জর্জর হইয়া, রিপুর আঘাতে আহত হইয়া মানুষ যর্থন প্রত্যেকে পাশের লোককে আঘাত করে ও আঘাত পায়—সেই প্রত্যেক আমির ক্ৰন্দনধ্বনি ভয়ানক বিশ্বযজ্ঞের মধ্যে সকল মানুষের প্রার্থনারূপে প্রলয়-নৃত্যে গর্জন করিয়া উঠে । "মরণের গান উঠেচে ধ্বনিয়া পথে নবজীবনের অভিসারে ঘোর অন্ধকারে— যত দুঃথ পুথিবীর, যত পাপ, যত অমঙ্গল যত অশ্রািজল,— যত হিংস হলাহল সমস্ত উঠেচে তরঙ্গিয়া কুল উল্লঙ্ঘিয়া, উৰ্দ্ধ আকাশেরে ব্যঙ্গ করি ।” মাহুষ বলে, “জাগো, ভৈরব জাগো ! কঠিন আঘাতে সকল আঘাতকে নিরস্ত কর । সমস্ত বিশ্বের পাপ হৃদয়ে হৃদয়ে ঘরে ঘরে দেশে দেশে পুঞ্জীভূত—তুমি আজ সেই পাপ মার্জন কর ।” সঞ্চিত বিশ্বপাপ যখন বিকটমূৰ্ত্তি ধারণ করে, প্রেমিকের আত্মনিবেদনে ভৈরব তখন জাগিয় উঠেন । মে মাসের Modern Review পত্রিকায় “মুক্তধারার" ইংরেজি অনুবাদের পরিশিষ্টে রবীন্দ্রনাথ নিজে লিথিয়াছেন—“I must ask my readers to treat it as a representation of a concrete fact of psychology” 47; Tants *fefnast cq afişşettfŘā প্রধান পাত্র এরূপ আভাস দিয়াছেন। এইজন্মই এতক্ষণ আমরা যুবরাজ অভিজিতের কথা আলোচনা করিয়াছি। "মুক্তধারা" নাটকখানির মধ্যে অবখ্য অস্তান্ত অনেক কথা আছে, সুবিধা হইলে পরে সে সম্বন্ধে আলোচন কৰিবাব ইচ্ছ। রছিল ।