পাতা:প্রবাসী (দ্বাবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা 1, কথাগুলি কিন্তু যতীনের কানে পৌছিল। অতি সাধারণ কয়েকটি কথা, কিন্তু প্রতি কথা গানের মুরের মত তাহার কানে বাজিয়া উঠিল 1 যোগেশ-বাবু যতীনের মুখের দিকে চাহিলেন, কিন্তু যতীনের মুখে কোন কথাই যোগাইল না। সে বোধ হয় হতবাকষ্ট থাকিত । গুমোট আকাশে হঠাৎ ফুরফুরে বাতাসের মত রমলা ঘরে প্রবেশ করিল, কাহারও দিকে যেন না চাহিয়া সে বলিল,— একখান মোটয়কার আমাদের বাড়ীর সাম্নে খালি পড়ে রয়েছে, সেখানায় চড়ে বেড়িয়ে এলে হয় না কাজী সাহেব ? যতীন একটু আশ্চৰ্য্য হইয়। নবাগতার মুখের দিকে চাহিল, এ মুখ যেন তাহার পরিচিত। রমলাও তাহার চপলদৃষ্টি দিয়া যতীনকে বুঝাইয়া দিল তাহাকে সে চিনিয়াছে, কিন্তু তাহাদের পরিচয় এখন সবাইয়ের সম্মুখে জানাইতে সে মোটেই রাজি নয়। রমলার মনে পড়িল এই ছেলেটিই ত তাহার দাদার ছেলেবেলার বন্ধু ছিল, কতদিন তাহার দাদ৷ ইহাকে তাহাদের বাড়ীতে নিমন্ত্রণ খাওয়াইয়াছে, সে পরিবেষণ করিয়াছে। তাহার দাদার বিলাত-যাত্রার পর যতীন রমলার কোন সন্ধান লয় নাই। কাজেই তাঁহাদের আর দেখা হয় নাই । মৃদু হাসিয়া রমলা আবার বলিল,—আচ্ছ, রাস্তায় RFftal unclaimed property wi’ vigoitza eta হয় কাকাবাবু ? যে প্রথম পায় তার ত ? রজত মৃদ্ধ হাসিয়l. বলিল,—ওটা unclaimed Ril, ওর স্বত্বাধিকারী এই সশরীরে, আমার বন্ধু— —তাই নাকি, আমি ভেবেছিলুম দিব্যি লাভ হল, বিকেলে বেড়াতে যাওয়া যাবে— যতীন বিনীতশ্বরে বলিল,—ত। ওটা আপনারই disposalএ রইলো । আপনি কোথায় বেড়াতে যেতে চান ? আপাততঃ এ দুপুর রোদে কোথাও যেতে চাই না, বলিয়া রমলা পিয়ানোর পাশে একটা ইংরেজী ম্যাগাজিন টানিয়া লইয়া বসিল, এই সওয়া পাচ ফুট দীর্ঘ গীটার্গেট গোলগাল-মুখ বাঙ্গালীসাহেবটির প্রতি আর কোনরূপ মনোযোগ দিবার আবখ্যক বোধ করিল না । রমল৷ లNు যতীনকে বলিলেন,—আপনি যোগেশ-বাৰু ধীরে কোথায় আছেন ? ==ডাক-বfং লোয় । —দুপুরে এইখানেই থেয়ে ধাবেন, মোটরটা ত অচল ইয়ে পড়ে রয়েছে । মাধবী রজভের দিকে ক্ষণিকের জন্য চাহিয়া বলিল,— আন পনার বন্ধু এখানে খেয়ে যাবেন না ? রজত যতীনের দিকে ফিরিয়া বলিল,—যতীন, বেলা ত অনেক হয়েছে, আবার মোটর সারাবে—দুপুরে আমাদের এখানেই খেয়ে যাও । রমলা দূর হইতে কৌতুকভর চোখে চাহিয়া বলিল,— আপনি এখানে খেয়ে গেলে মিস ঘোষ ভারি খুসি হবেন। এইরূপ বলার ভঙ্গীটা মাধবীর মোটেই পছন্দ হইল না, তাহার মুখ রাঙা হইয়া উঠিল। কাজী সাহেব ঠোট মুচকাইয়া হাসিয়া বলিলেন,— আপনার কি কোন কাজ আছে ? এরূপ অবস্থায় এরূপ ভাবে অমুরুদ্ধ হইলে কেহ খাইয়৷ যাইতে অসম্মত হইতে পারে কি না জানি না, যতীন অসম্মতি জানাইতে পরিল না । সে মাধবীর রাঙা মুখের দিকে নিমেষের জন্য তাকাইয়া বলিল,—ন, কাজ আর কি, kindly যদি একটা চাকর দেন মোটরটা ঠিক করে পথ থেকে সরিয়ে রাখি । মাধবী ধীরে বাহির হইয়া গেল, যতীন সম্মুখের দরজার দিকে চাহিয়া রহিল । কিছুক্ষণ পরে দুইজন কুলী লইয়৷ মনিয়া হাজির হইতেই ধতীন উঠিয়া চলিয়া গেল । যোগেশবাবু স্নান করিতে বিদায় লইলেন, কাজীসাহেবও উঠিলেন । সকলে চলিয়া গেলে, জানলার পাশে রমলাকে এক দেখিয়া রজতের হৃদয় দুলিয়া উঠিল, তাহার কেমন ভয় হইল, ঘর ছাড়িয়া চলিয়া যাইবার ইচ্ছা থাকিলেও যাইতে পারিল না। রমলার মরালগ্রীবার উপর ক্রীম্‌রংএর ব্লাউজের প্রান্তরেখা কি স্বন্দর, ঠিক তাহার উপর কালোচুলের খোপা সন্ধ্যাকাশে বিদ্যুৎভর মেঘন্তুপের মত জমিয়াছে, সেই কবরীর রহস্যময় দিব্যশ্রীর প্রতি তাহার চোখ বার বার গিয়া পড়িতেছিল ।