৪র্থ সংখ্যা ] গরুরগাড়ীখানি যখন নদী পার হইয়া অপর তীরে আসিয়া পৌছিল তখন পান্ধী সম্মুখে বহুদূর পথ অগ্রসর হুইয়া গিয়াছে। রজত দূরে মরীচিকার মত পান্ধীর আলোর দিকে চাহিয়া রহিল। গাড়ী মৃদু আৰ্ত্তনাদে চলিতে লাগিল । দূরে অন্ধকারে গাছের ছায়ায় একটি ছোট গ্রাম স্বযুপ্ত, মাঝে মাঝে এক-একটা গাছ যেন পথের ধার হইতে মুখ বাড়াইয়। আবার অদৃপ্ত হইয়া পড়িতেছে, অন্ধকারের ভিতরে হরিণের পাল কোথায় ছুটিয়া গেল । যাত্রাপথের বিভীষিকা যেন কাটিয়া যাইতেছে, বিরাট শূন্তত প্রাণের হিল্লোলে পূর্ণ হইয়া উঠিতেছে-লক্ষকোটি তারার গমনাগমনের ছন্দ, কত শত কীটপতঙ্গের রিনিঝিনি। এ পৃথিবী জুড়িম্বা যাত্রার সহিত রজতও চলিয়াছে । ধীরে বঁাশীটি লইয়া রজত একটি গানের সুর বাজাইতে লাগিল, পিছনে-ফেলা নদীর কালে জল যেন বালুতটের কানে কানে তাহারি গানের কথা কহিয়া যাইতে লাগিল,— “আমি তোমায় যত শুনিয়েছিলাম গান ভার বদলে আমি চাইনি কোন দান ।” সম্মুখপথে পান্ধীতে বসিয। রমলা পান্ধীবেহারাদের করুণ গুঞ্জরণধ্বনির স্বরে স্বরে গাহিতেছিল— “এইটুকু মোর শুধু রইল অভিমান, ভুলতে সে কি পার তুলিয়েছ মোর প্রাণ ।” পান্ধী ও গরুর গাড়ী চলিয়াছে, আলো-অন্ধকারের ম্রোতের ভিতর দিয়া । দুই ধাত্রী পরস্পর হইতে বহুদূরে, তবু তাহারা পরস্পরের সঙ্গ অনুভব করিতেছে। একে একে তারা নিভিয় যাইতেছে, জ্যোৎস্ব মান হইয়া আসিতেছে, বাতাস থামিয়া গিয়াছে। আসমুদ্র চন্দ্রভাগ উষার আলোক-আঁধারে স্তব্ধ। জ্যোতিৰ্ম্ময় সন্তান জন্মের প্রসববেদনার মত সমস্ত আকাশ কঁাপিতেছে । পূৰ্ব্বাকাশে রক্তবিন্দুর মত এক অগ্নিস্ফুলিঙ্গ জলিয়া উঠিল, ধীরে ধীরে দিকে দিকে অগ্নিশিখা নাচিয় উঠিভুেছে। 齡 鬱 রন্ধত গাড়ী হইতে নামিয়া,লাঠি হাতে করিয়া রমলা S AAAAAA AAAA SAAAA S SAAAS AAAAA SAAAAM MA AM AM MMe eeSAT MMAeeeeAM 8వలి পূৰ্ব্বকাশে অনল-ভরা মেঘস্তুপের দিকে,চাহিয়া গাড়ীর আগে আগে চলিল। কাধ বদলাইতে সম্মুখে পান্ধী একবার থামিল, তাহার তরুণী আরোহিণী নামিল, উষার রক্তমায়ায় রজত তাহার স্বপ্নমূৰ্ত্তি আবার দেখিতে পাইল । হাজারিবাগের পথের সেই সন্ধ্যীর কথা মনে পড়িল । সেই যে অন্ধকার রাত্রির দিকে ঝুঁকিয়া-পড়া তীর-বেঁধা নীড়-হারা পার্থী যাত্রা করিয়াছিল, সে যেন জ্যোতিৰ্ম্ময় লোকের দ্বারে আসিয়া পৌঁছিয়াছে, সমুদ্রের জলে স্নাত নিৰ্ম্মল দুই পাখা মেলিয়া আবার নব আলোকের যাত্রা সুরু করিয়াছে । আকাশবীণার স্বর্ণতন্ত্রীতে আলোকেরু জয়গান বাজিয়া উঠিল ; পৌছিয়াছে, অন্ধকার রাত্রি পার হইয়৷ জ্যোতিৰ্ম্ময়ের দ্বারে আসিয়া পৌছিয়াছে। তিমিরদুয়ার উন্মুক্ত করিয়া তিনি আবিভূত হইয়াছেন। গলিত সোনার মত আলোর ধারা পূৰ্ব্বাকাশ হইতে ঝরিয়া পড়িয়া সমুদ্রতরঙ্গে রক্ত-তরঙ্গের মত গড়াইয়া আসিতেছে, রাত্রির কালো পাথরের উপর রাঙা আলোর তরঙ্গ আছাড়িপিছড়ি পড়িয় ভাঙ্গিয়া ধূলিসম চূর্ণ বিচুর্ণ হইয়া দিকে দিকে ছড়াইয়া যাইতেছে, বালুভূমি স্বর্ণরেণুর মত ঝিকিমিকি করিতেছে, চন্দ্রভাগার তীৰ্থজল রক্তচন্দন-স্রোতের মত । দেখাইতেছে। কোনার্কের মন্দির পূজাপ্রদীপের শিখার মত জলিতেছে। তাহাঁর ভগ্নচুড়ায়, তাহার মরুশয্যানিমগ্ন পাথরগুলিতে তাহার বনশিখরে আতপ্তরক্তের প্রলেপ মাখানে, রঙ আকাশের পটে পূজারত সাধক-মুঠির মত আঁকা। স্বৰ্য্য-দেবতার প্রতি মানব-অন্তরের চিরন্তন বন্দন, শিল্পীর এই মানস-কমল ধরণীর বুক হইতে উচ্ছ্বসিত জয়গানের মত এই জনশূন্ত সমুদ্রকুলে বালুভূমে শতাব্দীর পর শতাব্দী জাগিয়া আছে, দিনের পর দিন নব নব যাত্রীদলের কানে• কানে পাথরের বন্দনাগ্লান বাজিয়া উঠিতেছে,—জয়, আলোর জয়, স্বৰ্য্যদেবতার জয় ! রাঙা আলোর মায়া ধীরে ধীরে কাটিয়া যাইতেছে। দুধের মত সাদা আলো, চারিদিকে প্রখর প্রদীপ্ত আলো । তরুণী পান্ধীর ভিতর উঠিয়া বসিয়াছে ছয় বেয়ার