পাতা:প্রবাসী (দ্বাবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] কয়েক লেকেও উর্মীরাণী আমায় চিনতে পারলে না, তার পরই যেন স্থাপিয়ে বলে উঠল—“দাদ! -” . অন্য কোনো কথা তার মুখ দিয়ে বেরুল না, প্রদীপটা কোনো রকমে নামিয়ে রেখে সে এসে আমার পায়ের উপর উপুড় হয়ে পড়লো । আমি তাকে ওঠালুম, তার মুখে দেখলুম এক অপূৰ্ব্ব ভাব। মনে হোলো—আনন্দ বিস্ময় আশা অভিমান সব ভাবের রংগুলো একসঙ্গে গুলে তার প্রতিমার মত মুখে কে মাখিয়ে দিয়েছে। বৃদ্ধ বললেন, “বাবা, তুমিই আস না, বৌমা দাদা বলতে অজ্ঞান। কত দুঃখ করে, বলে, কলকাতায় থাকলে দাদার মাঝে মাঝে দেখা পেতাম, এ তেপান্তরের পুর, তিনি আসূবেন কেমন ক’রে। বৌম, সতীশকে আগে হাত মুখ ধোবার জলটল দাও, বাছা একটু ঠাণ্ডা হোক, যে श्रृंथ !” হাত মুখ ধোয়ার পর উমারাণী একটা ঘরের মধ্যে আমায় নিয়ে গেল। আমি যে এখানে এ অবস্থায় হঠাৎ আসবো তা সম্ভাবনার সীমার সম্পূর্ণ বাইরের জিনিষ, অন্ততঃ তার কাছে৭ তাই বেচারীর মুখ দিয়ে কথা বার হচ্ছিল না। তার আবেগকে স্বাভাবিক গতিলাভের সুযোগ দেবার জন্যে আমিও কোনো কথা বলছিলুম না। একটুখানি দুজনে চুপ ক’রে থাকার পর উমারাণী বললে, “দাদা, এতদিন পরে বুঝি মনে পড়লে ?” আমি আগেকার মত তার মাথার দুপাশের চুলগুলোয় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললুম, “রাণী, আসতে পারিনি হয়তো নানান কাজে । কিন্তু এ কথা মনে ভাবিস্নি ষে ভুলে গিয়েছিলুম। চেহারা যে একেবারে শুকিয়ে গিয়েছে রে, বডড কি অস্থখ-বিসুখ হয় ?” আট বচ্ছর আগেকার সেই ছোট মেয়েটির মত মুখ নীচু করে একটুখানি হেসে সে চুপ করে রইল। জিজ্ঞাসা কবুলুম, “আচ্ছ। রাণী, আমি আসবে একথা ভেবেছিলি ?” . তার দুই চোখ, জলে ভরে এল, বললে, “কি ক’রে ভাবৰে দাদা? লুমি আপনাদের আবার দেখতে পাবে, উমারাণী AMAMAMAMM SMMMMMS MMMAMAMAMAMMAAMAMMAAAS (tఫిలి আদর যত্ন করতে পারবো, এমন কপাল যে আমার হবে, তা কি ক’রে ভাববো ?” @ এলোমেলো যে-সব চুল তার ঘোমটার আশে পাশে পড়েছিল, সেগুলো সব ঠিক-মত সাজিয়ে দিতে দিতে বললুম, “সেইজন্যেই ত এলুম রে। আর তোদের দেখবার ইচ্ছে বুঝি আমার হয় না ? ভাবিস বুঝি দাদাদের মন সব সানবাধানে ৷” সে বললে, “তাই আজ ২/৩ দিন থেকে আমার বা চোখের পাতা অনবরত নাচছে দাদা। আজ ওবেলা যখন ঘাটে যাই তখন বডড নেচেছে । পিসিমাকে বলতে পিসিমা বললেন, মেয়েমানুষের বা চোখ নাচলে ভাল হয়।” আমি বললুম, “আমার কথা ভোর মোটেই মনে ছিল না, না রে রাণী ?" সে একথার কোনো উত্তর দিল না, তার ছচোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো। জিজ্ঞাসা কবুলুম, “হ্যা রে, স্বরেন বাড়ী থেকে গিয়েছে কতদিন ?” সে নতমুখে উত্তর দিল, “প্রায় ৮ মাস।” বললুম, “চিঠি পত্র দেয় ?” উত্তরে সে ঘাড় নেড়ে জানালে—ই । তার মুখের ভাবে বুঝলুম যে তার বড় ব্যথার স্থানে আমি ঘা দিচ্চি, দুঃখিনী বোনটির এলোমেলে৷ চুলে ঘেরা মুখখানির দিকে তাকিয়ে স্নেহে আমার মন গ’লে গেল। রুমাল বের ক'রে তার চোখের জল মুছিয়ে দিলুম। কত রাত তার এই রকম চোখের জলে কেটেছে, তার খোজ তে কেউ রাখেনি, তার সাক্ষী আছে কেবল আকাশের ঐ গহন অন্ধকার, আর চারিপাশের গাছপালার মধ্যেকার ঐ ঝিঝি পোকার রব। উমারাণী জিজ্ঞাসা করলে, “দাদা, এখন আপনি কোথায় থাকেন ?” আমি বললুম, “আগে নানাজায়গায় ঘুরছিলুম, এপন ঠিক করেছি কলকাতাতেই থাকবে। ” সে বললে, “আপনি বিয়ে করেছেন, দাদা ?” বললুম, “ন রে। বিয়ের তাড়াতাড়ি কি ? সে এক দিন কোরলেই হবে।”