পাতা:প্রবাসী (দ্বাবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা] বরণ ক'রে রেখেছে, শীগগির ওকে বেরিয়ে পড়তে হবে অনন্তের পথের তীর্থযাত্রায় । উমারাণী এক গ্লাস জল দিতে আমার ঘরে ঢুকলো। জল নামিয়ে রেখে বললে, “কৈ, দাদা, সে পাজিখানা ?” তার মুখখানির দিকে চেয়ে বড় মন কেমন ক’রে উঠলো। বললুম, “রাণী, এদিকে আয়।" একথা আমার মনে উঠলো না যে উমারাণী আমার আপন বোন নয় বা আমাদের দুজনেরই বয়স কম । আমিও যেমন নিঃসঙ্কোচে বললুম, সেও তেমনি নিঃসঙ্কোচে এসে আমার পায়ের কাছে খাটের নীচে মাটিতে ব’সে পড়ল। আট বছর আগের মত আজও ওকে অfদর ক’রে তার বিদ্রোহী চুলগুলো কানের পাশ দিয়ে তুলে দিতে দিতে বল্লুম, “রাণী, জুতোর কথা কে বলেছিল রে তোকে ?” উমারাণী অসীম নির্ভরতার সঙ্গে ছোট্ট মেয়েটির মত খাট থেকে ঝোলানো আমার পায়ের উপর তার মুখটি লুকিয়ে রাখলে। ওরে, স্নেহ যদি রোগ সারানোর ওষুধ হোতে, তা হলে আমি বড় ভাইয়ের স্নেহ তোকে শিশি ভ’রে দাগ কেটে ডাক্তারী ওষুধের মত দিয়ে যেতাম | g আমার প্রশ্নের কোনো উত্তর তার কাছ থেকে পেলুম না । কেন পেলুম না, তাও একটু পরেই বুঝলুম । একমাত্র লোক যে ঐ জুতোর কথা জানে বা যার কাছে আমি এক-সময় এ কথা বলেছিলুম, সে হচ্চে—ম্বরেন। স্বরেনই বোধ হয় বিয়ের পর কোনো সময় উমারাণীকে এ কথা বলে থাকৃবে। বড় ভাইয়ের কাছে ছোট বোনটি তো আর সে কথা বলতে পারে না ? বললুম, “রাণী, একটা কথা জিজ্ঞাসা করি । টুনি বলছিল—মানে—স্করেন কি ঠিক পত্রটত্র দেয় ? বাড়ী$ाएँौ यांरभ ?* উমারাণী বডড জড়সড় হয়ে গেল। আমার কথার কোনো উত্তর দিলে না, মুখও তুলে নিলে না, আগের মত আমার পায়ের উপর মুখটি লুকিয়ে চুপ করে রইল । অনেকক্ষণ কেটে গেল, তাব পর বুঝলুম সে র্কাচে । তাকে সাম্বন কি বলে দেব ঠিক বুঝতে গাবুলুম না, শুধু তার মাথার চুলগুলোর উপর পরমস্নেহে হাত বুলিয়ে উমারাণী &२१ দিতে লালুম। বেশীদিন না রে, সোনার বোনটি বেশীদিন না । তোর মেয়াদ ফুরিয়ে এসেছে। ব্যর্থ নারী-হৃদয়ের রুদ্ধ আবেগ পরম নির্ভরতার সঙ্গে তার দাদার বুকে নিঃশেষে ঢেলে দিয়ে যখন সে নীচে শুভে নেমে গেল, চাদের আলোর তলায় ঘুমন্ত বাতাস সঞ্জনেফুলের মিষ্টি গন্ধে তখন স্বপ্ন দেখছে। এর ২৩ দিন পরে তাদের ওখান থেকে চলে আস্বার জন্যে প্রস্তুত হলুম। এর আগেই চলে আস্তুম, কন্তুকাতায় অনেক কাজ ছিল আমার, কিন্তু উমারাণীর করুণ মিনতি এড়াতে না পেরে কিছু দেরী হয়ে গেল । কাপড় পরে তৈরী হয়েছি, উমারাণী কাদো-কাদে মুখে এসে নিকটে দাড়াল। আমায় বললে, “আবার কবে আসবেন, দাদা ?” @ বল্লুম, “আসবো রে আবার পুজোর সময় আসবে।” সে বুললে, “সে যে অনেকদিন –না দাদা, আপনি আষাঢ় মাসে রথের সময় আসবেন । আমাদের এখানে রথের বড় জাক হয়, দাদ । আর কিন্তু আমি আপনার বিয়ে দেবোই এই বছরে, লক্ষ্মী দাদামণি, আপনার পায়ে পড়ি, আপনি অমত করবেন না।” তার পর সে সেই পশমের জুতো জোড় বের করে আমার সামনে মাটীতে রাখলে ; বললে, “আমি আন্দাজে বুনেছি, আপনি পায়েদিয়ে দেখুন দেখি, দাদা, হবে এখন বোধ হয় ।” জুতো জোড়াটা পায়ে ঠিক হয়েছে দেখে উমারাণী বড় খুলী,হোলো, তার সমস্ত মুখখান সার্থকতার আনন্মে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো । তার পর সে আবার বললে, "দাদা, আমি আপনার গরীব বোন, কখনো আসেন না এখানে, যদি বা এলেন, না পারলাম ভাল করে খাওয়াতে মাথাতে, না পারলাম তেমন আদর যত্ন করতে। এসে শুধু কষ্টই পেলেন, কি করবে, আমার যেমন কপাল।” অনেকদিন আগের মত সেইরকম গলায় আঁচল দিয়ে সে আমায় প্রণাম করলে, তার চোখের জল আমার পায়ের উপর টপ টপ ক’রে ঝরে পড়তে লাগলো। আমি তাকে উঠিয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললুম, “রাণী, তুই আমার মায়ের পেটের বোনই ।