পাতা:প্রবাসী (দ্বাবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] গাড়ীটি যখন যুবকের নিকট আসিয়া পৌছাইল, সে চালকদিগকে তাহাদের চীংকার ও গাড়ীচালানো থামাইয়া চুপ করিয়া দাড়াইতে বলিল। নিকষমণির মত কালো এই পাহাড়ের ছেলেরা তাহাদের যাত্ৰীটির দিকে অবাক হইয়া তাকাইল,—প্রতিদিনের সূৰ্য্যাস্তের মধ্যে এমন কি অসামান্য সৌন্দৰ্য্য আছে যে স্তন্ধ হইয়া দাড়াইয়। দেখিতে হইবে। কিছুক্ষণ চুপ করিয়া দাড়াইয়। আবার যুবকটি চলিতে আরম্ভ করিল। কিছুদূর গিয়া আবার গাড়ী থামাইয়া গাড়ীর ভিতর হইতে চামড়ার ব্যাগটা বাহির করিল। ব্যাগটা খুলিয়া আঁকিবার সরঞ্জাম তুলিগুলির পাশ হইতে লেপচা বাণীটা তুলিয়া ব্যাগ বন্ধ করিয়া নাগরা জুজ্ঞটা খুলিয়া গাড়ীর, সম্মুথে পা ঝুলাইয়। বসিয়া গাড়ী চালাইতে বলিল। গাড়ীর চাকা লাল ধূলি উড়াইয়া করুণ আৰ্ত্তনাদে চলিল, তাহারই সঙ্গে সঙ্গে যুবকটি বাঁশীতে এক নেপালী গান বাজাইতে লাগিল । সরল দীপ্ত পাহাড়ী স্বরে কুলীদের মনগুলিও সাড় দিয়া উঠিল, বঁাশরী-তান-মুখর রাঙা-আলো-ভরা পথ দিয়া তাহারা আনন্দের সঙ্গে গাড়ী টানিতে টানিতে চলিল । কিন্তু বেশীক্ষণ নিৰ্ব্বিবাদে বঁাশী বাজানো চলিল না, পিছন হইতে এক মোটরকারের হুঙ্কারধ্বনি বনপথ ধ্বনিত করিয়া আদিতে লাগিল । মেল সার্ভিসের মোটরকার ষ্টেসন হইতে যাত্রী লইয়৷ আসিতেছে। মোটর-লর তখন কিছু দূরে ছিল ; তবু কুলীর অতি সন্ত্রস্ত চঞ্চল হইয়া উঠিয়া পথের এক পাশ দিয়া ধীরে ধীরে গাড়ী টানিতে লাগিল, পাশের বনের মধ্যে প্রবেশ করিতে পারিলে যেন তাহারা বাচিয়া যায়। যন্ত্র্যানের গর্জনের সঙ্গে বঁাশী অনেকক্ষণ পাল্লা দিল বটে, কিন্তু কলদৈত্যের হুম্মুরের সঙ্গে ব্যাকুলবেণু কতক্ষণ পারিয়া উটুবে—বিরক্ত হইয় যুবকটি গাড়ীটা পথের এক পাশে রাথিতে বলিয়া নামিয় পড়িল। মুহূৰ্বের মধ্যেই দুই রক্তবর্ণ চক্ষু জাল ইয়া মোটর-লর নিকটে আসিল এবং তাহদেরই সম্মুখে আসিয়াই হঠাৎ থামিয় গল? কি একটা যন্ত্র খারাপ হইয়াছে বলিয়া ড্রাইভার উীড়াঙাড়ি নামি কল ঠিক কুরিতে শুরু করিল। § রমলা 8? যুবকটি পথের পাশে গাছের তলায় দাড়াইয় স্বৰ্য্যাস্ত দেখিতেছিল, মোটরকারের দিকে চাহিয়া দেখা আবশ্বক বোধ করে নাই। কিন্তু মোটর থামিতেই তাহার মনে হইল কে নেন পিছন হইতে তাহার-দিকে অনিমেষনয়নে চাহিয়৷ আছে ; মুখ ফিরাইয়৷ দেখিল গাড়ীভর যাত্রী যেন তাহারই দিকে চাহিয়া-অস্পষ্ট আলোয় তাহাদের স্পষ্ট দেখা যাইতেছিল না, কেবল কতগুলি নানা রং এর ছায়ামূৰ্ত্তি। তবু প্রথম বেঞ্চের একেবারে শেষ প্রান্তে ঘেৰিটি রাঙ নদীজলের মত টলমল করিতেছিল তাঙ্গকে সে চিনিল ; ওই খাম্‌পেনরংএর শাড়ীপর মেয়েটির সঙ্গেই ত সে কলিকাতা হইতে এক ট্রেনে এক কম্পার্টমেন্টে আসিয়াছে, তাহার চম্পকমুখে গোধূলির আলো যেন লেখ্রিরেণু মাখাইয়া দিয়াছে, ওই আবেশময় চোখ দুইটি রঙীন স্বপ্নে ভর, অজস্তাবু চিত্রশিল্পীর। আপন অন্তরের রং ও আনন্দ দিয়া নারীর যে তাগি আঁকিয় গিয়াছেন সেই দীর্ঘপল্লবন্ধন সারঙ্গ-নয়ন ভাঙ্গকে মন্ত্ৰমুগ্ধ করিল, গণ্ডের কালে তিলটি দেখা যাইতে ছিল না, শুধু তমাল-দিঘির সন্ধ্যাজলের মত দুইটি স্নিগ্ধ চোখ । কল ঠিক করিয়া ড্রাইভার মোটরে উঠিল। মোটর-লী আবার গর্জন করিয়া নড়িল। সেই স্থির চোখ দুইটি নদীর ঢেউয়ের মত দুলিয়া ছলছল করিয়া উঠিল, তাহার দীপ্তমুখে কি দুষ্টামিভরা হাসি থেলিয়া গেল, তারপর সেই তরুণী হাতের নীল রুমালটা তfহারই দিকে, হুঁ, তাহারই দিকে নাড়িতে নাড়িতে পথের অন্ধকারে মিলাইয়া গেল । মোটর-লর যখন বহুদূর চলিয়া গিয়াছে, তাহার পিছনের আলোটা আর দেখা যাইতেছে না, শুধু সম্মুখে পথের শেষপ্রান্তে দুইটি তারার আলো জলজল করিতেছে, যুবকটি তখন ধীরে গাড়ীতে উঠিয়া বসিল এবং জোরে গাড়ী চালাইতে বলিল। বাহকের চীংকার করিতে করিতে গাড়ী লইয়া ছুটিল । " - বাণী বাজাইতে আর ইচ্ছা রহিল, না। গাড়ীর সব জানলা খুলিয়া একটু বালিশে অৰ্দ্ধহেলান ভাবে বলিয়া যুবকটি পকেট হইতে হাভেন সিগার বাহির করিল, কিন্তু দেশলাইট বাহির করিয়া দেখিল ট্রেনে সব কাটিপনসুশষিত হইয়াছে। কুলীদের নিকট হুইতে একটা দেশলাই ।