পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/১০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>b, 8 • ফাকি দিতে পারিলে কেহ ছাড়ে ন—এবং ফুস ও বকশিশ পাইলে ইহার করিতে পারে না এমন কাজ নাই । অন্য জাতির যাহা করিতেছে, আমরাও তাহা করিতে পারি, ইহা অামাদেরও ধারণা। বিনয়বাবু এইসব কথা সদভিপ্রায়েই লিথিয়াছেন। তাহার কথাগুলি পড়িয় যদি সকলে সাহস-ও-প্রম-সাধ্য কাজ করিতে উৎসাহিত হন, তাহ হইলে মুখের বিষয় হইবে। কিন্তু যদি আমরা এই রকম মনে করি যে অগ্রসর বিদেশী জাতিদের সমান হইতে হইলে আমাদিগকে কিছুই করিতে হইবে না, কারণ আমাদের যেসব দোষ আছে, তাহাদেরও সেইসকল দোষ আছে, তাহা হইলে অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হইবে। মানুষ অন্যকে ছোট করিয়া এক প্রকার সুখ পায়। আমরা সে রকম সুখ চাই না। বড়কে ছোট করিয়া বা ছোট ভাবিয়া তাহার সমান হওয়ায় লাভ নাই। নিজে বড় হইয়া বড়র সমান হওয়ায় লাভ আছে। বাস্তবিক, বিনয় বাবু যাহা লিথিয়াছেন, তাহা সত্য হইলেও আংশিক সত্য মাত্র। আমাদের সব দোষই সভা বিদেশীদের থাকিতে পারে। কিন্তু তাহদের যে-সব গুণ তাহাদিগকে অগ্রসর, প্রবল ও বড় করিয়াছে, সে-সব গুণ কি আমাদের আছে ? তাহা থাকিলে আমরা আমরা কেন, এবং তাহারাই বা তাহার কেন ? তাহার শক্তিশালী, আমরা শক্তিহীন কেন ? দোষে সাম্যে কোন আনন্দ নাই, কোন আশ। ভরসা নাই। গুণে সামাই প্রকৃত আশ ভরসার কারণ হইতে পারে। আমাদের ইহা বিশেষ করিয়া মনে রাখিতে হইবে, যে, যে পশ্চাতে পড়িয়া যায় সে যদি হাটিয়া বা দৌড়িয় সামনের মানুষটিকে ধরিতে চায় বা তাহাকে অতিক্রম করিয়া যাইতে চায়, তাহা হইলে তাহাকে অগ্রবর্তীর চেয়ে অধিকতর দ্রুতগামী হইতে হয়। পশ্চাৎবর্তী যে, তাহার হাটিবার বা দোঁড়িবার শক্তি অগ্রবর্তীর চেয়ে কম হইলে ত চলিবেই না, সমান হইলেও চলিবে না; বেশী হওয়া চাই। কারণ, সে যতটা পথ পেছনে পড়িয়াছে, তাহা সারিয়া লইতে হইবে, এবং তাহার পর অগ্রবর্তীর পাশাপাশি বা তাহাকে পেছনে ফেলিয়া চলিতে প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড হইবে। সুতরাং পশ্চাৎবর্তী মাহমটির দৌড়িবার শক্তি বেশী হওয়া দরকার । - কাৰ্য্যক্ষেত্রেও দেখিতে পাই, আমাদের মধ্যে স্থা। শক্তিশালী বা প্রতিভাশালী যিনি, তিনিও সাধারণ একজন ইউরোপীয়ের সমকক্ষ বলিয়া পরিগণিত হন না। বিলাজে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সাধারণ একজন ইংরেন্থ। যুবক যে কাজের উপযুক্ত বিবেচিত হন, ঠিক সেই পরীক্ষা । যে ভারতীয় যুবক প্রথম বা তাহার কাছাকাছি স্থান অ{ি কার করিয়াছেন, তিনিও সে কাজের উপযুক্ত বলিয়া বিবে: চিত হন না। যে-সব ভারতীয় বিজ্ঞানাধ্যাপক ও বিজ্ঞানের। ছাত্র নূতন তত্ত্ব আবিষ্কার করিয়াছেন, তাহার, যে-সকল | ইংরেজ গবেষণা করেন নাই, তাহদের সমকক্ষ বিবেচি | হন না। এসব অবিচার বটে, কিন্তু সংসারের রীতিই এইরূপ। এ দেশেও বিদ্বান (ও অবিদ্বান) "উচ্চ"-জাতীয়ে যতটা সম্মান আছে, ঠিক তাহার সমান বিদ্বান “নি। | শ্রেণীস্থ লোকের ততটা সম্মান নাই। যে কারণেই হউক, সংসারে যিনি বা যে জাতি পশ্চাড়ে পড়িয়া গিয়াছেন, তাহাকে বিশেষ চেষ্টা ও বিশেষ তপস্যার দ্বারা অগ্রবর্তীদের সমকক্ষতা করিতে হইবে। পরীক্ষার ভাষায় বলিতে গেলে, অগ্রবর্তীর যদি পরীক্ষায় শতকরা ৩৫ নম্বর পান, এবং পশ্চাৎবৰ্ত্তীর বার বার শতকরা ৭ নম্বর পান, তবেই তাহারা অগ্রবর্তীদের সমান ও সমকক্ষ বলিয়া বিবেচিত হইবেন। অতএব, সভ্য ও প্রবল বিদেশীদের কি কি দোষ আছে, তাহা আমরা ভাবিৰ না। আমরা সকলপ্রকার গুণে র্তাহাদিগকে অতিক্রম করিতে চেষ্টা করিব। শারীরিক স্বাস্থ্যে ও শক্তিতে সাহসে, বুদ্ধিমত্তায়, প্রতিভায়, পাণ্ডিত্যে, সচ্চরিত্রতা, স্বাৰ্থত্যাগে, মানবের ও অপর জীবের সেবায়ু, দলবদ্ধভাবে কাজ করিবার ক্ষমতায়, আমরা কোন জাতি অপেক্ষ। ইন | থাকিব না, এই দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আমাদিগকে করিতে হইবে। কিন্তু সিদ্ধিলাভ করিতে হইলে আমাদিগের চেষ্ট। অন্যজাতিদের চেষ্টা অপেক্ষা প্রবল হওয়া আবশ্বক। আমরা বিদে4 দের চেয়ে অনেক বড় হইলে তবে তাহাদের সমকক্ষত পারে, বাবুরা মুখটি নিজেদের জন্য রাথিয়া কষ্টটি আমাদের করিতে পারিব । ঘাড়েই রাখিয়া দিবার ব্যবস্থা করিতেছেন। আমরা নিজে কাঠের মধ্যে যেমন আগুন লুকান থাকে, ফিন্ত | d দৈহিক শ্রমসাধ্য কাজগুলিও করিতে থাকি, তাহ হইলে ২য় সংখ্যা ] ੇ তাহা প্রকাশ পায়, তেমনি সকল রকমের শক্তি সব জাতির মধ্যেই আছে; চেষ্টার দ্বারা তাহার বিকাশ হয়। সুতরাং আমাদের নিরাশ হইবার কোনই কারণ নাই। কিন্তু প্রত্যেককে জীবনব্যাপী চেষ্টা করিতে হইবে। শ্রমসাধ্য কার্য্যে বাঙ্গালী । অনেকে লক্ষ্য করিয়া থাকিবেন, যে, রেলের কুলি, পাটের কলের মজুর, কলিকাতার মুটিয়া, বাড়ীর চাকর, নদীর মাঝি মাল্লা, এমন কি ধানের ক্ষেতের মজুর, প্রভৃতি শ্রমজীবীদের মধ্যে বাঙ্গালীর সংখ্যা খুব কমিয়া যাইতেছে। কোন কোন রকমের শ্রমজীবী সবই অবাঙ্গালী । ইহা বড় দুলক্ষণ । ইহার কারণ নির্ণয় করা একান্ত আবশ্যক। শারীরিক কারণের মধ্যে অকালমাতৃত্ব প্রভৃতি সামাজিক প্রথা, যথেষ্ট আহারের অভাব, এবং রোগ, এই তিনটি দেশবিশেষের লোককে দুৰ্ব্বল ও শ্রমে অসমর্থ করিয়া ফেলিতে পারে। যে-সকল প্রদেশ হইতে সাধারণতঃ কুলি মজুর বাঙ্গল দেশে আসে, তথাকার সামাজিক রীতিনীতি ও বাঙ্গালার রীতিনীতিতে, অনিষ্টকারিতা হিসাবে, বিশেষ প্রভেদ নাই ; অকালমাতৃত্ব বঙ্গে কিছু বেশী হইতেও পারে। সে-সব প্রদেশের চেয়ে বঙ্গে আল্লাভাবও বেশী নয়। কিন্তু বহুকাল হইতে বঙ্গে ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব বেশী। তাহা ইলে, বাঙ্গালী কি রোগে জীৰ্ণ হইয়া প্রমে অসমর্থ হইয়া, পড়িতেছে ? নৈতিক ও মানসিক কারণও থাকিতে পারে। কিন্তু শ্রমজীবী শ্রেণীর বাঙ্গালীর অন্যান্য প্রদেশের শ্রমজীবীf দের চেয়ে কি বেশী দুশ্চরিত্র ? তাহা ত বোধ হয় না। হয় ত মোটের উপর বাঙ্গালীর একটু অধিক বিলাসী ও আরামপ্রিয়। আমরা ভদ্রশ্রেণীর বাঙ্গালীরা দৈহিকভ্ৰমে অনভ্যস্ত ং কাতর। অন্য সব শ্রেণীর লোকেদের আদর্শ আমরা। তাহারা আমাদের মত "বাবু হইতে চায়। আমরা যদি তাহাদিগকে লেখায় ও বক্তৃতায় শারীরিক শ্রমের গৌরব শিক্ষা দিতে থাকি, কিন্তু কাজে "বাবুই থাকিয় যাই, তাহ ইলে কোন প্রতিকার হইবে না। কারণ, তাহারা ভাবিতে বিবিধ প্রসঙ্গ—মফঃস্বলের সংবাদপত্র እby¢ SJSJSMSMSMSMSMSMSMS বাস্তবিক, দেশের মধ্যে একদিকে যেমন একটা বিপ্লবের স্বত্রপাত হইয়াছে, অন্যদিকেও তেমনি হওয়া চাই । লেখাপড়ার কাজ যেমন এখন সব শ্রেণীর ' লোকই করিতে আরম্ভ করিতেছে, “ভদ্র” ও “সাধারণে" কোন প্রভেদ থাকিতেছে না, তেমনি শারীরিক শ্রমের কাজও সব শ্রেণীর লোকেরই করা আবশ্যক। মাটি চযিয়৷ তাহা হইতে প্রচুর শস্য পাইতে হইলে লাঙ্গল দিয়া উপরের মাটিকে নীচে, নীচের মাটিকে উপরে করিয়া ফেলিতে হয়। সব দেশের মানবসমাজেও আজকাল এইরূপে সমুদয় সামাজিক স্তর, কোথাও ধীরে ধীরে কোথাও বা দ্রুতবেগে, উণ্টাপাল্টা হইয়া যাইতেছে। ইহাতে আপাততঃ বুনিয়াদি, অভিজাত, সম্রাস্ত বা ভদ্রলোকদের আরামের ব্যাঘাত হইলেও, পরিণামে ইহা হইতে মঙ্গল হইবে । মফঃস্বলের সংবাদপত্র । কলিকাতায় বসিয়া কাগজ চালাইবার সময় আমরা কথন কখন মফঃস্বলে কাগজ চালান যে কিরূপ কঠিন তাহা ভুলিয়া যাই। এখানে আমরা, সামান্য রাজকৰ্ম্মচারীর ত কথাই নাই, রাজা উজীরকেও অবাধে কলমের খোচা দিয়া থাকি ; কিন্তু মফঃস্বলে কোনও শ্রেণীর হাকিম বা কোনও শ্রেণীর পুলিসকৰ্ম্মচারীকে অসন্তুষ্ট করিলে কষ্ট ভোগ করিতে হয়। এমন কি বিচারকদের কোন একটা রায়ের সমালোচনা করিলে অনেকের জীবনোপায় নীলামের ইস্তাহারগুলি বন্ধ হইয়া যায়। তাহার পর সামাজিক হিসাবেও কলিকাতায় যিনি যাহাই লিখুন, তাহাতে কখন কখন কাগজের কার্টুতি কমিলেও, প্রায় কাহাকেও ব্যক্তিগত বা পারিবারিক নিৰ্য্যাতন সহ করিতে হয় না। মফঃস্বলের সৰ্ব্বত্র, অস্তত: ছোট ছোট সহরগুলিতে, অবস্থা এরূপ নয় । মফঃস্বলের কোন কাগজের গ্রাহকসংখ্যা ও বিজ্ঞাপনের আয় কলিকাতার কাগজগুলির মত হইতে পারে না। এইরূপ নানাবিধ কারণে মফঃস্বলের সম্পাদকদিগকে বছ অসুবিধার মধ্যে কাজ করিতে হয়। ইহাতে তাহাদের পূর্ণমাত্রায় শক্তিপ্রয়োগে ব্যাঘাত জন্মে। কিন্তু কতকগুলি বিষয়ে মফঃস্বলের কাগজগুলির সুবিধাও আছে । যেটি যে জেলার কাগজ তাহার সেই জেলার ইতিহাস, কিম্বদন্তী, প্রাচীনকীৰ্ত্তি, ব্যবসাবাণিজ্য, প্রাচীন -