পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/১১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২-০ ^^ এক-একটা কথা আসে অতি নিরীহভাবে বাহনরূপে। কিন্তু চিম্ভার অাদর ত চিরকাল সমান থাকে না ; স্বতরাং তাহার আসনচ্যতি ঘটিতে কতক্ষণ ? বাহনটা কিন্তু অত সহজে হটবার নয় ; সে তখন একাই চিস্তার ক্ষেত্রে দাপাদাপি করিয়া আসর জমাইয়া রাখে । ইহাকেই বলি ভাষার অত্যাচার। ভাষা ভাববহন কাৰ্য্যেই নিযুক্ত থাকুক ; সে আবার চিস্তার আসরে নামিয়া আপনার জের টানিতে থাকিবে কেন ? শঙ্করাচার্য্যের অদ্বৈততত্ত্বে ‘মায়া’ শব্দটার অর্থ কি, আমরা হয়ত কোন কালে ভুলিয়া বসিয়াছি, কিন্তু ঐ মায়' শব্দটা আমাদের ছাড়ে নাই । সংসারকে এই-ভাবে কিছু নয় বলিয়া উড়াইয়া দেওয়াটা যুক্তিযুক্ত কি না, সে বিষয়ে আলোচনা করিবার সময় বাস্তবিক কি ভাবে কি করিতে বলা হইয়াছে সেকথা ভাবিবার অবসর হয় না। কতগুলি শব্দ শুনি যাহার অর্থ বা ইতিহাসের সঙ্গে আমাদের চিস্তার যোগ অতি সামান্য —অথচ আমাদের ধারণা এই যে কথাগুলির মধ্যে খুব এক-একটা গভীর চিন্তা নিহিত আছে। তাহার উপর একএকটি শব্দ আবহমানকাল হইতে নিরঙ্কুশভাবে চলিত থাকিলে কালক্রমে তাহার মধ্যে স্বভাবতই এমন একটা চূড়ান্ত মীমাংসার ভড়ৎ প্রকাশ পায় যে শব্দের মোহে পড়িয় আমরা কথাগুলিকেই নাড়াচাড়া করি আর মনে করি খুব একটা উচ্চচিন্তার আলোড়ন চলিতেছে। একটি প্রবীণ গোছের ভদ্রলোক কৃষ্ণলীলার সমর্থনের উদ্দেশ্যে তর্ক করিতেছিলেন। র্তাহার যুক্তিপ্রণালীট এইরূপ :– সত্ত্ব রজ তম এই তিনগুণাশ্রিত পুরুষ তিন রকম ভাবাপন্ন— সুতরাং তিনের সাধনমার্গ ও অধিকারভেদ তিন প্রকার । সুতরাং নিম্নস্তরের অবিদ্যাশ্রিত আদর্শের দ্বারা সাত্বিকী প্রকৃতির আশ্ৰীভূত নিত্যমুক্ত ভগবান শ্ৰীকৃষ্ণের বিচার করিলে চলিবে কেন ?—ইত্যাদি। প্রতিপক্ষ বেচারা বাক্যজালে আবদ্ধ ও প্রত্যুত্তরদানে সম্পূর্ণ অক্ষম হইয়৷ ছটফট করিতে লাগিলেন। সগুণনিগুৰ্ণ পুরুষপ্রকৃতি প্রাণ কারণ শব্দব্ৰহ্ম হিরণ্যগৰ্ভ প্রভৃতি শব্দঘটার সাহায্যে নিজ নিজ বক্তব্যের মধ্যে গাম্ভীৰ্য্য সঞ্চ",রর জন্য অনেকেই সচেষ্ট, কিন্তু শব্দের মধ্যে যে ভাবটুকু ছিল, সে কোনকালে খোলস ছাড়িয়া পলাইয়াছে কে. তাহার প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৩২২ a--------> [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড খবর রাখে ? ঐ একএকটা কথায় আমরা যে-পরিমাণে অভ্যস্ত হইয়া পড়ি, তাহাকে যতবার এবং যত সহজে মুখস্থ বুলির মত আওড়াইতে থাকি, চিস্তাও ততই প্রমাদ গণিয় একপা দুইপা করিয়া হটিতে থাকে। কে অত পরিশ্রম করিয়া লুপ্তচিন্তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে । শব্দের গায়ে চিন্তার ছাটছুট যাহা লাগিয়া থাকে তাহাই যথেষ্ট,বাকীটুকু তোমার রুচি ও কল্পনা অনুসারে পুরাইয়া লওঁ। ছাতার নীচে চটি চলিতেছে দেখিয়া লোকে বুৰিত বিদ্যাসাগর চলিয়াছেন। আমরা দেখি ভাষার ছাতা আৰু চটি—স্বয়ং জীবন্ত বিদ্যাসাগরকে আর দেখা হয় না। একএকটা কথার ধুয়া আমাদের স্বাভাবিক চিন্ত৷ শক্তিকে আড়ষ্ট করিয়া দেয় । মাচুষের যে-কোন আচার অনুষ্ঠান চালচলন বা চিন্তাভঙ্গীর প্রতি কটাক্ষ করি। লোকে জিজ্ঞাসা করে "তুমি কি সনাতন ধৰ্ম্মবিধিৰে উড়াইয়া দিতে চাও ?” এবং সনাতন ধৰ্ম্মের নজীরকে— অর্থাৎ ঐ “সনাতন" শব্দটার নজীরকে—এমন অকাট্য ভাবে মনের সম্মুখে দাড় করায়, যেন ইহার উপর আর কথা । বলা চলে না। তখন যাহা কিছু যথেষ্ট জীর্ণ ও পুরাতন তাহাই আমাদের কাছে সনাতনত্বের দাবী করে এবং আমদের কল্পনায় সনাতনধৰ্ম্ম জিনিষটা যে-কোন বিধি নিয়ম আচার অনুষ্ঠানাদির সমারোহে সজারুবৎ কণ্টকাকীর্ণ হইয়৷ উঠে । কারণ, এই-সকল শোনা কথায় আমরা এতই অভ্যস্ত যে ইহাদের একএকটা মনগড়। অর্থ আমাদের কাছে আপনা হইতেই দাড়াইয়া গিয়াছে , সেটাকে আবার ঘাটাইয়া দেখা আমরা আবশ্বক বোধ করি না। শাস্ত্রে ত্যাগ বলিতে কি কি ছাড়িতে উপদেশ দেয় তাহ বৃষি আর নাই বুঝি আমরা ঐ ত্যাগ শব্দটার সঙ্গে ছাড়ার সংস্কারটুকুকে ধরিয়া রাখি। অমুক সংসার ছাড়িয়া পলাইয়াছেন, তিনি ত্যাগী , অমুক এত টাকা দান করিয়াছেন, তিনি ত্যাগী , অমুক এই অনুষ্ঠানে শক্তি ও সময় নষ্ট করিয়াছেন, তিনিও ত্যাগী। কৰ্ম্মফলাসক্তি কিছুমাত্র কমিল না,–দেহাত্মবুদ্ধির জড়সংস্কার ঘুচিল না— প্রভূত্বের অভিমান ও অহঙ্কার গেল না ; অথচ শাখ বাক্যেরই দোহাই দিয়া ত্যাগের মাহাত্ম্য’ প্রমাণিত হইল। এইজন্য একএকটা কথাসংশ্লিষ্ট চিন্তাকে মাঝে মানে ২য় সংখ্যা ] আমাত দিয়া জাগাইয়া দিতে হয়। কারণ, চিস্তা সে নিজগুণে যতই বড় হউক না কেন, আর-দশজনের মনে নিত্য নূতন খোরাক না পাইলে তাহার ক্ষয় অনিবার্ধ্য। জাতীয়ভাব’, ‘ভারতীয় বিশেষত্ব’, ‘হিন্দুত্বের ছ।চ' প্রভৃতি নাম দিয়া আজকাল যে জিনিষটাকে আমরা শিল্পে সাহিত্যে অশনে বসনে প্রয়োগ করিবার জন্য ব্যস্ত হইয়াছি, তাহার স্বরূপলক্ষণাদির বিষয়ে আমাদের ধারণা যতই অস্পষ্ট হউক না কেন, তাহাতে ঐ ঐ শব্বনির্দিষ্ট বিষয়গুলার প্রতি আমাদের আস্থা ও সন্ত্রমের কিছুমাত্র ব্যতিক্রম হয় না। সেটা হয়ত ভালই; কিন্তু দশদিক হইতে স্বথেষ্ট মাত্রায়, অথবা যথার্থভাবে, আঘাত না পাওয়ায় জিনিষটা যে-ভাবে গড়িয়া উঠিতেছে, তাহাতে বোধ হয় যে ঐ শব্দগুলাকে একবার বিশেষ রকমে ঘাটইয়া দেখা আবখ্যক । অামার চিস্তাকে কতগুলা শব্দের ঘাড়ে চাপাইয়া দিলাম বলিয়াই নিশ্চিন্ত থাকিতে পারি না। সে চিস্তাতরঙ্গের ভবিষ্যৎ-ইতিহাস তাহাতেই আমার অজ্ঞাতসারে কতগুলা শব্দের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত হইয় পড়ে। শব্দের অর্থত চিরকাল একভাবে থাকে না—পরে এক সময়ে হয়ত একএকটা শব্দের অর্থ লইয়াই মারামারি বাধিয়া যাইৰে— আমার চিস্তার সদগতি হওয়া ত দূরের কথা। ঋগ বেদের একটি ঋকের অর্থ রমেশবাবু প্রভৃতি এইরূপ করেন— "বৃষ্টিঙ্গল শৰ করিয়া পড়িল এবং (মেঘ বায়ু ও কিরণ) এই তিনের যোগে গাড়ীৰূপী পৃথিবী বিশ্বক্ষণী ( অর্থাৎ শসাচ্ছাদিত) হইল”— हैठानि । পণ্ডিত সত্যব্রত সামশ্রমী মহাশয়ের মতে, ইহারই অর্থ– "পৃথিবী স্বৰ্য্যকে প্রদক্ষিণ করিতেছে-কুধাশক্তি এই যুৱানকর্ষে। নিযুক্ত আছেন। এই শক্তি-সকলের মধ্যস্থলে গর্তদেবতা অটলভাবে श्ञि ब्रशिद्रांtइन" हेठाप्ति ! • এখানে একএকটি শব্দের অর্থবাহুল্যই এরূপ ব্যাখ্যাবিপধ্যয় ঘটাইয়াছে। আবার, পুরাণাদিবর্ণিত রূপকগুলিকে নিংড়াইয়া বৈজ্ঞানিকতত্ব নিষ্কাশনের চেষ্টায় যে ইহা স্বপেক্ষাও গুরুতর অর্থবিভ্ৰাট ঘটিয়া থাকে, তাহা সকলেই জানেন। একই কথার অর্থ তোমার আমার কাছে একরকম, আর অন্য দশজনের কাছে অন্যরকম, এরূপ ঘটিলে ভাষার • "त्रोभारमद्र ८खोझिबी ७ cखारुिम” । ভাষার অত্যাচার ০৮:০৬, ১৯ এপ্রিল ২০১৬ (ইউটিসি)০৮:০৬, ১৯ এপ্রিল ২০১৬ (ইউটিসি)~ --০৮:০৬, ১৯ এপ্রিল ২০১৬ (ইউটিসি)~ لا هذ খাতিরে রূপকের মধ্যে একেবারে হাত প। ওটাইয় বসে, অথবা সে যখন ‘হিংটিংছটের আকার ধারণ করে, তখন ভবিষ্যদ্রবংশের কল্পনায় সে অতি সহজেই কাব্য বা ইতিহাস বা বৈজ্ঞানিক গবেষণা—যাহা-ইচ্ছ-তাহাই— হইয়া দাড়ায় । একে ত ভাষার অর্থভেদ সৰ্ব্বদাই ঘটিতেছে—তাহার উপর নিজের পছন্দমত অর্থ বাহির কমিবার দিকে মাতুষের স্বভাবতই একটু আধটু নজর থাকে। ইহার মধ্যে আবার যদি ইচ্ছাপূৰ্ব্বক বা স্পষ্টই থানিকট ভুল ৰুবিবার সম্ভাবনা রাখিয়া দেওয়া হয়, তবে মানুষের বুদ্ধি এ অনর্থ ঘটাইবার সুযোগ ছাড়িবে কেন ? সেকালে রোমীয় ধৰ্ম্মশাসনের বিধি অনুসারে অবিশ্বাসী ধৰ্ম্মদ্রোহীর জন্য এই মর্শে একটা ব্যবস্থা দেওয়া হইত –“ইহাকে আঘাত করিও না, কিন্তু বিনা রক্তপাতে ইহার দুর্থতির প্রতিবিধান কর।” এ কথাটার অর্থ করা হইত “এ ব্যক্তিকে পোড়াইয়া মার !" এইরূপে অশ্বখামার নিধনসংবাদে "ইতিগজ” সংযোগের ন্যায়, ব্যক্তভাষার পশ্চাতে অব্যক্ত অভিপ্রায়ের স্বগত উক্তিটা ভাষার অর্থকে যে কখন কোন মুখে ফিরাইয়া দেয় তাহা অনেক সময়ে নির্ণয় করা কঠিন। ভাষা যে কেবল চিস্তাকে বিপথে ঘোরাইয়া বা তাহার আসন দখল করিয়াই ক্ষাস্ত হয়, তাহ নয় ; সে এক এক সময়ে উদ্যোগী হইয়৷ আমাদের অজ্ঞতার উপর পাণ্ডিত্যের রং ফলাইয়া থাকে। নিতান্ত সামান্ত বিষয়েরও প্রকাও সংজ্ঞানির্দেশ করিয়া, অথবা যাহার সম্বন্ধে কিছুই জানিনা তাহারও একটা নামকরণ করিয়া, আমাদের বিজ্ঞতার ঠাট বজায় রাখে এবং আমাদের পাণ্ডিত্যের অভিমানকে নানারূপ ছেলেভুলান কথার সাহায্যে আশ্চর্ধ্য রকমে জাগাইয়া রাখে। একটা রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মধ্যে কোন একটা জিনিষ হয়ত আপাতদৃষ্টিতে সাক্ষগোপালের কাজ করে মাত্ৰ—অথচ তাহার উপস্থিতিটা কেন যে সেই ক্রিয়ানিস্পত্তির সহায়তা করে, বৈজ্ঞানিক তাহার কারণ খুজিয়া পান না। কিন্তু বৈজ্ঞানিক ছাত্র যখন এই ব্যাপারটাকে Catalytic action নাম দিয়া ব্যাখ্যা করে তখন সে হয়ত মনেই করে না যে এখানে ঐ শব্দটার আড়ালেই একটা প্রকাগু অজ্ঞতার