পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/১৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

همج ثا আদেশে গাজী হত হন এবং দক্ষিণ গড়মান্দারণে তাহার সমাধি হয়। গৌহাটীর পশ্চিমে ও ব্রহ্মপুত্রের উত্তর হাজে নামক স্থানের "পোয়ামক্কা" মসজিদ তদঞ্চলের মুসলমানসমাজে সুপরিচিত ও সমধিক মান্য । এই মসজিদের ব্যনিৰ্বাহাৰ্থে বাদসাহী আমলের পরোত্তর ভূমি আছে। আহম-রাজগণের আধিপত্যকালেও তাহার অন্যথা হয় নাই। নানা কারণে মসজিদের অবস্থা এখন আর পূর্ববং নহে। মক্কা হইতে মৃত্তিক আনিয়া মসজিদের মেঝে পূর্ণ করা হইয়াছিল বলিয়৷ এই মসজিদ "পোয়ামক্কা" নামে অভিহিত হইয়াছে। যেসময় হেজাজ গমন করিতে হইলে দেশত্যাগের আবশ্বক হইত, সেইসময় মালদহের অন্তর্গত পাণ্ডুয়া, গোয়ালপাড়ার "পাঞ্জতন" বা "বিবির পইত" ও গৌহাটার “পোয়ামক।" তদঞ্চলের মুসলমানসমাজে তীর্থস্থানে পরিগণিত ছিল। হিন্দুরাও শ্রদ্ধা ভক্তি প্রদর্শনে পরাসুখ ছিল না। পোয়ামক্কায় ধৰ্ম্মাত্ম। গিয়াশউদিনের সমাধি আছে। এই গিয়াশউদিনের পরিচয় ও সময় সম্বন্ধে ঐতিহাসিকগণ একমত হইতে পারেন নাই। কথিত আছে গিয়াশউদ্দিন মোগলপক্ষে আহম-রাজার সহিত যুদ্ধ করিতে গিয়া ১৬২৭ খৃষ্টাব্দে বিশ্বনাথে হত হন এবং তাহার দেহ হাজোতে নীত ও সমাহিত হয় । ১৮৬৭ খৃষ্টাব্দের কলিকাতা-রিভিউ পত্রে প্রকাশ গিয়াশউদ্দিন ১৬শ শতাব্দীর প্রারম্ভে হোসেন সাহের পুত্র দানিয়ান সাহের পরবৰ্ত্তী হাজোর শাসনকৰ্ত্ত ছিলেন। তিনিই পোয়ামক্কায় মসজিদ নিৰ্ম্মাণ ও হাজোর নিকট একটি মুসলমান উপনিবেশ স্থাপন করেন। গিয়াশউদ্দিন তথায় ধৰ্ম্মার্থে ভূমি দান করিয়াছিলেন। গৌহাটী কটনকলেজের অধ্যাপক শ্ৰীযুক্ত পণ্ডিত পদ্মনাথ বিদ্যাবিনোদ তত্ত্বসরস্বতী মহাশয়ের অনুগ্রহে পোয়ামক্কা মসজিদের দ্বারলিপির একথও নকল সংগ্রহে সক্ষম হইয়াছি ; তাহাতে উক্ত মসজিদ, সাহজাহান বাদসাহের রাজত্বকালে ১০৬৭ হিজরীর (১৬৫৭ খৃঃ) রমজান মাসে, বঙ্গের শাসনকৰ্ত্ত। বাদসাহপুত্র সুজাউদ্দিন মহম্মদের পক্ষ হইতে, সাহ নিয়ামতউল্লার শিষ্য লোতফউল্লা সিরাজী কর্তৃক নিৰ্ম্মিত লিখিত আছে। লোতফউল্লা সিরাজী ১৬৫৮ খৃষ্টান্স পৰ্য্যন্ত নিম্ন আসামের ফৌজদার ছিলেন । আলমগীর প্রবাসী— আষাঢ়, ১৩২২ [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড নামায় প্রকাশ, কোচবিহার- ও আহম-রাজের আক্রম সিরাজী আসাম ত্যাগ করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন। শ্ৰীআমানতউল্লা আহম্মদ। “অবিচার’ ( প্রবাসীর তৃতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত গল্প ) ভাবপ্রবণ বৃদ্ধ হরিহর যথন করুণভাষায় নিজের অতীত জীবনের করণকাহিনী বর্ণনা করিত সেসময় খুব কম লোকই চক্ষের জল সংবরণ করিতে পারিত। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমি ভিন্ন তাহার এই করুণরসের ভক্ত ছিলও বড় কম । সেদিন যখন গেলাম তখন সে গান গাহিতেছিল। অামাকে দেখিয়া ক্ষণিকের জন্য থামিয়া বলিল “কে, বিনোদ ? বস।” একথান। পুরাণ চৌকির উপর একটা জীর্ণ মাদুর পাত ছিল, আমি গিয়া বসিলাম। বৃদ্ধ তখন তানপুরার একঘেয়ে সুরের সঙ্গে গল মিশাইয়া গীয়মান গীতের শেষ পদটি শেষ করিয়া ফেলিল। তারপর একটি দীর্ঘনিশ্বাসের সঙ্গে তানপুরাটি নামাইয়। রাখিয়া বলিল—“একেবারে মন ভেঙ্গে পড়েছে বিনোদ ।” বৃদ্ধের স্বরের চিরন্তন কারুণ্য আজ যেন একটু বেশী— যেন আমায় নূতনভাবে আঘাত করিল। আজ অনেকদিনের পর হরিহরের সহিত দেখা করিতে আসিয়াছি । বাড়ীটাতে একেবারেই মন টিকিতেছিল ন, তাহাতে যেন একটা বিশাল পরিবর্তন হইয়া গিয়াছে, যেন তাহার প্রাণেরই অভাব ! প্রাণহীন বাড়ীটা বিভীষিকার উৎকট ছবিটির মত স্তব্ধভাবে দাড়াইয়া আছে। একটা গভীর নদ শুষ্ক হইয়া গেলে তার গভীরতা যেরূপ ভাব মনে জাগাইয়া দেয়, আজ এই জীর্ণ শীর্ণ বাড়ীটার গভীর নিস্তব্ধতা ঠিক সেইভাবে আমার মনটাকে আকুল করিয়া তুলিল। অনেকক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া আমি জিজ্ঞাসা করিলাম "মুকুজ্যে মশায়, অমল কোথায় ?" "অমলী ? সে নেই রে!”—আর একটা কথা বলিলেই যেন তাহার বুকখানা ভাঙ্গিয়া যাইত, ঠিক এমনিভাবে ৩য় সংখ্যা ] আপনাকে সামলাইয়া লইয়া বৃদ্ধ আনতচক্ষে তামাক থাইতে লাগিল । "নেই!"–কথাটা বুকে বাজিল। সে যে আমার বড় স্নেহের অমলী! আমি আসিলেই যে সে দাদা দাদা করিয়া ছুটিয়া আসিত, আমার হাত ধরিয়া কত উৎসাহে তাহারই মত স্নিগ্ধ তাহার ছোট বাগানটিতে লইয়া যাইত, তাহার পুতুলের সংসারের স্বথ দুঃখের কথা তুলিয়৷ আমার সহামুভূতি চাহিত, মিনি বিড়ালটাকে ধরিয়া আনিয়া তাহার নিষ্ঠুরতা চৌর্য্য প্রভৃতি অন্যায়ের বিচার করিতে বলিত। তাহার শৈশবস্থলভ মধুর অজ্ঞতার একটা পরিচয়ও এপর্য্যন্ত না পাওয়ায় আমি জিজ্ঞাসা করিয়াছিলাম ‘সে কোথায় ? কিন্তু “নেই!" চক্ষের জলে বৃদ্ধের বয়ঃশীর্ণ গণ্ডস্থল ভিজিয়া গিয়াছিল। আমি চুপ করিয়া ভাবিতেছিলাম। অমলীর বিড়ালটা পাঘে সিয়া গায়ে ল্যাজ বুলাইয়া চলিয়া গেল, আর আমলীর বাগানের একটা শুকনো গোলাপ যেন এই দুটি কথার বেদনাতেই ঝুরঝুর করিয়া ঝরিয়া পড়িল। হুক রাখিয়া বৃদ্ধ বলিল—“বিনোদ, অমলীর কথা বোধ হয় তোমায় এক দিনও বলিনি ?” আমি বলিলাম “বলবেন আর কি ? আমি তো জানিই।” “আমার নাতনী বলে জানতে তো ? কিন্তু বাস্তবিক তা নয় ।" অনেকটা বিস্মিত হইয়া মুখের দিকে চাহিয়া দেখিলাম —বুদ্ধের কোটরগত চক্ষু দুটি অশ্রুর নূতন উচ্ছাসে ভাসি তেছে । বৃদ্ধ বলিতে লাগিল । "সে তিন বছরের কথা। বর্ষ পেরিয়ে গেছে। নদীর জল কমে এসেছে, ততটা ঘোলাও নেই। সবে দু’একখানা নৌকা কচিং-কখনো দামোদরে দেখা যায় ; কিন্তু স্রোত তথন ও পুরো ! "সে রাত্তিরটা বড় গরম ছিল—গাছের পাতাটি নড়ে না। পূর্ণিমার চাদটী আকাশের মাঝামাঝি। অনেকক্ষণ উঠোনে এসে বসে রইলুম—ভাল লাগল না। ফেরি-ঘাটটা তখন ঐ বটতলা পৰ্য্যন্ত সরে এসেছিল ; ওখান থেকে অবিচার ○や〉 বাড়ীটা বেশ দেখা যায়। নৌকাটা ঘাটে বাধা ছিল— তারই ওপর গিয়ে বসে রইলুম। একলা চুপ করে বসে থাকলে আমাদের মত বুড়ে লোকদের আর ভাবনার অস্ত থাকে না। আকাশপাতাল কত কি ভাবছিলুম—আমার মত হতভাগার জীবনে কি ভাববার উপকরণের অভাব আছে? দূরে একটা কঙ্কালসার গাছ নিস্তব্ধ হয়ে फ्राप्लिग्न ছিল। আমারই মতন সে ঝড় বৃষ্টি তুষারের প্রচণ্ড আঘাতে ডাল-পালা-ফল-পাত-শূন্ত হয়ে, তার শুকনো বুকে অতীতের সবুজন্মতি নিয়ে, সবুজ বাগানের কলঙ্ক হয়ে মরণের জন্তে দাড়িয়ে আছে। পৃথিবীর একদিনের স্নেহের চারাটি আজ একটা মিথ্যা দুৰ্বহ ভার মাত্র –মনে হচ্ছিল কবে একটা দুরন্ত বাজ পড়ে এই নীরস কাঠটার চিহ্ন পৰ্য্যস্ত লোপ করে দেবে ? “এইরকম কত কি ভাবছিলাম। দূরে একটা গাছ বাধ ভেঙ্গে মড়মড় করে জলে পড়ে গেল। মনে হল, এমনি আর-একট, অকৰ্ম্মণ্য শুকনে গাছ বুঝি পৃথিবীর কাছে চিরবিদায় নিলে—ও তার কী হিংসনীয় শুভমুহূৰ্ত্ত ” আমি একজন যুবা। বোধ হয় সৌন্দর্য্যভরা এই পৃথিবীর সঙ্গে সুখময় নূতন পরিচয়ের দিনে বৈরাগোর করুণকাহিনী বড় একটা পছন্দসই হইবে না ভাবিয়া বৃদ্ধ একটু চুপ করিয়া রহিল। তার পর আবার বলিতে লাগিল। “আবার পরক্ষণেই একটা ভুবন্ত লোকের আর্তনাদ মানুষের কাছে শেষ সাহায্য ভিক্ষে করে নিস্তব্ধ হয়ে গেল । আমি ভাবলাম এই এক মাহেন্দ্র স্বযোগ—যদি কাউকে বঁাচাতে পারি তো ভালই, নয়ত সাহায্য করবার ছুতো করে যদি দামোদরের গর্ভে একটু জায়গা পাই তো মন্দ কি ? আমি নৌকার কাছি খুলে দিলাম। "যা দেখলাম তাতে ত চক্ষুস্থির! মাঝ-নদীতে একটা প্রকাও গাছ—তার গোড়াটা আর দু-একথানা ডালপালা জলের ওপর জেগে আছে, আর গোড়ার ওপর মোচার থোলাটির মতন একটা নৌকা উলটে পড়ে আছে— ” এরূপ একটা বিভীষিকাময় দৃশ্বের বর্ণনা করিতে হরিহরের মত বুদ্ধের যথেষ্ট শক্তিরই প্রয়োজন হইয়াছিল, তাই ভস্মসার-কলিকাশীর্ষ হকাটাতে ঘন ঘন দুটা টান দিয়া আবার বলিতে লাগিল—