পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/১৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○○br দীক্ষাগুরু চট্টগ্রামের সাহ বদরউদ্দিন বদরউল আ৷ ১৪৪০ খৃঃ দেহত্যাগ করেন। মুসলমান-রাজত্ব অবসানের সঙ্গে-সঙ্গে বঙ্গীয় মুসলমানের মধ্যে শিক্ষাহীনতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় ধৰ্ম্মের মূলশিক্ষাগুলি ক্রমশঃ অজানিত হইয়া পড়িয়াছে, এবং সেই পরিমাণে স্বধৰ্ম্মী পীর বা সাধুপুরুষগণের প্রতি অযথা ও অতিরিক্ত ভক্তি সমাজে প্রবেশ লাভ করিয়াছে। বঙ্গের শেষ মুসলমান শাসনকর্তাগণ শিয়ামতাবলম্বী থাকায় উত্তরবঙ্গে শিয়ামতের আচার অনুষ্ঠানও বিশেষভাবে বিস্তৃত হইয়া পড়িয়াছিল। রঙ্গপুর ফৌজদারীতে একটি "ইমামবাড়া" ও গোয়ালপাড়ার নিকট কৃষ্ণাই নদীর তীরে "পাঞ্জতন” স্থাপিত হইয়াছিল। স্বয়ং প্রেরিতপুরুষ, তাহার কন্যা, জামাতা ও দুইজন দৌহিত্র এই পাচ "ত্তন” (শরীর ) লইয়াই "পাঞ্জতন"। "পাঞ্জতন" বলিতে উপরোক্ত পাচ "ত্তনে'র কৃত্রিম সমাধি মনে করিতে হইবে। কোচবিহারের স্বাধীন রাজগণ পর্য্যস্ত শিয়ামতাতুযায়ী তাজিয় দেওয়াইতেন। এপর্য্যন্ত সে প্রথা বিলুপ্ত হয় নাই। সেই সময় "খোয়াজের ব্যাড়া" দেওয়ার একটি প্রথা উত্তরবঙ্গের মুসলমানসমাজে ধৰ্ম্মোৎসবে পরিণত হইয়াছিল। ভাদ্রমাসে মুর্শিদাবাদে এই উপলক্ষে বিশেষ ধুমধাম হইত। নৌকার আকারে বিবিধ কারুকার্য্য-সমন্বিত “ব্যাড়া” দীপালোকে সজ্জিত করিয়া জলে ভাসান হইত। ঢাকার নবাব মোকরম খী কর্তৃক এই প্রথা বঙ্গে প্রবর্তিত হয়। কেহ কেহ বলেন এই উৎসব চীনদেশ হইতে আমদানি । গোয়াজ পীরের (খাজে থেজের ) উদ্দেশ্যে “বাড়া” জলে ভাসান হইয়া থাকে। খোয়াজপীর বঙ্গে হিন্দুর জলদেবতা বরুণদেবের স্থলাভিষিক্ত হইয়া পড়িয়াছেন । এই পীরের প্রকৃত পরিচয় প্রায় অন্ধকারাচ্ছন্ন হইয়া রহিয়াছে। ইহার সময়-নির্দেশ লইয়া ঐতিহাসিক-সমাজে মতভেদের অভাব নাই। পারস্যের অন্তর্গত সিরাজনগরের অদূরে খাজে খেজেরের জন্মস্থান কথিত হইয়া থাকে । তাহাকে মুসার, মতান্তরে ইব্রাহিমের, সমসাময়িক বলা হয়। কেহ কেহ থাজেথেজেরকে সেকেন্দারের সমকালীন ব্যক্তি বলিয়াছেন। ইলিয়াশ ও খেজের অভিন্ন ব্যক্তি বলিয়াও মনে করা হইয়। থাকে। থেজেরের অমর বলিয়া থ্যাতি আছে। কথিত প্রবাসী—আষাঢ়, ১৩২১ SSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMM [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড -- --০৮:২০, ১৯ এপ্রিল ২০১৬ (ইউটিসি)SumitaBot (আলাপ)-- আছে ইনি মুহের ( নোয় ) বংশধর। প্রকৃতপক্ষে থাজে থেজের একজন ঈশ্বরপরায়ণ, পরোপকারী ও ভ্রমণশীল সাধুপুরুষ ছিলেন। কাবুলনগরের অদূরে একটি পাৰ্ব্বতীয় জলস্রোত র্তাহার নামে পরিচিত হইয়া থাকে। শঙ্কর জেলায় খেজেরের আস্তান ( আশ্রম ) ছিল। বৰ্দ্ধমানের নিকট সমাধিপ্রাপ্ত সাধু বাহরাম সাহের তিনি গুরু ছিলেন। । গৌহাটীর নিকট কামাখ্যা পাহাড়ের একটি ঝরণাকে “চশমে থাজে থেজের" বলে । মদিনাবাসী স্ববিখ্যাত সাধু বদিউদ্দিন মাদারের নাম উত্তরবঙ্গে স্থপরিচিত। মাদারের প্রবর্তিত মতের অমুসরণকারী একশ্রেণীর ফকির আছেন, তাহার। "মাদারী ফকির” নামে পরিচিত। অশিক্ষিত মাদারী ফকিরের মাদারের সম্বন্ধে ইসলাম-শাস্ত্র-বহির্ভূত মত পোষণ করিয়া থাকেন। উত্তরবঙ্গের অশিক্ষিত মুসলমানসমাজে মাদারের বঁাশ খাড় করার প্রথা ছিল, এখনও স্থানবিশেষে দৃষ্ট হয়। মাদার অত্যন্ত তেজস্ব, স্বাৰ্থত্যাগী ও ঈশ্বর পরায়ণ সাধু ছিলেন। তৈমুরলদের ভারত-আক্রমণকালে তিনি এদেশে আগমন করেন। জৌনপুরের মুলতান ইব্রাহিম শারকি মাদারের সমসাময়িক ছিলেন। উত্তরবঙ্গে মাদারের প্রতিপত্তি সামান্য ছিল না। ইঃ বিঃ রেলওয়ের জামালগঞ্জ ষ্টেসনের পশ্চিম পাহাড়পুরে ও বগুড়া সেরপুরে মাদারের দরগা আছে। গোরক্ষপুরের উত্তর একটি পৰ্ব্বতশৃঙ্গ মাদারের নামে পরিচিত হইয়া থাকে। কানপুরের নিকট মাকানপুরে তিনি সমাহিত হইয়াছেন। । ক্ষিপ্ত পশু দংশন করিলে পাগলাপীরের সন্তোষ বিধানার্থে তাহার নামে বঁাশ থাড় করার প্রথা উত্তরবঙ্গে বহুল পরিমাণে প্রচলিত ছিল, শিক্ষাবিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ: হাস পাইতেছে। এই পীরের অস্তিত্ব সম্বন্ধে অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করিয়! থাকেন। রঙ্গপুরের অন্তর্গত চিলমারীর নিকট পাগল নদীর তীরে প্রতি বৎসর চৈত্রমাসে পাগলাপীরের নামে একটি মেলা বসিয়া থাকে। রঙ্গিনবস্ত্র ও চামর দ্বারা সুসজ্জিত কতকগুলি বাশ লইয়া বাদ্যভাণ্ডসহ লোকের বাড়ী বাড়ী ঘুরিয়৷ বেড়ান বাশ খাড় করার অর্থ। সঙ্গে একজন "ভওরিয়া" থাকে, সে পাগলাপীরের নামে ভবিষ্যৎবাণী করে ও লোককে আশীৰ্ব্বাদ করিয়া থাকে। ৩য় সংখ্যা ] থাজ থেঞ্জের । প্রাচীন মুঘল চিত্র হইতে । বঙ্গীয় মুসলমানসমাজে অতিরিক্ত পীরভক্তি ব্যতীত কৃত্রিম দরগা ও পীরস্থান হষ্ট করার প্রবৃত্তি ও দেখা দিয়াছিল। পশ্চিমোত্তর সীমান্ত প্রদেশের অশিক্ষিত মুসলমানসমাজে এইরূপ পীর প্রীতি লক্ষিত হইয় থাকে । জলপাইগুড়ির অন্তর্গত পাট গ্রামে "কদম-রসুল" অর্থাৎ পয়গম্বরের পদচিহ্ন নামে একটি স্থান আছে। কিছুকাল পূৰ্ব্বে এই উত্তরবঙ্গের পীর-কাহিনী ৩৫৯


SumitaBot (আলাপ)

কদম-রসুলের প্রতি লোকের অসাধারণ ভক্তি ছিল। কদম-রস্থলের নিকট “মির্জার কোট" নামে একটি দুর্গের চিহ্ন আছে, ১৭শ শতাব্দীর শেষভাগে এইস্থানে মোগলপক্ষের সহিত কোচবিহার-রাজের যুদ্ধ হইগাছিল। কদম-রস্থলের ব্যয় নির্বাহার্থে কোচবিহার-রাজসরকার লাখেরাজ প্রদান করিয়াছেন। সম্ভবতঃ মুসলমানগণের মির্জার কোটে অবস্থানকালে উপরোক্ত পদচিহ্ন স্থাপিত হইয়াছিল। রঙ্গপুরের দক্ষিণ পীরগঞ্জের এলাকায় স্বপ্রসিদ্ধ পীর ইসমাইলগাজীর সমাধি প্রদর্শিত হইয়া থাকে। এই পীর কেবলই যে সাধুপুরুষ ছিলেন তাহা নহে, একজন ধৰ্ম্মযোদ্ধাও ছিলেন। ঘোড়াঘাট অঞ্চলে ইসলাম ধৰ্ম্ম প্রচার ও মুসলমান উপনিবেশ স্থাপনে তাহার বিশেষ চেষ্টা ছিল। গাজীর সমাধিমন্দিরের মতওল্লির নিকট প্রাপ্ত একখণ্ড হস্তলিখিত পুথির সাহায্যে মি: ড্যামন্ট অবধারণ করিতে চেষ্টা পাইয়াছেন যে, সম্ভবতঃ গাজী বারবাক সাহের রাজত্বকালে ১৪৬ খৃঃ কামতাপুরের সেন রাজাকে যুদ্ধে পরাজয় করিয়াছিলেন। বারবাক সাহের রাজত্বকালে ( ১৪৬০ খৃ: ) তদীয় সেনাপতি রহমত খী কর্তৃক কামতপুর আক্রান্ত হইবার বিবরণ প্রাপ্ত হওয়া যায়। বুকানন সাহেবের মতে ইসমাইলগাজী ১৬শ শতাব্দীর প্রারম্ভে ঘোড়াঘাটের শাসনকৰ্ত্ত ছিলেন এবং নসরত সাহ কাটদুয়ারের অধিবাসী নীলাম্বর নামক কোন স্থানীয় রাজার রাজ্য জয় করিয়াছিলেন । গাজীর প্রকৃত সমাধি কোথায় তাহার মীমাংসা হওয়া আবশ্যক। গৌড়ের ইতিহাসে প্রকাশ, ১৫১০ খৃঃ হোসেন সাহের উড়িষ্য আক্রমণের কালে ইসমাইলগাজী সেনাপতি ছিলেন ; সেইসময় কোন কাৱণে তাহার প্রতি সন্দেহ হওয়ায় হোসেন সাহের